প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।

সূচনা: প্রাচীন যুগে নারীর সামাজিক অবস্থান নানা সময়ে বদলেছে। প্রাচীনকালে রচিত প্রাচীন সাহিত্যেও নারীর সামাজিক অবস্থানের পরিচয় মেলে।


প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

[1] ঋবৈদিক সমাজে: ঋবৈদিক সমাজে বিয়ের আগে বাবা বা ভাই আর বিয়ের পর স্বামী বা ছেলের তত্ত্বাবধানে মেয়েদের জীবন কাটত। ঋবৈদিক সমাজে পতি নির্বাচনে মেয়েরা স্বাধীনতা ভােগ করত। স্বামীর মৃত্যুতে নিঃসন্তান স্ত্রী দেওরকে বিয়ে করতে পারতেন। গৃহস্থালির ব্যাপারে স্ত্রীই ছিলেন সর্বময় কত্রী। সেই যুগে সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানে অবাধে যােগ দেওয়ার এমনকি যুদ্ধে অংশগ্রহণের অধিকারও তাদের ছিল। ধর্মীয় কাজে স্ত্রীরা স্বামীকে সাহায্যে করতেন। ঋগবৈদিক যুগে শিক্ষাক্ষেত্রেও মেয়েদের ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। ঘােষা, অপালা, বিশ্ববারা প্রমুখ মহিলার বিভিন্ন শাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞান ছিল। তাদের কেউ কেউ বৈদিক মন্ত্রও রচনা করে ছিলেন।


[2] পরবর্তী বৈদিক সমাজে: পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর সামাজিক মর্যাদা অনেকখানি হ্রাস পেয়েছিল। পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম কেউ চাইত না। অনেকক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হত। ঐতরেয় ব্রায়ণে উল্লেখ রয়েছে যে, কন্যা হল অভিশাপ। নারীদের কাছে শিক্ষার দ্বার কিছুটা সংকুচিত হলেও সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যায়নি। সেইযুগে গাগী ও মৈত্রেয়ী উচ্চশিক্ষায় পারদর্শিতা দেখিয়ে ছিলেন। এ সময় বাল্যবিবাহ, পুরুষের বহুবিবাহ ও পণপ্রথা নারীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তােলে। নারীরা বেদ পাঠের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।


[3] মৌর্য যুগে: মৌর্য যুগে অভিজাত বংশীয় নারীরা লেখাপড়া শিখত। এযুগে নারীরা সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত। ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েদের বিদ্যা অর্জনের যথেষ্ট সুযােগ ছিল। মৌর্য যুগে নারীরা সম্পত্তির অধিকার পেত। অর্থশাস্ত্র দুইধরনের স্ত্রীধনের কথা বলা হয়েছে। যথা-বৃত্তি (জীবিকা চালানাের উপায়) এবং আবদ্ধ্য (আভরণ ও অলঙ্কারাদি)। এ যুগে স্বামী মারা গেলে স্ত্রী শ্বশুরের অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারতেন। স্বামী দুশ্চরিত্র বা চিরপ্রবাসী বা ক্লীব হলে নারী সেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে পারতেন। গৃহে তারা বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজও করত। গৃহে অতিথি এলে তার সেবা করা ছিল নারীর প্রধান কর্তব্য। গৃহলক্ষ্মীর ভূমিকা সামলানাের পাশাপাশি নারীরা স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্ঠানেও যােগ দিতে পারত।


[4] মৌর্য পরবর্তী যুগের: মৌর্য পরবর্তী যুগে অনেক মহিলা উচ্চশিক্ষা লাভ করতেন। পাণিনি বলেছেন যে, এই সময় নারীরা বেদ অধ্যয়ন করতেন। সমাজে নারীর বিবাহরীতি নিয়ে বেশ কিছু পরস্পরবিরােধী মত রয়েছে। সমাজে 'অনুলােম ও ‘প্রতিলােম’—এই দুই বিবাহরীতির প্রচলন ছিল। এ যুগে স্ত্রীকে সংসারের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনতে হত। স্বামী ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা, দাসদাসীদের কাজের তদারকি করা, গৃহ পরিষ্কার রাখা তাদের অন্যতম কর্তব্য ছিল।


[5] গুপ্ত যুগে: গুপ্ত যুগে কেবল স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে স্ত্রী বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, উৎসব ও ধর্মীয় শােভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারত। মেয়েদের সবর্ণে বিবাহে পাশাপাশি স্বামী নির্বাচনেরও অধিকার ছিল। মনুস্মৃতি এবং মহাকাব্য দুটিতে নারীর সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করা হলেও সামগ্রিকভাবে এ যুগে নারীর সামাজিক অবস্থানের অবনমন ঘটেছিল। এ যুগে দেবদাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গুপ্তযুগে সন্ত্রান্ত মহিলাদের উচ্চ শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল। 'অমরকোষ গ্রন্থে শিক্ষিকাদের 'উপাধ্যায়া-ও 'আচার্যা' বলা হয়েছে।


'পতিত ক্ষত্রিয়' বা 'ব্রাত্য ক্ষত্রিয়' কাদের বলা হয়? ভারতীয় সমাজজীবনের সঙ্গে যবন, শক ও হুন জাতির মিলন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্য ও রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন যুগের স্ত্রীধনের পরিচয় দাও।

অথবা, প্রাচীন ভারতীয় সমাজে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)