কেন সংবিধানে ভারতকে 'যুক্তরাষ্ট্র' না বলে 'রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে? ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের গতিপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন হিসেবে বর্ণিত ভারত

সংবিধানের ১নং ধারায় ভারতকে 'রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন বলা হয়েছে। কারণ- [1] বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র তৈরি হয়নি এবং [2] অঙ্গরাজ্যগুলির ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার নেই। এটা বােঝানাের জন্য সংবিধানে ভারতকে রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন বলা হয়েছে।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূলভিত্তিস্বরূপ কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের বিষয়টি এক জায়গায় থেমে থাকেনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে এর রূপবদল ঘটেছে। স্বাধীনতার পরে সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ার পর দু-দশকব্যাপী কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলিতে কংগ্রেস দলের প্রাধান্য বজায় থাকায়, এক আধিপত্যকারী যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পত্তন ঘটে। অধ্যাপক কে ভি রাও একে 'Centralised Federalism' আখ্যা দেন।


১৯৬৭ সালে লােকসভার চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের পর কেন্দ্রে কংগ্রেস দলের আসনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু রাজ্যে অ-কংগ্রেসি সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। ১৯৬৯ সালে কেরল ও পশ্চিমবঙ্গের যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকারের নেতৃত্বে রাজ্যের অধিকতর ক্ষমতার দাবিতে কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। পরে ১৯৭৭ সালের মার্চে কেন্দ্রে সর্বপ্রথম অ-কংগ্রেসি জনতা সরকার ক্ষমতাসীন হলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে সহযােগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।


১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার ও বিভিন্ন রাজ্যের অ-কংগ্রেসি সরকারগুলি রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা ও অঙ্গরাজ্যের স্বাতন্ত্রের দাবিতে আরও সােচ্চার হয়। ১৯৮৩ সালে কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পর্যালােচনা করে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সারকারিয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট এক কমিশন গঠন করে। ১৯৮৭ সালে সারকারিয়া কমিশন তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে। সারকারিয়া কমিশনের সুপারিশ ভারতে ‘সহযােগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিকে শক্তিশালী করে।


প্রসঙ্গত বলা যায়, সারকারিয়া কমিশনের সুপারিশগুলি মেনে নিয়ে সহযােগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া আজও সম্পূর্ণ হয়নি। তবে ইতিমধ্যে কেন্দ্রে প্রভুত্বকারী দলব্যবস্থার অবসান ঘটায় এবং জোটসরকার গঠনের যুগ শুরু হওয়ার ফলে আঞ্চলিক, দলগুলি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে উঠে এসেছে। এর ফলশ্রুতিস্বরূপ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের বিষয়টির প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়েছে। পরিবর্তিত অবস্থায় কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের বিষয়টিকে খতিয়ে দেখতে সারকারিয়া কমিশনের ধাঁচে নতুন একটি কমিশন গঠনের কথা ২০০৫ সালে UPA সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এ কথা বলা যায় যে, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এক নতুন খাতে প্রবাহিত হয়েছে।


এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করাে।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলােচনা করাে | তুমি কি মনে কর যে ভারতের সংবিধান গঠনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয়, কিন্তু কার্যত এক-কেন্দ্রিক?


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


কে সি হােয়ার কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন? সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি লেখাে।


কটি পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে? ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি কী?


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পর্যালোচনা করাে।


যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্র সমবায়ের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখাে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক বিষয়ে কেন্দ্রের প্রাধান্য ব্যাখ্যা করাে।