মধ্যযুগের ইউরােপের নগরগুলিতে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?

নগরের জীবনযাত্রা

খ্রিস্টীয় একাদশ থেকে চতুর্দশ শতকের মধ্যে ইউরােপে বহু নগরের প্রতিষ্ঠা হয়। এই নগরগুলিতে মানুষের নগরজীবনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল一


[1] অপরিকল্পিত নগর সৃষ্টি: মধ্যযুগে নগরগুলি ছিল ঘনবসতিপূর্ণ এবং প্রাচীরবেষ্টিত। নগরে প্রবেশের কয়েকটি প্রধান পথ থাকত। শহরগুলির রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িগুলি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হওয়ায় নগরজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছােট্ট অঞ্চলে প্রচুর মানুষের বসবাসের ফলে নাগরিক জীবন ছিল খুবই নিম্নমানের।


[2] রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা: শহরের রাস্তাগুলি ছিল সরু ও আঁকাবাঁকা। অধিকাংশ রাস্তা ছিল কাঁচা। বর্ষাকালে এসব রাস্তায় খুবই কাদা হত। যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে নগরগুলির আবর্জনা জমে থাকত। রাস্তায় রাতে আলাের ব্যবস্থা থাকত না। অন্ধকার রাস্তায় নিরাপত্তার জন্য লণ্ঠন ও বল্লমধারী চৌকিদারই ছিল একমাত্র ভরসা।


[3] ঘরবাড়ির অপরিকল্পিত নির্মাণ: শহরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি রাস্তার দু'পাশ ঘেঁষে নির্মিত হত৷ বাড়ির ওপরতলাগুলির বর্ধিত অংশ রাস্তার ওপর এগিয়ে থাকত। বাড়িপুলি খুবই ঘেঁষাঘেষি করে থাকায় শহরগুলি খুবই ঘিঞ্জি হত। ধনীদের বাড়ি ইট দিয়ে নির্মিত হলেও দরিদ্রদের বাড়ি কাঠ ও খড় দিয়ে নির্মিত হত। অধিকাংশ একতলা বাড়িতে টালির চাল থাকত।


[4] বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব প্রাপ্তি: মধ্যযুগে ইউরোপের শহরগুলি ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। শহরগুলিতে অসংখ্য বণিক ও কারিগর বসবাস করত। শহরে বাণিজ্যিক পণ্যের আদানপ্রদানের পর তা দূরদূরান্তে চলে যেত।


[5] ধনী ও দরিদ্রের অবস্থা: শহরে প্রচুর ধনী বণিক ও উচ্চশ্রেণির লােকজন বাস করত। তারা অত্যন্ত দামী পােশাক পরত, শৌখিনতা, বিলাসিতা ও আড়ম্বরের মধ্যে দিন কাটাত। দরিদ্ররা সাধারণ পােশাকে, অনাড়ম্বরভাবে দিন কাটাত। তারা দিনের বেশির ভাগ সময় কাজে নিযুক্ত থাকায় অবসর যাপনের সময় পেত না।


[6] বিদ্যাচর্চা: শহরে লেখাপড়ার প্রচলন বিশেষ ছিল না। প্রধানত ধনী বণিকরাই শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকত। তারা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করত এবং শিক্ষক হিসেবে মঠের সাধুসন্তদের নিয়ে আসত। মূলত তাদের ছেলেমেয়েরাই বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করত। দরিদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার কোনাে সুযােগ ছিল না।


[7] বিনােদনের উপকরণ: শহরের প্রধান আনন্দ-উৎসব ছিল মেলা। দূরদূরান্তের বণিকরা রকমারি সামগ্রী নিয়ে ও ভেলকিবাজরা খেলা দেখাতে মেলায় আসত৷ কুকুর ও মুরগির লড়াই, জুয়াখেলা, মদ্যপান প্রভৃতি ছিল শহরের মানুষের আমােদ-প্রমােদের প্রধান অঙ্গ।


[8] গিল্ড ব্যবস্থা: ব্যাবসাবাণিজ্য ও শিল্পের প্রসারের জন্য শহরের বণিক ও কারিগরশ্রেণি গিল্ড বা সংঘ গড়ে তােলে। বণিক সংঘগুলি ব্যাবসায়িক প্রতিযােগিতা ও রেষারেষি বন্ধ করা, জিনিসপত্রের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি কাজ করত। অপরদিকে কারিগর সংঘগুলি তাদের সদস্যদের কাজের সময়সীমা ও পণ্যের দাম নির্ধারণের পাশাপাশি কারিগরদের স্বার্থরক্ষা করত।


উপসংহার: একাদশ শতকের পরবর্তীকাল থেকে নগরগুলি ইউরােপের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। দেশের সর্বোচ্চ শাসক থেকে শুরু করে পােপ পর্যন্ত নগরগুলির নানাবিধ গুরুত্বের স্বীকার করতেন।


ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্বের সহায়ক উপাদানগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। গুপ্তযুগে অগ্রহার ব্যবস্থা সামন্ততন্ত্রের বিকাশে কতখানি সহায়তা করেছিল?


সুলতানি আমলে ভারতে সামন্ততন্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে আলােচনা করাে।


মধ্যযুগে ইউরােপে বাণিজ্যের বিকাশের প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করাে।


মধ্যযুগের ইউরােপে গিল্ডের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কী জান? ওই সময় ইউরােপে বাণিজ্যের প্রসারে গিল্ডের কী ভূমিকা ছিল?


মধ্যযুগে ইউরােপে 'গিল্ড' বা বণিক ও কারিগর সংঘগুলি গড়ে ওঠার কারণ কী ছিল?


মধ্যযুগের ইউরােপে প্রতিষ্ঠিত গিল্ডগুলির প্রধান কাজগুলি কী ছিল?


মধ্যযুগে ইউরােপে শহরের উৎপত্তির বা নগরায়ণের কারণগুলি কী ছিল?


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)