'বিভাব' নাটকটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্রে বলা আছে যে, কাব্যে বা নাটকে রতি ইত্যাদি নয় প্রকার ভাবের উদ্ভবের কারণকেই 'বিভাব' বলা হয়। শম্ভু মিত্রের বক্তব্য অনুযায়ী এই নাটকের লক্ষ্য ছিল হাসির ভাব জাগিয়ে তােলা। নাট্যদলের সম্পাদকের নির্দেশ, জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে একটি হাসির নাটকের উপস্থাপনা করতে হবে বলে ঠিক করা হয়। শিল্পসৌন্দর্যকে অতিক্রম করে এখানে 'বক্স অফিস'-এ ভালাে সাড়া পাওয়াই হয়ে ওঠে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। তাই হাসির দৃশ্য তৈরির জন্য নানা প্রয়াস নেওয়া হয়। মূলত তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় হাস্যরস সৃষ্টিতে ‘লভ সিন’, ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’ তৈরি করা হয়। কিন্তু নাট্যকার তথা অভিনেতা শম্ভু মিত্র, সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলিরা সিদ্ধান্তে পৌঁছােন যে, এইভাবে দর্শককে হাসানাে সম্ভব নয়। শেষপর্যন্ত হাসির খােরাক খুঁজতে চার দেয়ালের বাইরে বেরিয়ে আসেন তারা। তখনই খাদ্য বস্ত্রের দাবি জানিয়ে একটি মিছিল আসে। পুলিশের আপত্তি সত্ত্বেও মিছিল এগােলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। মিছিল থেকে হাহাকার-গােঙানির আওয়াজ ভেসে আসে। পুলিশ চলে গেলে শম্ভু মিত্র, অমর গাঙ্গুলির কাছে জানতে চান এবার তার হাসি পাচ্ছে কি না। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, "এবার নিশ্চয়ই লােকের খুব হাসি পাবে?" এই একটা ব্যঙ্গমূলক মন্তব্যই বুঝিয়ে দেয় সভ্যতার কুশ্রী চরিত্রকে। মানুষ নির্মম ঘটনার মধ্যেও বিনােদন খোঁজে, জীবনের কঠিন স্বরূপকে এড়িয়ে চলতে চায়। তখনই হাসির 'বিভাব' হয় মানুষের রক্তক্ষরণ, আর্ত চিৎকার। এই তাৎপর্যেই নাটকের নামকরণ 'বিভাব' সার্থক হয়ে উঠেছে.