প্রাচীন ভারতে গিল্ড বা বণিক সংঘগুলির কার্যকলাপের বিবরণ দাও।

সূচনা: কৃষির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে ভারতে বিভিন্ন কারিগরি শিল্পের ও অন্যান্য পেশার বিকাশ ঘটতে থাকে। নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে একই পেশার শিল্পী ও কারিগররা তাদের নিজস্ব সংগঠন গড়ে তোলে। প্রাচীন ভারতের শিল্পী, কারিগর বা বণিকদের এই সংগঠন গিল্ড' (Guild) বা 'সংঘ' বা 'শ্রেণি" নামে পরিচিত।


প্রাচীন ভারতে গিল্ডের কার্যকলাপ

প্রাচীন ও আদিমধ্যযুগে গিল্ডগুলির নিজস্ব নিয়মকানুন অনুসারে তাদের কার্যকলাপ পরিচালিত হত।


[1] ঋণদান: প্রাচীন যুগের গিল্ডগুলি সব ধরনের মানুষের স্থাবর সম্পত্তি বা নগদ অর্থ আমানত হিসেবে জমা রেখে আমানতকারীকে সুদ দিত। জমা রাখা অর্থ গিল্ড আবার সুদে অন্যকে ঋণ বা ধার দিত। ঋণের বিনিময়ে গিল্ড অন্তত ২০ শতাংশ সুদ নিত।


[2] অসহায়কে সহায়তা দান: গিল্ডের কোনাে সদস্য অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারালে গিল্ড তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসত। তা ছাড়া কোনাে সদস্যের অকালমৃত্যু হলে তার অসহায় পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পােষণের দায়িত্বও গিল্ড গ্রহণ করত।


[3] বিচারের কাজ: গিল্ডগুলি বিচারালয় হিসেবেও ভূমিকা পালন করত। বিচারসভা তার সদস্যদের মধ্যে দোষী ব্যক্তিকে শান্তি দিতে বা অপরাধীকে তার পেশা থেকে সরিয়ে দিতে পারত।


[4] স্থানীয় শিল্প বাণিজ্যকে রক্ষা: গিল্ডগুলি স্থানীয় শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করত। বাইরে থেকে হঠাৎ কোনাে কারিগর বা বণিক এসে যাতে স্থানীয় শিল্প বা বাণিজ্যে প্রবেশ করতে না পারে, সেবিষয়ে গিল্ড নজর রাখত।


[5] উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণ: গিল্ড বিভিন্ন উৎপাদন সামগ্রীর গুণগত মান ও বিক্রয়মূল্য নির্দিষ্ট করে দিত। গিল্ডের সদস্যরা পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য ছিল।


[6] রাজস্ব প্রদান: গিল্ডগুলি ছিল রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গিল্ডপগুলি রাষ্ট্রকে যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব দিত। ফলে রাজকোশ যথেষ্ট সমৃদ্ধ হত।


[7] সামরিক সাহায্য দান: রাজার প্রয়ােজনের সময় গিল্ডগুলি রাজা বা রাষ্ট্রকে তাদের 'শ্রেণিবল' বা সামরিক সাহায্য দিত।


উপসংহার: প্রাচীন ভারতের বণিক ও কারিগররা গিল্ড গঠনের দ্বারা সামাজিক ক্ষেত্রে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়াও প্রাচীনযুগের এই গিল্ডগুলি সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রগতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিল। গিল্ডের শক্তি স্থানীয় শাসনব্যবস্থাকেও যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পেরেছিল।


মধ্যযুগের ইউরােপের নগরগুলিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?


মধ্যযুগের ইউরােপে নগরজীবনের দুর্দশার বিবরণ দাও।


মধ্যযুগের নগরগুলির স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে কী জান?


প্রাচীন ভারতে উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতির পরিচয় দাও। প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের অগ্রগতির পরিচয় দাও।


হরপ্পা সভ্যতায় বাণিজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ দাও। হরপ্পার বাণিজ্যে কোন কোন্ পণ্যের আমদানি রপ্তানি চলত?


মৌর্যযুগের বাণিজ্যের অগ্রগতির ঐতিহাসিক উপাদানগুলি উল্লেখ করাে। এযুগের বৈদেশিক বাণিজ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।