রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা কাকে বলে? রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।

রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা

রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ, আইন বিভাগের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম। এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত হওয়ার ফলে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজকর্ম পরিচালনা করার সুযােগ পায়। রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থার যথার্থ উদাহরণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ফিলিপিনস ইত্যাদি দেশে এই শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান।


রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ বা প্রকৃতি


[1] ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ: রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ। বস্তুত ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়ােগের কারণেই রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হওয়ায় এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ যেমন আইন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তেমনই আইন বিভাগও শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। রাষ্ট্রপতি বা তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যরা কেউই আইনসভার অধিবেশনে হাজির থাকতে বা আইন প্রণয়নে অংশ নিতে পারেন না। অন্যদিকে, আইন বিভাগও তেমনই রাষ্ট্রপতি বা তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।


[2] রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসকপ্রধান: রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন সমগ্র রাষ্ট্রের প্রধান এবং একইসঙ্গে তিনি শাসন বিভাগেরও প্রধান অধ্যাপক অ্যালান বলের বক্তব্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের সাধারণ ও রাজনৈতিক প্রধান (The President is both nominal and political head of the State)। তত্ত্বগতভাবে ও বাস্তবে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। তাই রাষ্ট্রপতিকে প্রকৃত শাসকপ্রধান বলা হয়।


[3] জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা: রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। তিনি আইনসভার দ্বারা মনােনীত বা নির্বাচিত হন না। এই কারণে রাষ্ট্রপতি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন, আইনসভার কাছে নয়।


[4] ক্ষমতাহীন মন্ত্রীসভা: রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা কার্যত ক্ষমতাহীন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার সদস্যদের মনােনয়ন ও নিয়ােগ করেন। মন্ত্রীসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতির সহকর্মী নন, তাঁরা রাষ্ট্রপতির অধস্তন কর্মচারী মাত্র। রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভর করে। মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলােচনা বা পরামর্শ করলেও সিদ্ধান্তগ্রহণের বিষয়ে তিনি একক ক্ষমতার অধিকারী।


[5] দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সম্পর্কহীন: আইনসভায় দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কোনো সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রপতি যে রাজনৈতিক দলের সদস্য, সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আইনসভায় থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ও আইনসভার নির্বাচন আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা বহুবার দেখা গেছে, রাষ্ট্রপতি যে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন সেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মার্কিন কংগ্রেসে (কেন্দ্রীয় আইনসভা) নেই।


[6] রাষ্ট্রপতি-নিরপেক্ষ আইনসভা: রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি-নিরপেক্ষ আইনসভার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আইনসভার নির্বাচনের জন্য নির্দেশ দেওয়া অথবা আইনসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন ঘােষণা করা ইত্যাদি ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কোনাে ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় আইনসভা আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সার্বিক ক্ষমতা ভােগ করে থাকে।


[7] নির্বাচিত শাসক প্রধান: রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগের প্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। উত্তরাধিকারসূত্রে বা অন্য কোনােভাবে তিনি পদে আসীন হন না।


[8] রাষ্ট্রপতির কার্যকালের‌ স্থায়িত্ব: রাষ্ট্রপতি-শাসিত‌ শাসনব্যবস্থায় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির কার্যকাল সংবিধান কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি চার বছরের কার্যকালে নির্বাচিত হন। নির্দিষ্ট এই কার্যকালের আগে রাষ্ট্রপতিকে সহজে পদচ্যুত করা যায় না। একমাত্র রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সংবিধানভঙ্গ, অসদাচরণ বা দুর্নীতি ইত্যাদির মতাে গুরুতর অভিযােগ প্রমাণিত হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা যায়।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলােচনা করাে | তুমি কি মনে কর যে ভারতের সংবিধান গঠনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয়, কিন্তু কার্যত এক-কেন্দ্রিক?


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


কে সি হােয়ার কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন? সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখাে।


কটি পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে? ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি কী?


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পর্যালোচনা করাে।


যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্র সমবায়ের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখাে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক বিষয়ে কেন্দ্রের প্রাধান্য ব্যাখ্যা করাে।


কেন সংবিধানে ভারতকে 'যুক্তরাষ্ট্র' না বলে 'রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে? ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের গতিপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।