মৌর্যযুগের বাণিজ্যের অগ্রগতির ঐতিহাসিক উপাদানগুলি উল্লেখ করাে। এযুগের বৈদেশিক বাণিজ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

মৌর্যযুগের বাণিজ্যের অগ্রগতির ঐতিহাসিক উপাদান

কৃষি ও শিল্পের ব্যাপক অগ্রগতির ফলে মৌর্যযুগে বাণিজ্যের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। এই সময় যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি, কেন্দ্রীভূত শাসন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বাণিজ্যে সরকারি সহায়তা প্রভৃতির ফলে বাণিজ্যের অগ্রগতি সহজতর হয়েছিল।


[1] মেগাস্থিনিসের বিবরণে বাণিজ্যের উল্লেখ: গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিসের বিবরণে উল্লেখ আছে যে, পাটলিপুত্রের শাসন পরিচালনার জন্য যে ছয়টি সমিতি ছিল তারা সম্মিলিতভাবে বাণিজ্যের কাজকর্ম দেখাশােনা করত। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করত যষ্ঠ সমিতিটি। বণিকদের নিরাপত্তার জন্য বাণিজ্যপথগুলিতে পাহারার ব্যবস্থা ছিল।


[2] অর্থশাস্ত্রের বিবরণে বাণিজ্যের উল্লেখ: কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে' বাণিজ্যের ওপর কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। বণিকদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষার জন্য ‘পণ্যাধ্যক্ষ' নামে রাজকর্মচারী ছিল। এ ছাড়া 'পৌতবাধ্যক্ষ নামে কর্মচারীরা পণ্যদ্রব্যের ওজনের তদারকি এবং শুল্কাধ্যক্ষ নামে কর্মচারীরা শুল্ক আদায়ের দায়িত্ব পালন করত। কৌটিল্য লিখেছেন, রাষ্ট্রের উদ্যোগে ‘মজুত ভাণ্ডার’ গড়ার মাধ্যমে পণ্যের চাহিদা, জোগান, ক্রেতার স্বার্থরক্ষা প্রভৃতির চেষ্টা করা হত।


[3] স্ট্রীবাের বর্ণনায় বাণিজ্যের উল্লেখ: গ্রিক লেখক স্ট্রাবাে লিখেছেন যে, এযুগে বাণিজ্যিক পণ্য চলাচলের জন্য ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত তক্ষশিলা থেকে পুফলাবতী ও পাটলিপুত্র পর্যন্ত বিস্তৃত দীর্ঘয রাজপথ ছিল। এই রাজপথটি ভারতের প্রধান নগর ও বন্দরগুলির মধ্যে সংযােগ স্থাপন করেছিল।


বৈদেশিক বাণিজ্য


মৌর্যযুগে স্থল ও জলপথে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। তক্ষশিলা ছিল বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। ব্যাকট্রিয়া ও মধ্য এশিয়ার বণিকরা ভারত থেকে তাদের সামগ্রী তক্ষশিলার মাধ্যমে ইউরােপে রপ্তানি করত। কাবুল, কান্দাহার, পারস্যের পথ ধরে ভারতীয় পণ্য পশ্চিম এশিয়ায় চলে যেত।


[1] বিনিময়ের মাধ্যম: মৌর্যযুগে সাধারণভাবে কড়ি ছিল ব্যবসাবাণিজ্যে বিনিময়ের মাধ্যম। এযুগে 'সুবর্ণ' এবং কার্ষাপণ নামে মুদ্রাজাতীয় স্বর্ণপিণ্ডের অস্তিত্ব থাকলেও মৌর্য শাসকদের কোনাে মুদ্রা এখনাে পাওয়া যায়নি। তবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে 'দারিক নামে পারসিক মুদ্রার প্রচলন ছিল যা বাণিজ্যিক আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হত।


[2] বন্দর: মৌর্যযুগে ভারতের উল্লেখযােগ্য বন্দর ছিল গুজরাটের ভৃগুচ্ছ, মহারাষ্ট্রের সােপারা, কল্যাণ, বাংলার তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি।


[3] আমদানি-রপ্তানি: এযুগে ভারতীয় মসলা, চাল, সুগল্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের দ্রব্য, সুতিবস্ত্র, রেশম, দামি পাথর প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি হত। ভারতে আমদানি হত যুদ্ধের ঘোড়া, কাচ, নীলকান্ত মণি, সােনা ইত্যাদি।


উপসংহার: মৌর্যযুগের বাণিজ্যের অগ্রগতির ধারা মৌর্য পরবর্তী যুগেও অব্যাহত ছিল। এযুগে রােমের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে ভারতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসে। এজন্য রােমান ইতিহাসবিদ প্লিনি দুঃখ করে বলেছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ফলে রােমান স্বর্ণমুদ্রা ভারতে চলে যাচ্ছে।


মধ্যযুগে ইউরােপে শহরের উৎপত্তির বা নগরায়ণের কারণগুলি কী ছিল?


মধ্যযুগের ইউরােপের নগরগুলিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?


মধ্যযুগের ইউরােপে নগরজীবনের দুর্দশার বিবরণ দাও।


মধ্যযুগের নগরগুলির স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে কী জান?


প্রাচীন ভারতে উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতির পরিচয় দাও। প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের অগ্রগতির পরিচয় দাও।


হরপ্পা সভ্যতায় বাণিজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ দাও। হরপ্পার বাণিজ্যে কোন কোন্ পণ্যের আমদানি রপ্তানি চলত?


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)