"কলকাতার ইটের পাঁজরে লুকিয়ে আছে ভালােবাসার ঝরনা।”—কলের কলকাতা’ অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
কলকাতার সহমর্মিতা: 'কলের কলকাতা' রচনায় প্রথম দর্শনে শহর কলকাতার ঘিঞ্জি পরিবেশ, সংকীর্ণ পরিসর, যান্ত্রিকতা লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ভালাে লাগেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে নীরস শানবাঁধানাে কলকাতাকে তিনি ভালােবেসে ফেলেন। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তার দু পাশে জীবনের বিচিত্র উদ্যাপন তাঁর ভালােলাগা এবং পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে ওঠে। সন্ন্যাসিনী বুড়ি থেকে ম্যাজিশিয়ান বা দাড়িওয়ালা হেকিম, সার্কাস আর কার্নিভাল উপভােগের বিচিত্র আয়ােজন তার চোখে পড়ে। আবার এই শহরকেই তিনি প্রতিবাদে গর্জে উঠতে দেখেন। কিশাের বয়সে একাত্ম হয়ে যান সে আন্দোলনের সঙ্গে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিনে আনেন খন্দরের টুপি। কংগ্রেস অফিসের সামনে তা পরে পৌঁছে যান। মেছােবাজার কার্জন পার্ক ধর্মতলা গােটা কলকাতা জুড়ে স্বাধীনতার দাবিতে ক্ষেপে ওঠা কলকাতার অগ্নিস্রাবী রূপ লেখক প্রত্যক্ষ করেন। মানুষের সংহতি ও একতা তাঁকে মুগ্ধ করে। বালক থেকে ধুতি-পাঞ্জাবী পরা ভদ্রলােক—আত্মদানের এই আকুলতা ছুঁয়ে যায় লেখককে। রাজাবাজারের বস্তির শহীদ কদম রসুলের জন্য গরীব সহনাগরিকদের আবেগ, তার পরিবারের পাশে থাকা ইত্যাদি সহমর্মিতার অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে। দেশ স্বাধীন হয়, উদ্বাস্তু মানুষে ভরে যায় শহর। তৈরি হয় জীবনযুদ্ধের নয়া অধ্যায়। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে জেগে থাকে ঝরনার মতাে অন্তলীন ভালােবাসা, যা কলকাতার নিজস্ব—“যতদিন মানুষ আছে এই শহরে, ততদিন অফুরন্ত এই ভালােবাসার ঝরনা।”