কলকাতা থেকে মােনা ঠাকুররা তাড়াতাড়ি কেন ফিরে এসেছিল, তা 'কলের কলকাতা' রচনার অন্তর্গত মােনা ঠাকুরের ভাষ্য অবলম্বন করে লেখাে।
কলকাতা থেকে মােনা ঠাকুরের তাড়াতাড়ি ফিরে আসার কারণ: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের 'কলের কলকাতা' রচনায় আমরা দেখি যে লেখকের গ্রামের বাসিন্দা মােনা ঠাকুর কালীঘাটে পইতে নেওয়ার জন্য কলকাতায় গিয়ে সপরিবারে এক ধর্মশালায় উঠেছিল। মােনার কথা অনুযায়ী তাদের আসার উদ্দেশ্যপূরণের পর হঠাৎ একদিন তারা দেখে যে, শহরের বাড়িগুলির দরজা-জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িগুলি ধীরে ধীরে হানাবাড়িতে পরিণত হচ্ছে। রাস্তাঘাট শুনসান। শহরে মানুষজন আছে কি না তা বােঝাই যাচ্ছে না। অন্ধকার রাতে মাঝে মাঝেই প্রবল চিৎকার কানে ভেসে আসে—“...মুসলমানগুলাকে কাটব।...! হিন্দুগুলাকে কাটব।” প্রকাশ্য রাস্তায় শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা, প্রত্যেকের হাতেই লাঠি বা ছুরি। রক্তের স্রাোত বয়ে যায়। রাস্তায়, পথে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘরবাড়িতে শুরু হয় আগুন ধরানাে।
এই দাঙ্গা দেখে ধর্মশালায় থাকা যাত্রীরা স্বভাবতই অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রাণ নিয়ে যেভাবেই হােক পালাতে চায় তারা। কিন্তু তারা চলে গেলে পান্ডাদের উপার্জনের ব্যাঘাত ঘটবে বলে কালীঘাটের পান্ডারা তাদের অভয় দিয়ে জানায় যে, তারা থাকতে যাত্রীদের কোনাে ভয় নেই। কিন্তু প্রাণনাশের আশঙ্কাতেই ধর্মশালার যাত্রীরা কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। একারণেই রাতের অন্ধকারে মােনা ঠাকুররা নিঃশব্দে কলকাতা থেকে বিদায় নেয়।