"আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম”- কী দেখেছিলেন বর্ণনা করাে এবং তার কোনাে দূরবর্তী ছায়া কি 'বিভাব'-এ দেখা যায়?
দৃশ্যমান বিষয়: 'বিভাব' নাটকের প্রস্তাবনায় নাট্যকার শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন যে, মারাঠি তামাশায় তিনি দেখেছিলেন মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে চাষি তার জমিদারের কাছে কাতর প্রার্থনা করে এবং শেষে ব্যর্থ মনােরথ হয়ে মন্দিরে যায় ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে। এই যাওয়ার অর্থ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নয়। সে তার উপরে কয়েকবার গােল হয়ে এমনভাবে ঘুরপাক খেল যেন মনে হল গ্রামটা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তারপরে অন্যপাশে গিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভগবানকে মনের দুঃখের কথা নিবেদন করতে থাকল। এদিকে জমিদার সেজে যে অভিনেতা এতক্ষণ অভিনয় করছিল, সে দর্শকদের সামনেই মুখে দাড়ি-গোঁফ এঁটে পুরােহিত সেজে অন্যদিকে চাষির সামনে গিয়ে ধর্মীয় তর্জন শুরু করে দিল। মাঠ ভরতি দর্শক চোখের সামনে দৃশ্য ও সাজসজ্জার এই রূপান্তর মেনে নিয়েছিল।
'বিভাব'-ও দৃশ্যমান বিষয়ের প্রভাব : মারাঠি তামাশার এই ভঙ্গিনির্ভর অভিনয়শৈলী নাট্যকারকে 'বিভাব' নাটকের পরিকল্পনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই দেখা যায়, 'বিভাব' নাটকে মঞ্চসজ্জার কোনাে উপকরণ ছাড়াই শুধু ভঙ্গির সাহায্যে বিষয়ের কাল্পনিক উপস্থাপন ঘটেছে। দোতলায় ওঠা কিংবা শেষে নীচে রাস্তায় নেমে যাওয়া থেকে সিগারেট খাওয়া, চেয়ার টেবিল সরানাে, ঘরকে রাস্তায় বদলে ফেলা, একেবারে শেষে নানারকম যানবাহনের ছবি ধরে মুখের সাহায্যে সেগুলাের মতাে শব্দ করা—এই সামগ্রিক নাট্যভাবনাতেই নাট্যকার দর্শকের কল্পনাশক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই সাহস তিনি যেমন সঞ্চয় করেছিলেন উড়িষ্যার যাত্রা থেকে সেরকমই মারাঠি তামাশা থেকেও।