মধ্যযুগে ভারতে সুলতান রাজিয়ার কার্যাবলি সম্বন্ধে লেখাে।

সূচনা: সুলতান ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তাঁর অযােগ্য পুত্র রুকনুদ্দিন ফিরোজকে সিংহাসন থেকে হঠিয়ে ইলতুৎমিসের কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন এবং চার বছর (১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ - ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব করেন।


সুলতান রাজিয়ার কার্যাবলি

[1] উদ্ভূত সমস্যা ও তার সমাধান: রাজিয়া সিংহাসনে বসেই কিছু সমস্যার মুখােমুখি হন। এগুলি হল- [i] ব্লুকনউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী মালিক মহম্মদ জুনাইদি কর্তৃক রাজিয়ার সিংহাসনারােহণের বিরােধিতা। [ii] মুলতান, বদাউন, হানসি ও লাহােরের শাসনকর্তাদের দিল্লি অবরােধ এবং এর দ্বারা রাজিয়ার ক্ষমতায় টিকে থাকাকে বিপন্ন করে তােলা। রাজিয়া স্থির মস্তিষ্কে উদ্ভূত সমস্যাগুলির সমাধান করেন। এজন্য তাঁর পদক্ষেপগুলি ছিল—[iii] বিদ্রোহী আমির ও প্রাদেশিক শাসকদের মধ্যে সুকৌশলে বিভেদ সৃষ্টি করা। [v] কবির খান, ইজ্জুদ্দিন সালারি প্রমুখকে নিজের গােষ্ঠীতে নিয়ে আসা।


[2] প্রশাসনিক ও অন্যান্য দক্ষতা: সুলতান রাজিয়া শাসন পরিচালনার জন্য একটি নিজস্ব অনুগত গোষ্ঠী গড়ে তােলার উদ্যোগ নেন এবং আমলা ও প্রাদেশিক শাসকদের বিদ্রোহ দক্ষতার সঙ্গে দমন করেন। তিনি তুর্কি আমির-ওমরাহ ও অভিজাতদের ক্ষমতা খর্ব করে দ্রুত একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা গড়ে তােলেন। রাজিয়া অশ্বারােহণ, অস্ত্র চালনা, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন।


[3] রাজনৈতিক পদক্ষেপ: রাজিয়া সিংহাসনে বসেই কেন্দ্রীয় শাসনকে সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নেন। এজন্য তিনি—তুর্কি অভিজাতদের নিয়ে গঠিত তুর্কান-ই-চাহেলগান’ বা ‘চল্লিশের চক্র ভেঙে দেন। প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পদে অ-তুর্কি মুসলমানকে বসিয়ে তুর্কিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। প্রাদেশিক বিদ্রোহী নেতা নিজাম-উল-মুলকজুনাইদিকে হত্যা করে তার বিদ্রোহকে দমন করেন।


[4] অভিজাতদের বিরােধিতা: দিল্লির গোঁড়া মৌলবি ও তুর্কি অভিজাত শ্রেণি বিভিন্ন কারণে রাজিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। রাজিয়ার অশ্বারােহণ, অস্ত্র চালনা, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনা, পুরুষের পােশাকে রাজসভা ও শাসনকার্য পরিচালনা প্রভৃতি মধ্যযুগীয় গোঁড়া উলেমা ও অভিজাতরা মেনে নিতে পারেনি। রাজিয়া তুর্কি অভিজাতদের 'বন্দেগানই-চাহেলগান বা চল্লিশের চক্র ভেঙে দিলে অভিজাতরা ক্ষুব্ধ হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন পদে অ-তুর্কিদের নিয়ােগও তুর্কি অভিজাতদের যথেষ্ট অসন্তুষ্ট করে। ফলে তারা রাজিয়াকে সিংহাসনচ্যুত করার উদ্যোগ নেয়।


[5] আলতুনিয়ার বিদ্রোহ: পাঞ্জাবের ভাতিন্ডার শাসনকর্তা আলতুনিয়া সুলতান রাজিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। রাজিয়া এই বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাপতি জামালউদ্দিন-ইয়াকুৎ খাঁ-কে সঙ্গে নিয়ে ভাতিন্ডা দুর্গে অভিযান করেন। আলতুনিয়া এই অভিযানে ইয়াকুৎ খাঁ-কে নিহত করেন এবং রাজিয়াকে বন্দি করেন।


[6] পরিণতি: বাহরাম শাহকে সিংহাসনে বসিয়ে রাজিয়ার বিরােধীরা বিভিন্ন উচ্চপদ গ্রহণ করলেও আলতুনিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কোনাে পদ দেওয়া হয়নি। ফলে এর প্রতিশােধ গ্রহণের জন্য আলতুনিয়া রাজিয়াকে বিবাহ করেন এবং সেনাদলসহ দিল্লির অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু যুদ্ধে দিল্লির তুর্কি বাহিনীর হাতে আলতুনিয়া ও রাজিয়া উভয়েই ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন।


উপসংহার: সুলতান রাজিয়ার রাজত্বকাল স্বল্পস্থায়ী হলেও তার যােগ্যতা ও মহান কীর্তি তাঁকে ভারত ইতিহাসে স্থায়ী আসন দান করেছে। মধ্যযুগের ইতিহাসে একজন নারী হিসেবে তিনি যে শাসনদক্ষতা, যােগ্যতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, সামরিক শৌর্য ও মানবিক অনুভূতির পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই বিরল।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন যুগের স্ত্রীধনের পরিচয় দাও।

অথবা, প্রাচীন ভারতীয় সমাজে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে নেফারতিতির পরিচয় ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন মিশরে ক্লিওপেট্রার পরিচয় ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রানি দুর্গাবতীর পরিচয় ও কার্যাবলি আলোচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)