প্রাচীন যুগের স্ত্রীধনের পরিচয় দাও | প্রাচীন ভারতীয় সমাজে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: প্রাচীন ভারতীয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার কম ছিল। নারীর অর্থনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে শাস্ত্রকারদের নীরবতা বা নানা বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা নারীকে কিছু অর্থনৈতিক অধিকার অর্থাৎ সম্পত্তি রাখার অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। নারীর এই সম্পত্তি স্ত্রীধন' নামে পরিচিত।


নারীর সম্পত্তির অধিকার বা স্ত্রীধন

[1] নারীর অর্থনৈতিক অধিকার: মনু ও অন্যান্য শাস্ত্রকাররা নারীকে বাল্যে পিতার, যৌবনে স্বামীর এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকার বিধান দিয়েছেন। নারীর এইরকম সামাজিক অবস্থায় তার অর্থনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়টি কল্পনাতীত ছিল। তা সত্ত্বেও প্রাচীন ভারতীয় নারী কিছু অর্থনৈতিক অধিকার ভােগ করার অধিকারী ছিল।


[2] নারীর সম্পত্তি: স্ত্রীধন বা নারীর সম্পত্তি হিসেবে অন্যতম ছিল নারীর অলংকার ও পােশাক। নারী বিবাহের আগে এবং পরে যা কিছু উপহার লাভ করত, তা সবই ছিল স্ত্রীধনের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন সূত্র থেকে স্ত্রীধনের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। এই সূত্রগুলি হল一


  • মনুসংহিতা: 'মনুসংহিতায় ছয়টি স্ত্রীধনের উল্লেখ পাওয়া যায়। যথা(a) অধ্যন্নি, (b) অধ্যবাহনিক, (c) প্রীতিদত্ত, (d) পিতৃদত্ত, (e) মাতৃদত্ত ও (f) ভ্রাতৃদত্ত। বিবাহকালে অগ্নিকে সাক্ষী করে প্রদত্ত সম্পদকে অধ্যপ্নি বলে। আত্মীয়স্বজন ও ব্ধুবাল্ধবদের প্রীতির দানকে বলে ‘প্রীতিদত্ত’। পতিগৃহ যাত্রাকালে কন্যাকে দেওয়া সম্পদকে 'অধ্যবাহনিক বলে। পিতা, মাতা ও ভ্রাতার দেওয়া উপহার হল যথাক্রমে 'পিতৃদত্ত', 'মাতৃদত্ত ও ভ্রাতৃদত্ত'।


  • কাত্যায়ন-স্মৃতি: কাত্যায়ন আরও কয়েকটি স্ত্রীধনের উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল- (a) কুমারী অবস্থায় প্রাপ্ত উপহার বা সৌদায়িক, (b) পিতা-মাতা, স্বামী ও আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহার বা অন্বাধেয় (c) কন্যার ওপর ধার্য মূল্য বা শুল্ক' প্রভৃতি।


  • অর্থশাস্ত্র: কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে' চার প্রকার স্ত্রীধনের উল্লেখ আছে। এগুলি হল - (a) "শুন্ক", (b) 'অধিবেদনিক, (c) 'অন্বাধেয় এবং স্তবন্ধুদত্ত'।


[3] অধিকারের সীমাবদ্ধতা: কোনাে কোনো ক্ষেত্রে নারীর সম্পত্তির অধিকারের ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা আরােপিত হয়েছে। [i] অর্থশাস্ত্র মতে, বিবাহিতা নারী ২০০০ পণ (রৌপ্যমুদ্রা) পর্যন্ত নিজের অধীনে রাখার অধিকারী, তার বেশি নয়। [ii] স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিকে কাত্যায়ন স্ত্রীধন হিসেবে মনে করলেও নারীর নিজের উপার্জিত অর্থকে তিনি স্ত্রীধন হিসেবে মেনে নেননি। [iii] পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার মেনে নেওয়া হয়নি।


[4] স্বামীর ভূমিকা: স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কিছু কিছু‌অধিকার ছিল। স্ত্রী নিজের সম্পত্তি যথেচ্ছভাবে দান করতে চাইলে স্বামী তাতে বাধা দিতে পারত। স্ত্রীর কাছে ২০০০ পণের বেশি অর্থ সঙুিত হয়ে গেলে অতিরিক্ত অর্থ স্ত্রীর হয়ে স্বামী রাখত।


[5] স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার: যাজ্ঞবল্ক্য লিখেছেন যে, “স্ত্রীধনের ওপর পিতা, স্বামী বা পুত্রের কোনাে অধিকার ছিল না। নারদস্মৃতি'তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “কোনাে নারীর মৃত্যুর পর তার মেয়েরা মায়ের সম্পত্তির অধিকারী হবে।


উপসংহার: সম্পত্তিতে নারীর যতটা অধিকারের কথা স্মৃতিশাস্ত্র-গুলিতে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবে কতটা কার্যকরী হত তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে, সমাজের উচ্চস্তরের নারীরা এবিষয়ে যতটা অধিকার ভােগ করত নিম্নস্তরের নারীরা ততটা পেত না।


বর্ণপ্রথার বৈশিষ্ট্য কী? 'বর্ণ' ও ‘জাতি'-র ধারণার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করাে।


'পতিত ক্ষত্রিয়' বা 'ব্রাত্য ক্ষত্রিয়' কাদের বলা হয়? ভারতীয় সমাজজীবনের সঙ্গে যবন, শক ও হুন জাতির মিলন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্য ও রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)