"ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।"—শাসন সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
জমিদারি শােষণ ও অত্যাচারের চিত্র: লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় ছাতির বদলে হাতি রচনায় গারাে পাহাড়ের চাষিদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যে, ফসল কাটার পর প্রথমেই চাষিকে সেই ফসল জমিদারের খামারে তুলতে হত। ভূস্বামীর ধারদেনা মেটানাের পরই চাষিরা অবশিষ্ট ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে পারত। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান জমিদারকে দিয়ে চাষিকে ঋণশােধ করতে হত। এক টাকা ধারের জন্য সেই সময় ধার্য ছিল এক মন ধান। তার ওপর ছিল আবওয়াব অর্থাৎ অতিরিক্ত দেয় কর, আবার মূল করের চেয়ে আবওয়াবের পরিমাণ বেশি ছিল। তাই, কয়েক মাস ধরে যে চাষি তার বুকের রক্ত দিয়ে জমিতে ফসল ফলাত, শেষমেশ শূন্য হাতেই সে ঘরে ফিরতে বাধ্য হত।
সাধারণ প্রজাদের তুলনায় নানকার প্রজাদের অবস্থা ছিল আরও দুর্বিষহ। স্বত্বহীনভাবে যারা চাষজমি ভােগ করত অর্থাৎ জমিদার বা তালুকদারের যেসব ভৃত্য চাষ করত, তারাই ছিল নানকার প্রজা। জমির ফসল বা আম-কাঁঠালে তাদের কোনাে অধিকার ছিল না। জমি জরিপ করার পর তাদের প্রত্যেকের জন্য আড়াই টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ধার্য হত। সেই খাজনা দিতে না পারলে তহশিলদার নানকার প্রজাকে জমিদারের কাছারিতে নিয়ে গিয়ে পিছমােড়া করে বেঁধে মারধর করত এবং গুদামঘরে আটকে রাখত। তারপর নিলাম ডেকে সেই প্রজার সমস্ত সম্পত্তি দখল করতেন জমিদার।