সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।

সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান হল সেই সংবিধান, যে সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংশােধন করা যায়। কিন্তু যে সংবিধানকে সংশােধন করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনের প্রয়ােজন হয়, সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংশােধন করা যায় না, সেই সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি লক্ষ করা যায়—


সুপরিবর্তনীয় সংবিধান


  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংশােধন করা যায়।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে সাধারণ আইনের তুলনায় সাংবিধানিক আইনের বিশেষ কোনাে মর্যাদা থাকে না।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে রচিত না হয়ে প্রথা, রীতিনীতি, আইনসভা প্রণীত আইন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত দুইই হতে পারে। যেমনব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত এবং নিউজিল্যান্ডের সংবিধান লিখিত।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানে আইনসভার সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে ইচ্ছামতাে সংশােধনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ নাগরিক অধিকারের ওপর সহজেই হস্তক্ষেপ করতে পারে।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান অলিখিত বলে অস্পষ্ট হয়।

  • সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সহজেই তাল মিলিয়ে চলতে পারে।


দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান


  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসেরপদ্ধতিতে সংশােধন করা যায় না। এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংশােধন করা যায় না বলে সাংবিধানিক আইনের বিশেষ মর্যাদা থাকে।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান, সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে রচিত হয়।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত হবেই।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানকে রক্ষার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর থাকে বলে এরূপ সংবিধানে আইনসভার পরিবর্তে বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে সুযােগ না থাকায় নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত বলে স্পষ্ট হয়।

  • দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অনমনীয় বলে অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।


মূল্যায়ন: সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের পার্থক্য মূলগত নয়, মাত্রাগত। কেননা সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি নির্ভর করে প্রয়ােজনের ওপর। যেমন—অতিদুম্পরিবর্তনীয় হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ১৯৭১ সালেই ১০ বার সংশােধিত হয়েছিল। অন্যদিকে, ব্রিটেনের সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হলেও জনমতকে উপেক্ষা করে সেখানে সংবিধান সংশােধিত হয়নি৷


নাগরিকত্ব | নাগরিক ও বিদেশির মধ্যে বৈসাদৃশ্য | নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতি


সংবিধান কাকে বলে? সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করাে।


লিখিত সংবিধান কাকে বলে? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করাে।


অলিখিত সংবিধান এবং তার সুবিধা ও অসুবিধা | অলিখিত সংবিধানের গুণ ও দোষ | অলিখিত সংবিধান কী?


লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।


সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে কী বােঝ? সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলােচনা করাে।


দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি | দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের গুণাগুণ | দুম্পরিবর্তনীয় সংবিধান কাকে বলে?