ভারতের সংবিধান সুপরিবর্তনীয়তা ও দুস্পরিবর্তনীয়তার মিশ্রণ-ব্যাখ্যা করাে। ভারতীয় সংবিধান কোন্ তারিখে গৃহীত হয় এবং কার্যকরী হয়?

ভারতের সংবিধান পরিবর্তনীয়তা ও দুম্পরিবর্তনীয়তার মিশ্রন


সংশােধন পদ্ধতির নিরিখেই কোনাে দেশের সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় অথবা দুষ্পরিবর্তনীয় আখ্যা দেওয়া হয়। যে সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতি অনুযায়ী সহজে পরিবর্তন করা যায়, তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। আর যে সংবিধান পরিবর্তন করতে কোনাে বিশেষ ও জটিল পদ্ধতির প্রয়ােজন হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। ভারতের সংবিধানে সুপরিবর্তনীয়তা ও দুম্পরিবর্তনীয়তার যে মিশ্রণ ঘটেছে, তা সংবিধান সংশােধন পদ্ধতি পর্যালােচনা করলেই বােঝা যায়।


সংবিধান সংশােধনের পদ্ধতি

ভারতীয় সংবিধান সংশােধনের ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলি হল সরল পদ্ধতি, আংশিক জটিল পদ্ধতি এবং জটিল পদ্ধতি।


[1] সরল পদ্ধতি: সংবিধানের অন্তর্গত কয়েকটি বিষয়কে অত্যন্ত সরল পদ্ধতিতে পরিবর্তন বা সংশােধন করা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে সংবিধান সংশােধিত হয়।নতুন রাজ্যের সৃষ্টি বা পুরােনাে রাজ্যের সীমানা বা নাম পরিবর্তন, বিধান পরিষদ সৃষ্টি বা বিলােপ, সুপ্রিমকোর্টের কার্যাবলির এলাকা সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয় এই পদ্ধতিতে সংশােধন করা হয়।


[2] আংশিক জটিল পদ্ধতি: এই পদ্ধতি অনুযায়ী, সংবিধানের কিছু নির্দিষ্ট অংশের সংশােধনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের মােট সদস্যের অর্ধেকের বেশি এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনের প্রয়ােজন হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সংবিধানের তৃতীয় ও চতুর্থ পরিচ্ছেদে আলােচিত যথাক্রমে মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়।


[3] জটিল পদ্ধতি: এই পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রথমে সংশােধনী‌ প্রস্তাবটিকে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মােট সদস্যদের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। এরপর প্রস্তাবটিকে রাজ্য আইনসভাগুলির অনুমােদনের জন্য পাঠানাে হয়। এক্ষেত্রে অন্তত অর্ধেক রাজ্য আইনসভার অনুমােদন আবশ্যক। যে সমস্ত বিষয় এই পদ্ধতিতে সংশােধিত হয় তার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা বণ্টন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার পরিধি প্রভৃতি।


উপসংহার: ভারতের সংবিধান সংশােধনের উপযুক্ত তিনটি পদ্ধতি পর্যালােচনা করলে এটা দেখা যায় যে, ভারতের সংবিধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মতাে অতিমাত্রায় দুষ্পরিবর্তনীয় বা ব্রিটেনের মতাে সুপরিবর্তনীয়, কোনােটাই নয়। ভারতীয় সংবিধানের ধারাগুলির মধ্যে সুপরিবর্তনীয়তা ও দুম্পরিবর্তনীয়তার এক সমন্বয় ঘটেছে। কে সি হােয়ারের ভাষায়, “The constitution of India strikes a good balance".


ভারতীয় সংবিধান গৃহীত ও কর্যকরী হওয়ার তারিখ


ভারতীয় সংবিধান ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকরী হয়।


সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।


ভারতের সংবিধান প্রণয়নের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা বিশ্লেষণ করে।


ভারতীয় সংবিধানের দর্শন যেভাবে প্রস্তাবনায় প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।


ভারতীয় সংবিধানের মুখবন্ধ বা প্রস্তাবনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।


ভারতীয় সংবিধানের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে | ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


গণপরিষদ কাকে বলে? গণপরিষদের গঠন ও উদ্দেশ্য আলোচনা করাে। ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা আলােচনা করাে।


সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকার সীমাবদ্ধতা আলোচনা করাে। খসড়া কমিটির কয়েকজন সদস্যের নাম লেখাে।