অশােকের ধম্ম-র বিভিন্ন দিকগুলি ও ধর্মপ্রচারে অশােকের বিভিন্ন উদ্যোগগুলি লেখাে।

সূচনা: হিন্দু ও বৌদ্ধ ভাবধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল অশােকের ধম্ম। অশােক এই ধম্ম সম্পর্কে সর্বপ্রথম মাস্কিলিপিতে উল্লেখ করেন। অশােকের ধম্মে মানবিক গুণাবলির বিকাশ এবং সদাচারের পরিচয় পাওয়া যায়।


অশােকের ধম্ম-এর বিভিন্ন দিক

[1] ভিত্তি: অশােকের ধম্মের মূলভিত্তি ছিল অহিংসা। যুদ্ধনীতি ত্যাগ, প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি অহিংস আদর্শেরই পরিচায়ক।


[2] প্রেক্ষাপট: কলিঙ্গাযুদ্ধের ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা‌ অশােকের মনােজগতে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল বলে বহু ঐতিহাসিক মনে করেন। যদিও অধ্যাপিকা রােমিলা থাপার তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, "সমকালীন আর্থসামাজিক পরিস্থিতি অশােকের মনে নতুন ধর্মাদর্শের জন্ম দেয়।"


[3] উদ্দেশ্য: অশােক তার ধম্মের প্রবর্তন ঘটিয়ে মানুষের ব্যক্তি ও সমাজজীবন, দুই ই পরিশুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। অশােক বিশ্বাস করতেন, মানুষের ব্যক্তিকেন্দ্রিক পারিবারিক জীবন উন্নত হলে, সমাজজীবনও উন্নত হবে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সর্বসাধারণকে নিয়ে এক সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ গঠন করাই ছিল অশােকের ধম্মের প্রধান উদ্দেশ্য।


[4] পালনীয় বিধি


  • ব্যক্তিজীবনে: ব্যক্তিজীবনের পরিশুদ্ধির জন্য অশােকের ‘ধম্মে’– (a) দয়াশীলতা, (b) দানশীলতা, (c) সততা, (d) শুচিতা, (e) ভদ্রতা, (f) সৎকাজে আত্মনিয়ােগ, (g) সংযম, (h) কৃতজ্ঞতা—এই আটটি গুণ অনুশীলনের কথা বলা হয়েছে।


  • সমাজজীবনে: সমাজজীবনে সংহতি ও ঐক্য রক্ষায় অশােক পরধর্মসহিস্লুতার অনুশীলনের উদ্দেশ্য তাঁর ধ্মে বেশ কিছু সামাজিক বিধি পালনের কথা বলা হয়, যেমন- (a) প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকা, (b) প্রাণীর ক্ষতি না করা, (c) বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। (d) বয়ােজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, (e) গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, (f) ব্রাহ্মণ, শ্রমণ, আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার, (g) স্বল্প ব্যয় ও (h) স্বল্প সঞ্চয় প্রভৃতি।


[5] ‘ধম্ম’-র স্বরুপ বা প্রকৃতি: 'আর্যসত্য', 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ', ‘নিবাণ’, ‘বৌদ্ধধর্ম ও সংঘের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন'- বৌদ্ধধর্মের এই মূলনীতিগুলির কোনােটিরই উল্লেখ অশােকের ধম্মে নেই। এটি ছিল নৈতিক ও সামাজিক আচরণবিধির সমন্বয়, যাতে প্রাণীজগতের প্রতি করুপা প্রদর্শনের নীতিও যুক্ত ছিল। অশােকের ধম্মে রয়েছে সংযম, করুণা, চিত্তশুদ্ধি ও মানবিক ঔদার্য। রিস ডেভিডস, জে এফ ফ্লিট, রাধাকুমুদ মুখােপাধ্যায়, দীনেশচন্দ্র সরকার, রােমিলা থাপার প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ মনে করেন অশােকের ধম্ম বৌদ্ধধর্ম থেকে অনেকখানিই আলাদা।


ধর্মপ্রচারে অশােকের নানা উদ্যোগ


[1] বিহারযাত্রার পরিবর্তে ধর্মযাত্রা: অশােক তাঁর‌ রাজত্বের দশম বছর থেকে বিহারযাত্রা বা রাজকীয় শিকারযাত্রার পরিবর্তে ধর্মযাত্রার নীতি নেন। ধর্মযাত্রার অর্থ হল বুদ্ধদেবের স্মৃতি জড়িত স্থানগুলি ভ্রমণ। ধর্মযাত্রার সময় বুদ্ধের বাণী প্রচার ছাড়াও তিনি ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ (বৌদ্ধ ভিক্ষু) দের দানধ্যান করতেন।


[2] ধম্মলিপি খোদাই: প্রজাদের মনে ধর্মীয় ভাব জাগিয়ে‌ তােলার জন্য অশােক ধম্মলিপি খােদাই-এর ব্যবস্থা করেন। তিনি সহজসরল ভাষায় নিজের ধর্মীয় উপদেশগুলি পর্বতের গায়ে বা স্ভূপের ওপরে খোদাই করান। অশােক কর্তৃক খােদিত এই লিপিগুলি ধম্মলিপি নামে পরিচিত।


[3] অন্যান্য উদ্যোগ


  • কর্মচারী নিয়ােগ: ভগবান বুদ্ধের বাণী প্রচারের জন্য অশােক ধম্মমহামাত্র' নামে এক বিশেষ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ােগ করেন। এ ছাড়াও ইতিপূর্বে নিয়ােজিত যুত, রাজুক, পুরুষ, প্রাদেশিক প্রমুখ রাজকর্মচারীদেরও ধর্মপ্রচারের নির্দেশ দেন।


  • ধর্মপ্রচার: মহীশূরে মহাদেব, বারাণসীতে রক্ষিত, মহারাষ্ট্রে মহাধর্মরক্ষিত, কাশ্মীর ও গান্ধারে মজুঝান্তিক প্রমুখ দূত বৌদ্ধধর্মের প্রচার চালান। অশােক নিজের পুত্র (মতান্তরে ভ্রাতা) মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে সিংহলে, মজুঝিমকে হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে এবং মহারক্ষিতকে গ্রিক রাজ্য ধর্মপ্রচারে পাঠান।


  • তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির আয়ােজন: অশােকের আমলে মহাসাংঘিক ও থেরবাদীদের মধ্যে মতভেদ চরমে পৌঁছােয়। তাই মতভেদ দূর করার লক্ষ্যে অশােক পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির আয়ােজন করেন (২৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে)।


প্রাচীন যুগের স্ত্রীধনের পরিচয় দাও।

অথবা, প্রাচীন ভারতীয় সমাজে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে নেফারতিতির পরিচয় ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্লিওপেট্রার পরিচয় ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রানি দুর্গাবতীর পরিচয় ও কার্যাবলি আলোচনা করাে।


মধ্যযুগে ভারতে সুলতান রাজিয়ার কার্যাবলি সম্বন্ধে লেখাে।


নূরজাহানের পরিচয় ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।

History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)