গণতন্ত্রের শ্রেণীবিভাজনে ডেভিড হেল্ড

ডেভিড হেল্ড-গণতন্ত্রের শ্রেণীবিভাজন


ডেভিড হেল্ড হলেন গণতন্ত্র সম্পর্কিত আধুনিক কালের এক প্রাজ্ঞ গবেষক-বিশ্লেষক। নিজস্ব বিচার বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গণতন্ত্রের মৌলিক মডেলগুলির কথা বলেছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি গণতন্ত্রের মডেলগুলিকে সনাতন ও সমকালীন—এই দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন। গণতন্ত্রের সনাতন মডেল হিসাবে তিনি চার ধরনের গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। এগুলি হল: (ক) এথেন্সের ধ্রুপদি গণতন্ত্র, (খ) সংরক্ষণমূলক গণতন্ত্র, (গ) উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র এবং (ঘ) মার্কসীয় ধারার প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র। সংরক্ষণমূলক ও উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র হল উদারনীতিক গণতন্ত্রেরই দুটি ধারা। ডেভিড হেল্ড চার ধরনের সমকালীন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। এগুলি হল:

  • (১) অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র,
  • (২) প্রতিযোগিতামূলক এলিটবাদী গণতন্ত্র,
  • (৩) আইনমূলক গণতন্ত্র এবং
  • (৪) বহুত্ববাদী গণতন্ত্র।


গণতন্ত্রের বিভিন্ন মডেল সম্পর্কিত ডেভিড হেল্ডের শ্রেণিবিভাজনমূলক আলোচনাকে কতকগুলি পর্বে বিন্যস্ত করা যায়। গণতন্ত্র সম্পর্কিত প্রাচীন ধারণার বিকাশ সংক্রান্ত অধ্যায়টিকে প্রথম পর্ব হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। গণতন্ত্র বিষয়ক সনাতন ভাবনা-চিন্তা কমবেশী হাজার দুই বছরের সময়সীমার মধ্যে আবদ্ধ। পরবর্তী কালে ষোড়শ শতকের শেষের দিকে স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সংগ্রাম। এই সংগ্রামী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার বিকাশ ঘটতে থাকে। তারপর অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আরম্ভ করে ঊনবিংশ শতাব্দী ব্যাপী অধ্যায়টি হল গণতান্ত্রিক মডেলের পরবর্তী পর্ব। এই পর্বে গণতন্ত্রের এক নতুন ধারা পরিলক্ষিত হয়। গণতন্ত্রের এই ধারাটি হল উদারনীতিক এবং মার্কসীয় দার্শনিক ঐতিহ্যের ধারা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিয়ে বিতর্কের এক নতুন ধারার সূত্রপাত ঘটেছে। সাম্প্রতিক কালের প্রেক্ষাপটে এই ধারাটি বেগবান হয়েছে। বস্তুত হেল্ড উপস্থাপিত করেছেন গণতন্ত্র সম্পর্কিত এই স্বাতন্ত্র্যামূলক ধারণাকে। স্বাতন্ত্র্য্যমূলক গণতান্ত্রিক ভাবনায় যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে, তা আসলে নাগরিকের গণতন্ত্র। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তার অধিকারের পরিধি প্রসঙ্গে নাগরিক সতর্ক থাকে; অধিকারের ব্যাপারে নাগরিক অনুপ্রাণিত থাকে। স্বাতন্ত্র্য্যমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ডেভিড হেল্ড নাগরিক সমাজকে পুনর্গঠিত করার কথা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের কথা বলেছেন। স্বাতন্ত্র্য্যমূলক গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে সঙ্গে অ-রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াকর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আইনের অনুশাসনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।


(ক) এথেন্সের ধ্রুপদি গণতন্ত্র: এথেনীয় গণতন্ত্রের পরিধি বা ক্ষেত্র হল নগর-রাষ্ট্র (city-state)। ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্রই হল এই গণতন্ত্রের এলাকা। বিশিষ্ট আধুনিক রাজনীতিবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু হেউড তাঁর Politics শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বলেছেন: “The classical model of democracy is based on the polis, or city-state, of Ancient Greece, and particularly on the system of rule that developed in the largest and most powerful Greek city-state, Athens."


এখানে নাগরিকরা আইন বিভাগীয় ও বিচার বিভাগীয় কার্যাবলীতে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এথেন্সের গণতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হল 'নাগরিক সভা'। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করা হয়। যে, প্রত্যেক নাগরিকই শাসন করবে এবং শাসিত হবে পর্যায়ক্রমে। এথেন্সীয় গণতন্ত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে নাগরিকদের রাজনীতিক সাম্যের উপর। অ্যান্ড্রু হেউড মন্তব্য করেছেন: “Althenian democracy developed a very particular kind of direct popular rule, one that has only a very limited application in the modern world. Althenian democracy amounted to a form of government by mass meeting. All major decisions were made by the assembly, or Ecclesia, to which all citizens belonged. This met at least 40 times a year."


সমকালীন এথেন্সের নাগরিকদের রাজনীতিক ক্রিয়াকর্মের মান-মাত্রার উচ্চতা ও গভীরতা এথেন্সীয় গণতন্ত্রকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। নাগরিক সভার নিয়মিত মিটিং-এ নাগরিকরা অংশগ্রহণ করত এবং তা ছাড়াও নাগরিকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যোগ দিত ও সরকারী পদসমূহের দায়-দায়িত্ব পালনে সদা প্রস্তুত থাকত।


গ্রীক দার্শনিক প্লেটো এথেন্সীয় ধ্রুপদি গণতন্ত্রের বিরূপ সমালোচনা করেছেন। তিনি রাজনীতিক সাম্যের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুযায়ী আমজনতার মধ্যে সুদক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য আবশ্যক প্রজ্ঞা বা অভিজ্ঞতা থাকে না। এথেন্সীয় সনাতন গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে অ্যান্ড্রু হেউড বলেছেন: “On a practical level the principal drawback of Athenian democracy was that it could operate only by excluding the mass of the population from political activity. Participation was restricted to Athenian-born males who were over 20 years of age. Slaves (the majority of the population), women and foreigners had no political rights whatsoever."


এথেন্সীয় ক্লাসিক্যাল মডেলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক শাসন, আইনের দৃষ্টিতে সমানাধিকার, নাগরিকতা এবং স্বাধীন পৌর ও রাজনীতিক জীবনধারা পেরিক্লিসের প্রশংসা পেয়েছে। অ্যারিস্টটলের রচনায়ও এথেন্সীয় সাবেকি গণতন্ত্রের উল্লেখ আছে। তাঁর অভিমত অনুযায়ী এথেন্সীয় গণতন্ত্র র‍্যাডিক্যাল ধরনের।


(খ) সংরক্ষণমূলক গণতন্ত্র: সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন সংরক্ষণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। জনসাধারণের হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বৈধ শাসকই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হন। এখানে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রকৃতিগত বিচারে নৈর্ব্যক্তিক এবং আইনগত ভাবে সীমাবদ্ধ। সংরক্ষণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের দায়িত্বশীলতার ব্যবস্থা আছে। সরকারের দায়বদ্ধতা কার্যকর হয় বিবিধ উপায় পদ্ধতির মাধ্যমে। এই উপায়-পদ্ধতিগুলি হল: গোপন ভোট ব্যবস্থা; নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত নির্বাচন ব্যবস্থা; বিভিন্ন রাজনীতিক দল, উপদল ও রাজনীতিক নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কের অস্তিত্ব প্রভৃতি। সংরক্ষণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমর্থক হিসাবে কিছু রাষ্ট্র দার্শনিকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন জন লক, মন্টেস্কু, বেহাম প্রমুখ।


(গ) উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র: উন্নয়নমূলক গণতন্ত্রের কতকগুলি বৈশিষ্ট্যসূচক বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিষয়গুলি হল: প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র; প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের নীতি; জনসাধারণের সার্বভৌমিকতার ধারণা; জনগণের কার্যকলাপের স্বাধীনতা; জনগণের স্বাধীনতায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সীমাবদ্ধতা; বাজার অর্থনীতি; বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতি প্রভৃতি। উন্নয়নমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক বিষয়াদিতে নাগরিকদের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়। এই কারণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও বিশেষভাবে উদ্যোগী নাগরিকের কথা বলা হয়। এ রকম নাগরিক গড়ে তোলার ব্যাপারে রাষ্ট্রের ভূমিকাই হবে মুখ্য।


উন্নয়নমূলক গণতন্ত্রের মুখ্য প্রবক্তা হিসাবে একজন রাষ্ট্রদার্শনিকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল।


(ঘ) মার্কসীয় ধারার প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের এই মডেলটির মূল মার্কসীয় দর্শনের মধ্যেই নিহিত আছে। মার্কসবাদী বক্তব্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রের এই মডেলের কথা বলা হয়েছে। এই মডেলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতি, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার, শ্রেণীর অস্তিত্ব, শ্রেণী শোষণ, অভাব প্রভৃতির অবলুপ্তির কথা বলা হয়েছে। মার্কসীয় প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর্থনীতিক এবং রাজনীতিক সাম্যের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। পীড়নমূলক যাবতীয় ব্যবস্থার জায়গায় মানুষজনের নিজেদের পরামর্শদাতা দ্য ভূমিকার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সরকারী ব্যবস্থা ও রাজনীতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে বলা হয় স্ব-পরিচালন ব্যবস্থার কথা। মার্কসীয় প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক মডেল অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীন বিকাশের মধ্যেই নিহিত আছে সকল ব্যক্তির স্বাধীন বিকাশ।


  • অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র: অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক মডেল অনুযায়ী সমাজের কতকগুলি প্রধান প্রতিষ্ঠান বর্তমান। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আবশ্যক। উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য হল: স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ। এ ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসূচক বিষয় হল: নারীজাতির অধিকার ও অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতকরণ; আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব হ্রাস; রাজনীতিক দলব্যবস্থার পুনর্গঠন; রাজনীতিক দল ও দলের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ববোধের উন্মেষ; সংবাদ ও তথ্যাদির স্বাধীনভাবে প্রকাশনার ব্যবস্থা; জনসাধারণের স্বার্থে ভূমিকা পালন; হত-দরিদ্র মানুষজনের স্বার্থ সংরক্ষণ প্রভৃতি। বলা হয় যে, সরকারি কার্যাবলীতে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকদের সরকারি কাজে আগ্রহ, আন্তরিকতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। এই কারণে এ ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের সরকারী কাজে সরাসরি অংশগ্রহণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।


মূলত বামপন্থী উদারনীতিবাদী চিন্তাবিদরাই অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে পরিচিত। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: ম্যাকফারসন, পেটেম্যান, পোউল্যান্টজাস প্রমুখ।


  • প্রতিযোগিতামূলক এলিটবাদী গণতন্ত্র: সাম্প্রতিক কালের সমাজ হল শিল্প-সমাজ। আধুনিক কালের এই শিল্প সমাজই হল প্রতিযোগিতামূলক এলিটবাদী গণতন্ত্রের ক্ষেত্র। এ ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল: সংসদীয় গণতন্ত্র, সুদৃঢ় শাসন বিভাগ, কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব প্রভৃতি। এখানে নেতৃত্বের আধিক্য অস্বীকৃত। নেতৃত্বে থাকেন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি দক্ষ, উদ্যোগী ও অনুপ্রাণিত।


আধুনিককালের এই প্রতিযোগিতামূলক এলিটবাদী গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসাবে পরিচিত স্যুমপিটার, ম্যাক্স ওয়েবার প্রমুখ।


  • আইনমূলক গণতন্ত্র: আইনমূলক গণতন্ত্রেরও কতকগুলি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল: আইনের অনুশাসন, উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতি, শাসনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ব্যক্তিমানুষের ও সমষ্টির কাজকর্মের স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতায় রাষ্ট্রের ন্যূনতম হস্তক্ষেপ প্রভৃতি। এখানে আইনের অনুশাসনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। বলা হয় যে, আইনের অনুশাসনের ভিত্তিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন কায়েম হবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে নাগরিকদের রাজনীতিক ও আর্থিক স্বাধীনতা। এ ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থার কতকগুলি বিশেষ পূর্বশর্তের কথা বলা হয়। এই পূর্ব শর্তগুলি হল: উদারনীতিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শক্তিশালী রাজনীতিক নেতৃত্বের ব্যবস্থা; সমষ্টিবাদী ব্যবস্থার প্রতিকূলতাকে প্রতিহত করে নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ; আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিকূলতাসমূহ প্রতিহত করা প্রভৃতি।


দক্ষিণপন্থী উদারনীতিবাদী বা নয়া উদারনীতিবাদী রাষ্ট্রদার্শনিকরাই আইনমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বা মডেলের প্রবক্তা হিসাবে পরিচিত। এই শ্রেণীর চিন্তাবিদদের মধ্যে দুটি নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এঁরা হলেন হায়েক ও নজিক।


  • বহুত্ববাদী গণতন্ত্র: বহুত্ববাদী গণতন্ত্র হল উদারনীতিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রকমফের। এ ধরনের গণতান্ত্রিক মডেলে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থার বিবিধ বৈশিষ্ট্য বর্তমান দেখা যায়। বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল : নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বহু ও বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর অস্তিত্ব এবং স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের প্রভাব-প্রতিপত্তি; নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি অনুসরণ; সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসমূহের স্বাধীনতার স্বীকৃতি; শাসনকার্যে সংখ্যালঘুর অংশগ্রহণ প্রভৃতি। বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের সমর্থক রাজনীতিক চিন্তাবিদদের মধ্যে কতকগুলি নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন রবার্ট ডাল, ম্যাডিসন প্রমুখ।


গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিভিন্ন মডেল সম্পর্কিত উপরিউক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ডেভিড হেল্ড গণতন্ত্রের ধারণাকে তিনটি প্রধান বর্গে বিভক্ত করেছেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহের এই তিনটি বড় বর্গ হল : সংরক্ষণমূলক গণতন্ত্র, উন্নয়নমূলক গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের প্রথম দুটি মডেল হল সনাতন বা চিরায়ত মডেল এবং তৃতীয় মডেলটি হল সমকালীন মডেল। গণতন্ত্রের এই তিনটি বর্গকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আবশ্যক।