জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের পরিকল্পনা কী ছিল তা লেখাে। নারীশিক্ষা ও শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?

জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ

জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ বলেছিলেন— “ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ এবং কর্মশক্তিকে শুধুমাত্র অধ্যয়ন ও আত্মােন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না, বরং প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে সমাজসেবার মহান উদ্দেশ্যে উদ্বুদ্ধ ও নিয়ােজিত করতে হবে।" বিবেকানন্দের মতে, এই জাতীয় সেবাধর্ম ভারতীয়দের মধ্যে এক জাতীয়তাবােধ জাগ্রত করবে। তাই ভারতীয়দের জাতীয় শিক্ষার জন্য তিনি নিম্নলিখিত পরিকল্পনাগুলির কথা উল্লেখ করেন


(১) আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ: শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি ব্যক্তির আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।


(২) আত্মচেতনার বিকাশ: এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে আত্মচেতনার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ করাতে হবে।


(৩) নৈতিক চেতনার বিকাশ: ধর্মীয় শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।


(৪) গণশিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান: গণশিক্ষার ওপর গুরুত্ব‌ দিতে হবে। শিক্ষার কার্যক্রমকে একদিকে যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে হবে, অন্যদিকে তা যাতে সমাজের চাহিদাপূরণে সক্ষম হয় সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।


(৫) সহানুভূতিশীলতার বিকাশ: শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহানুভূতিশীল করে তুলতে হবে।


(৬) দেশাত্মবােধের বিকাশ: প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে দেশাত্মবােধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।


(৭) স্বনির্ভরতা গঠন: প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।


(৮) সক্রিয়তার নীতি অনুসরণ: শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্রিয়তার নীতি অনুসরণের ব্যবস্থা করতে হবে।


(৯) কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন: কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।


(১০) দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ: দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পরিচিত হওয়ার সুযােগ করে দিতে হবে।


ওপরের বিষয়গুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত সময়ােপযােগী এবং বাস্তবসম্মত।


নারীশিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের মত


বিবেকানন্দ স্ত্রীশিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বামীজি মনে করতেন, পুরুষ যদি ব্রহ্মজ্ঞ হতে পারে, তাহলে মেয়েরা হতে পারবে না কেন। তাই তিনি মেয়েদের জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠশালা খুলে তাদের মানুষ করতে বলেছেন।তিনি বলেছেন যে, মেয়েরা মানুষ হলে তবেই তাদের সন্তানসন্ততি দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। তাই তিনি নারীশিক্ষা বিকাশের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। সেই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, নারীদের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশের জন্য মঠ গড়ে তুলতে হবে এবং মঠের সঙ্গে থাকবে নারীশিক্ষার জন্য বিশেষ বিদ্যালয়। নারীশিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যাকরণ, রান্না, সেলাই, মাতৃত্বের দায়িত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন পাঠ, সাংসারিক কাজকর্ম সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় অন্যান্য বিষয় নারীদের এই সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানে সহায়তা করবেন ব্রহ্মচারিণীরা। বিবেকানন্দ মনে করতেন, জাতি গঠনের জন্য সুশিক্ষিতা ও সুমাতা বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়।


শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে বিবেকানন্দের মত


বিবেকানন্দ ভারতীয় শিক্ষার উন্নতিকল্পে যে পাঠক্রম নির্ধারণের কথা বলেছেন তাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়


  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা ও নৈতিকতা বিকাশের জন্য ধর্মশিক্ষা।

  • ব্যাকরণের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে মাতৃভাষা অধ্যয়ন।

  • বিদেশিদের সঙ্গে সংযােগসাধনের জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষা।

  • সারা ভারতের জনগণের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের জন্য হিন্দি ভাষা শিক্ষা।

  • ভারতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের জন্য সংস্কৃত ভাষা অধ্যয়ন।

  • গীতা-উপনিষদ থেকে পাঠ।

  • মহাপুরুষদের বাণী পাঠ।

  • সংগীতচর্চা এবং চিত্রাঙ্কন।

  • বিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে পাঠদান।

  • ভারত এবং ভারতবাসীকে জানার জন্য ইতিহাস ও ভূগােল। বিষয়ে পাঠ।


শিক্ষার এই সাধারণ পাঠক্রম ছাড়াও শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের জন্য সাহিত্য আলােচনা, ভ্রমণ, বাগান তৈরি, উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়ােজন প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির কথা বলা হয়। এ ছাড়াও বিবেকানন্দ শিক্ষার্থীদের সাবলম্বী করে তােলার জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমুখী শিক্ষা প্রসঙ্গেও অভিমত ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের রুচি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তি বা কারিগরি শিক্ষায় অংশ নিতে পারে—সে ব্যবস্থা করার কথাও তিনি বলেন।


নারীশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা ও বাস্তবসম্মত পাঠক্রম সম্পর্কে বিবেকানন্দের দূরদৃষ্টি ভারতবর্ষের শিক্ষার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে।


রামমােহনের শিক্ষাচিন্তা কীরূপ ছিল তা লেখাে। পত্রপত্রিকা ও সংবাদপত্র প্রকাশনায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তাঁর অবদান লেখাে।


প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান কী? এই প্রসঙ্গে তাঁর বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।


উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা নবজাগরণে বিদ্যাসাগরের বহুমুখী অবদান বিস্তারিতভাবে লেখাে।


স্ত্রীশিক্ষা প্রসার, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো। সংস্কৃত শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?


শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান আলােচনা করো।

অথবা, শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে তাঁর শিক্ষাচিন্তার প্রয়ােগ করেন?


আমাদের দেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের বিভিন্ন দিকগুলি কী কী?


বিবেকানন্দের শিক্ষাভাবনা বিবৃত করে।

অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের মানব গড়ার শিক্ষা- সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে।