নঈ তালিমের মাধ্যমে গান্ধিজির শিক্ষা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করাে।

গান্ধিজির শিক্ষা সম্পর্কিত চিন্তা ও কাজকর্ম


ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে মহাত্মা গান্ধি অধিক পরিচিত হলেও একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবেও তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গতিশীল দার্শনিক চিন্তার পথপ্রদর্শক ছিলেন। তাঁর শিক্ষাদর্শন, শিক্ষাচিন্তা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এখানে আলােচনা করা হল一


(১) শিক্ষার সংজ্ঞা: গান্ধিজি শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন “By education I mean an allround drawing out of the best in child and man-body, mind and spirit" অর্থাৎ শিক্ষা বলতে আমি বুঝি শিশু ও ব্যক্তির সর্বোত্তম দিকগুলির, যথা—দেহ, মন ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশসাধন। গান্ধিজির মতে, প্রকৃত শিক্ষা বলা হবে তাকেই যা শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক এবং দৈহিক বিকাশ ঘটায় এবং তাকে উদ্দীপিত করে।


(২) শিক্ষদর্শন: গান্ধিজি শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে ভারতবর্ষে যেসব মানুষ যুগ যুগ ধরে শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে, তাদের কাছে প্রাথমিক শিক্ষার সুযােগ পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষার মাধ্যমে তাদের অধিকাংশকে জীবিকা অর্জনের উপযােগী করে গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তার কথা তিনি বলেছেন। তাঁর শিক্ষাদর্শনের মূল কথা হল আত্মােপলদ্ধি ও সত্যাচার। তাঁর শিক্ষাদর্শনে ভাববাদ, প্রকৃতিবাদ ও প্রয়ােগবাদের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়।


(৩) শিক্ষাচিন্তার প্রয়ােগ: গান্ধিজি তাঁর শিক্ষাপরিকল্পনা রচনা করেছিলেন তৎকালীন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। গান্ধিজির এই শিক্ষা পরিকল্পনা বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনা নামে পরিচিত। অনেকে এই শিক্ষা পরিকল্পনাকে গুজরাটের ওয়ার্ধা পরিকল্পনাও বলে থাকেন। কারণ 1937 খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্ধা নামক স্থানে গান্ধিজির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই শিক্ষার নাম পরবর্তীকালে 'নঈ তালিম' রাখা হয়। গান্ধিজি প্রবর্তিত নঈ তালিম শিক্ষা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল—


  • সাত থেকে চোদ্দো বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য এই শিক্ষাক্রম হবে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক।

  • কোনাে একটি শিল্পকে কেন্দ্র করে এই শিক্ষা গড়ে উঠবে।

  • এই শিক্ষা হবে উৎপাদনমুখী।

  • এই শিক্ষাটি গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে।

  • শিক্ষার্থীদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করে শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ হবে। অর্থাৎ এটি হবে স্বয়ংনির্ভর।

  • এই শিক্ষাব্যবস্থাটি শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হবে।

  • মাতৃভাষার মাধ্যমে এই শিক্ষা দেওয়া হবে।


(৪) শিক্ষার স্তর: নঈ তালিম শিক্ষার চারটি স্তর হল


  • প্রাক্-বুনিয়াদি: এই স্তরে 7 বছরের থেকে কম বয়সি শিশুরা শিক্ষালাভ করবে।

  • বুনিয়াদি: এই স্তরে 7 থেকে 14 বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করবে।

  • উত্তর বুনিয়াদি: এই স্তরে 14 বছরের চেয়ে বেশি বয়সি ছেলেমেয়েরা শিক্ষালাভ করবে।

  • প্রাপ্তবয়স্ক: এই স্তরে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ করবে।


(৫) পাঠক্রম: বুনিয়াদি বা নঈ তালিম শিক্ষার পাঠক্রমে যেসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেগুলি হল

  • শিল্পশিক্ষা: সুতােকাটা ও তাঁতের কাজ, কৃষিকাজ, কাঠের কাজ, চামড়ার কাজ প্রভৃতির মধ্য থেকে একটি শিল্প বেছে নিতে হয়।


  • গণিত: দৈনন্দিন জীবনে প্রয়ােজনীয় গণিতের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা হয়।


  • সমাজশিক্ষা: ইতিহাস এবং ভূগােলের পাঠ দেওয়া হয়।


  • সাধারণ বিজ্ঞান: উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, প্রকৃতি পাঠ, বিজ্ঞানীদের জীবনী পাঠ প্রভৃতি বিষয়ে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা থাকে।


  • অন্যান্য: এ ছাড়া টিত্রাঙ্কন, সংগীত, ব্যায়াম এবং হিন্দি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।


এগুলি ছাড়াও নঈ তালিম শিক্ষার পাঠক্রমের মাধ্যমে গুরুজনকে ভক্তি করা, সত্য কথা বলা, সরল নৈতিক জীবনযাপন করা, সমবেত প্রার্থনা করা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সুষ্ঠু সামাজিক জীবনযাপনের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।


(৬) শিক্ষাদান পদ্ধতি: গান্ধিজির নঈ তালিম বা বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থায় অনুবন্ধনীতি অনুসরণ করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই ধরনের পাঠদানের মূলকথা হল একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষা। নঈ তালিম-এ হস্তশিল্পকে কেন্দ্র করে ইতিহাস, ভূগােল, গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা ইত্যাদি পাঠের ব্যবস্থা করা হয়। মাতৃভাষাকে এই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্থির করা হয়।


(৭) শৃঙ্খলা: গান্ধিজি আত্মসংযমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধিজির মত হল, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফুর্ত শৃঙ্খলার পথই অনুসরণ করবে, তবে তা হবে শিক্ষকদের তদারকিতে। বুনিয়াদি শিক্ষা বা নঈ তালিম শিক্ষা গ্রাম-অধ্যুষিত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল ভারতবর্ষের পক্ষে যথার্থ ছিল। যে ব্যাবহারিক শিক্ষার অভাবে আজও আমাদের শিক্ষা পুথিসর্বস্ব, তার পরিবর্তনে বুনিয়াদি শিক্ষাই ছিল উপযুক্ত। কিন্তু সেই সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা বুনিয়াদি শিক্ষাকে সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। সম্ভবত নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনে যে সৃষ্টিশীলতা থাকা প্রয়ােজন, দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তনের প্রয়ােজন তা তাদের ছিল না। তাই ভারতবর্ষের পক্ষে অত্যন্ত উপযােগী ও সম্ভাবনাময় দেশীয় সংস্কৃতি থেকে জাত এই শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যায়।


প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান কী? এই প্রসঙ্গে তাঁর বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।


উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা নবজাগরণে বিদ্যাসাগরের বহুমুখী অবদান বিস্তারিতভাবে লেখাে।


স্ত্রীশিক্ষা প্রসার, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো। সংস্কৃত শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?


শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান আলােচনা করো।

অথবা, শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে তাঁর শিক্ষাচিন্তার প্রয়ােগ করেন?


আমাদের দেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের বিভিন্ন দিকগুলি কী কী?


বিবেকানন্দের শিক্ষাভাবনা বিবৃত করে।

অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের মানব গড়ার শিক্ষা- সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে।


জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের পরিকল্পনা কী ছিল তা লেখাে। নারীশিক্ষা ও শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?