স্বামী বিবেকানন্দের মানব গড়ার শিক্ষা- সংক্রান্ত ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে । স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষাচিন্তা বিষয়ে আলােচনা করাে।

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা-সংক্রান্ত ধারণা সম্বন্ধে আলােচনা করাে।


বিবেকানন্দের শিক্ষাভাবনা

ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি সারাজীবন ভারতবাসীর মুক্তির মহান আদর্শ প্রচার করে গেছেন। সমগ্র দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করার জন্য তিনি ছিলেন সচেষ্ট। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। দার্শনিক হিসেবে তিনি ভাববাদী হলেও তাঁর শিক্ষাদর্শ শুধুমাত্র অতীন্দ্রিয় জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শিক্ষার বাস্তব দিককে বিশেষ পুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষাচিন্তা, শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষাপরিকল্পনা নীচে আলােচনা করা হল一


(১) শিক্ষার সংজ্ঞা: বিবেকানন্দ শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন “Education is the manifestation of the perfection already in man” অর্থাৎ ব্যক্তি-মানুষের মধ্যে অবস্থিত মহত্বের প্রকাশই হল শিক্ষা। প্রচলিত পুথিগত শিক্ষাব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতাকে উপলদ্ধি করে তিনি প্রকৃত মানুষ তৈরির শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।


(২) শিক্ষার লক্ষ্য: বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হল—

  • শিক্ষার্থীর মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তােলা।

  • শিক্ষার্থীর চরিত্রগঠনে সহায়তা করা।

  • শিক্ষার্থীর মধ্যে শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে তােলা।

  • শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি করা।

  • প্রকৃতির হিতকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।

  • আবাসিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের যৌথ জীবনযাপনে সহায়তা করা।

  • শিক্ষার্থীদের সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করা।


এক্ষেত্রে তিনি যে বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতেন, সেগুলি হল মনুষ্যত্বের বিকাশসাধন ও চরিত্র গঠন, শিক্ষার্থীর নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্নতিসাধন এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়সাধন।


(৩) পাঠক্রম: বিবেকানন্দ পাঠক্রম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলােচনা না করলেও তার বিভিন্ন রচনায় দেখা যায় যে, তিনি বিভিন্ন ভাষাশিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান, ভারতবর্ষকে জানার জন্য ইতিহাস ও ভূগােল, গীতা ও উপনিষদ পাঠ, সংগীত, চিত্রাঙ্কন, শরীরচর্চা ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।


(৪) শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা: স্বামী বিবেকানন্দ শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষানীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, শিক্ষায় শিশুদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শিক্ষাদানের পদ্ধতি হিসেবে তিনি মনােযােগ, একাগ্রতা এবং ধ্যানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তিনি মনে করতেন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন না। শিক্ষার্থী নিজেই শেখে। শিক্ষক তাকে কিছুটা সাহায্য করেন মাত্র।


(৫) মানবসেবা: মানবসেবা এবং আত্মার মুক্তি ছিল বিবেকানন্দের জীবনের আদর্শ। তিনি ধর্মের সঙ্গে শিক্ষার সংযােগকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বিবেকানন্দের কাছে ধর্ম ছিল মানবতাবাদ, মানুষের প্রতি ভালােবাসা। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনায় মানুষকে সবকিছুর থেকে বেশি মর্যাদা দিতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন—“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।


(৬) গণশিক্ষা: গণশিক্ষার জন্য তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগােল, বিজ্ঞান এবং সাধারণজ্ঞান পঠনপাঠনের ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে লােকসংস্কৃতির বাহন হবে কবিগান, কীর্তন, যাত্রা প্রভৃতি। স্বামীজি যথার্থই মনে করতেন, জনশিক্ষা প্রসারের ফলে এক নতুন ভারত জন্ম নিক।


(৭) স্ত্রীশিক্ষা: স্বামী বিবেকানন্দ নারীশিক্ষার জন্য নারীমঠ এবং মঠের সঙ্গে শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। এইসব শিক্ষালয়ে তিনি ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য, ব্যাকরণ, রান্না, সেলাই, সন্তান প্রতিপালন, সাংসারিক কাজকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের কথা বলেন। তিনি বলেছেন, মেয়েরা মানুষ হলে তবে ভবিষ্যতে তাদের সন্তান-সন্ততি দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।


(৮) কারিগরি শিক্ষা: কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে স্বামীজির বক্তব্য হল, এই শিক্ষার বিকাশ ঘটলে ছাত্ররা কেবল চাকরির খোঁজে ছুটে বেড়াবে না। বরং নিজেরাই নানা ধরনের হস্তশিল্প উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তােলার জন্য তিনি বৃত্তিমুখী শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেন। বিবেকানন্দ ভারতবাসীর শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে যেসব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন, তার জন্য আজও তিনি ভারতবাসীর কাছে 'দেশীয় শিক্ষাচিন্তার জনক’।


সমাজসংস্কার ও শিক্ষাসংস্কারে রামমােহনের অবদান আলােচনা করাে।


রামমােহনের শিক্ষাচিন্তা কীরূপ ছিল তা লেখাে। পত্রপত্রিকা ও সংবাদপত্র প্রকাশনায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তাঁর অবদান লেখাে।


প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান কী? এই প্রসঙ্গে তাঁর বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।


উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা নবজাগরণে বিদ্যাসাগরের বহুমুখী অবদান বিস্তারিতভাবে লেখাে।


স্ত্রীশিক্ষা প্রসার, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো। সংস্কৃত শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?


শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান আলােচনা করো।

অথবা, শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে তাঁর শিক্ষাচিন্তার প্রয়ােগ করেন?


আমাদের দেশের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা সংক্ষেপে উল্লেখ করাে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের বিভিন্ন দিকগুলি কী কী?