ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পর্যালোচনা করাে।

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে অইিনগত ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য 

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্যের বিভিন্ন দিকের মধ্যে যেগুলি বিশেষ উল্লেখযােগ্য, সেগুলি হল一


[1] ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য: ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যাপারে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। কেন্দ্রীয়-তালিকা, রাজ্য-তালিকা এবং যুগ্ম-তালিকা—ক্ষমতা বণ্টনের এই তিনটি তালিকার বাইরে অবশিষ্ট ক্ষমতাগুলি এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম-তালিকাভুক্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাজ্যের কোনাে আইন কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হলে, রাজ্য আইনের অসংগতিপূর্ণ অংশ বাতিল বলে বিবেচিত হবে। সংবিধানের এই সংস্থান কেন্দ্রীয় আইনের প্রাধান্যকে বজায় রেখেছে। আবার ক্ষমতা বণ্টনের তিনটি তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কেন্দ্রের হাতে প্রচুর সংখ্যক বিষয়ে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে রাজ্য-তালিকা ও যুগ্ম- তালিকায় যথাক্রমে ৬১টি বিষয় এবং ৫২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় তালিকায় ৯৯টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় বিষয় স্থান পেয়েছে। এই ব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে কেন্দ্রীয় প্রাধান্যের ইঙ্গিত দেয়।


[2] রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়েও কেন্দ্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা: রাজ্য-তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারে রাজ্যগুলির ক্ষমতা স্বীকৃত হলেও, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সংসদের রাজ্য- তালিকাভুক্ত বিষয়েও আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রয়েছে।


[3] সাংবিধানিক অচলাবস্থায় রাজ্যের আইনসভার ক্ষমতা হস্তান্তর: রাষ্ট্রপতি কোনাে রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা ঘােষণা করে সেই রাজ্যের আইনসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে দিতে পারেন [৩৫৬ নং ধারা]।


[4] রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ: অনেক সময় রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য আইনসভার আইন প্রণয়ন ক্ষমতায় কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে থাকে। রাজ্যপাল মনে করলে রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনাে বিলকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য আটকে রাখতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিলটির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সম্মতি বা অসম্মতি জানাতে পারেন [২০০ নং এবং ২০১ নং ধারা]। এ ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশে কোনাে রাজ্যের রাজ্যপাল বিলে স্বাক্ষর দিতে অসম্মতি জানিয়ে বা পুনর্বিবেচনার জন্য সেটিকে আইনসভার কাছে ফেরত পাঠিয়ে রাজ্য আইনসভার কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিশেষ বিষয়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল一


[1] ২৫৬ নং ধারা: সংবিধানের ২৫৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে কেন্দ্রের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন পরিচালনা করতে হয়। প্রয়ােজন হলে কেন্দ্র প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যকে নির্দেশ দিতে পারে। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।


[2] ২৫৭ (১) নং ধারা: সংবিধানের ২৫৭(১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাজ্যগুলিকে এমনভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়ােগ করতে হবে যাতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা না ব্যাহত হয়। এক্ষেত্রে প্রয়ােজন হলে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিতে পারে।


[3] ২৫৭ (২) ও (৩) নং ধারা: জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য বা সামরিক কারণে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে যােগাযােগ ব্যবস্থা ও রাজ্যের অন্তর্গত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিতে পারে বলে সংবিধানের ২৫৭ (২) ও (৩) নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।


[4] ২৫৮ (১) নং ধারা: সংবিধানের ২৫৮(১) নং ধারা অনুযায়ী, রাজ্যের সম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি শর্তসাপেক্ষে বা শর্তহীনভাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ওপর বিশেষ কাজের দায়িত্ব দিতে পারেন।


[5] ২৬২ নং ধারা: আন্তঃরাজ্য নদী এবং নদী উপত্যকাগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিরােধ বাধলে, কেন্দ্রীয় আইনসভা আইন প্রণয়ন করে তার নিষ্পত্তি করতে পারবে [২৬২ নং ধারা]। এক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট বা অন্যান্য আদালতের ক্ষমতাকে সীমিত রাখার অধিকার সংসদের থাকবে।


[6] ২৬৩ নং ধারা: সংবিধানের ২৬৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সহযােগিতার জন্য রাষ্ট্রপতি প্রয়ােজন মনে করলে আন্তঃরাজ্য পরিষদ নিযুক্ত করতে পারেন।


[7] ৩১২ নং ধারা: সংবিধানের ৩১২ নং ধারা অনুসারে সমগ্র দেশের জন্য পদস্থ প্রশাসনিক কর্মচারী (IAS) এবং পদস্থ পুলিশ কর্মচারী (IPS) নিয়ােগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে যে রাজ্যে এই কেন্দ্রীয় কর্মীরা কাজ করেন সেই রাজ্য সরকার এদের বেতন ও ভাতা দিয়ে থাকেন। কিন্তু চাকরির শর্ত নির্ধারণের বা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনাে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষমতা রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়নি।


[8] রাজ্যপালদের কেন্দ্রের প্রতি আনুগত্য: রাজ্যগুলির প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালকে নিয়ােগ করেন রাষ্ট্রপতি। বস্তুতপক্ষে, রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা রাজ্যপালের নিয়ােগ ও অপসারণের ব্যাপারে ক্ষমতা প্রয়ােগ করে। এজন্য রাজ্যপালরা কেন্দ্রের প্রতি অনুগত থাকেন।


[9] ৩৫৬ নং ধারা: সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে, কোনাে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে না চললে, রাষ্ট্রপতি শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা' জারি করে সেই রাজ্যের শাসনভার সরাসরি নিজের হাতে নিতে পারেন অথবা রাজ্যপাল বা অন্য কোনাে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতে প্রদান করতে পারেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি সারা দেশে বা দেশের কোনাে অংশে জরুরি অবস্থা জারি করলে রাজ্যের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। [৩৫২ নং ধারা]।


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বােঝ? যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার গুণ-দোষ বা সুবিধা-অসুবিধাগুলি আলােচনা করাে।


এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করাে।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলােচনা করাে | তুমি কি মনে কর যে ভারতের সংবিধান গঠনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয়, কিন্তু কার্যত এক-কেন্দ্রিক?


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


কে সি হােয়ার কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন? সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখাে।


কটি পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে? ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি কী?