"গাড়ি এসে থামে রাজাভাতখাওয়ায়।”—শিলিগুড়ি থেকে লেখকের রাজাভাতখাওয়ায় আসার যাত্রাপথের বর্ণনা দাও। সেখানে নেমে লেখকের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
যাত্রাপথের বর্ণনা: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের 'মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, উত্তরবঙ্গের বক্সা যাওয়ার জন্য লেখক মণিহারি ঘাট থেকে ট্রেনে চেপে রাজাভাতখাওয়া স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি দেখতে পান মাঠ দিয়ে ঘেরা ছােট্ট শহর শিলিগুড়ি, চারপাশে পাহাড়তলির অরণ্য, তরাই অঞ্চল এবং গভীর জঙ্গল। সেই জঙ্গলের মাথায় ঢেউয়ের মতাে চলে গেছে একটার পর একটা পাহাড়। শিলিগুড়ি অতিক্রম করে ট্রেনটি সামনের দিকে বাঁক নেওয়ার কিছুটা পরেই লেখকের চোখে পড়ে কাজ চালানাে গােছের লম্বা একটি রেলসেতু। এই ব্রিজের নীচ দিয়ে খরস্রোতা তিস্তাকে বয়ে যেতে দেখলেন লেখক। এইভাবে যেতে যেতে একটা ছােট্ট স্টেশনে ট্রেন থামলে চারপাশের গাছপালার মধ্যে দিয়ে উকি মারা আকাশে সােনার টায়রার মতাে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঝলমল করে ওঠে। এর কিছু পরেই ট্রেনটি এসে পৌঁছােয় রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে।
লেখকের অভিজ্ঞতা : রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে নেমে স্টেশনের ছােট্টো একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় চা-বিক্রেতার কাছ থেকে লেখক জানতে পারেন যে, লােকটির বাড়ি যশোর জেলার এক গ্রামে। স্বাধীনতা এবং দেশভাগের পর গৃহহীন অবস্থায় ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে এই রাজাভাতখাওয়া অঞ্চলে আশ্রয় নেয় সে। চাওয়ালা জানায়, সেই অঞ্চলের মানুষের জীবন নির্ভর করে থাকে রেল, চা আর কাঠের চালানি কারবারের ওপর। তাদের জীবনে খেলা বা সিনেমার কোনাে সুযােগ নেই। মাঝে মাঝে শখের থিয়েটারে অভিনয় করাই সেখানকার মানুষদের বিনােদনের একমাত্র উপায়।