শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে তাঁর শিক্ষাচিন্তার প্রয়ােগ করেন?

শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান

শিক্ষাপ্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলতেন— “শিক্ষা হল ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশসাধন, এককথায় মনুষ্যত্বের বিকাশসাধন।” তাই, শিক্ষার তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক উভয়দিক সম্পর্কেই রবীন্দ্রনাথ সমান যত্নশীল ছিলেন। শিক্ষার তত্ত্বগত দিকগুলির বাস্তব রূপায়ণের জন্য তিনি শান্তিনিকেতনের ছায়ান্নিঃধ পরিবেশে পল্লি-প্রকৃতির কোলে ব্রম্মচর্যাশ্রম নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।


রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শের মূলকথা হল মানবপ্রেম, সৌন্দর্যানুভূতি, স্বাধীনতা এবং প্রকৃতি। তাই তিনি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে ছেলেমেয়েদের মুক্তি দেওয়ার জন্য শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রান্তরে পল্লি প্রকৃতির কোলে বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তিনি ছেলেমেয়েদের মনের সঙ্গে বিশ্বপ্রকৃতির একটা নিবিড় যােগাযােগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন।


তত্ত্বগত দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার বিভিন্ন দিককে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নীচে আলােচনা করা হল


(১) শিক্ষার লক্ষ্য: রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার লক্ষ্য হল

  • শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশসাধন।

  • প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সম্পর্ক স্থাপন।

  • শিক্ষার্থীর মধ্যে সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটানাে।

  • শিক্ষার্থীকে চিরন্তন পরমসত্তার উপলব্ধিতে সহায়তা করা।


(২) পাঠক্রম: রবীন্দ্রনাথের মতে, পাঠক্রম হবে সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।তাই তিনি পাঠক্রমের মধ্যে ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সংগীত প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। তাঁর পাঠক্রমে স্বদেশের ইতিহাস একটি বড়াে স্থান অধিকার করেছে। পাঠক্রমে শিল্পকলা, নৃত্যকলা ইত্যাদির পাশাপাশি পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষাকেও উপেক্ষা করা হয়নি। এককথায় প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যা যা প্রয়ােজন তার সব কিছুই তিনি পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন।


(৩) শিক্ষা পদ্ধতি: রবীন্দ্রনাথ পাঠদানের ক্ষেত্রে ভ্রমণ, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, গল্পের ছলে পাঠদান এবং প্রত্যক্ষ কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেন।


(৪) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক: রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষক হবেন একজন প্রাণবন্ত মানুষ। শিশুর মতাে সারল্য নিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের মনােরাজ্যে বিচরণ করবেন। শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীকে স্নেহ করবেন এবং যত্ন সহকারে পাঠদান করবেন, শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এককথায় একটি আনন্দময় পরিবেশে পারস্পরিক মত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শিক্ষার কাজ এগিয়ে চলবে। প্রাচীন শিক্ষায় গুরুকুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে তিনি আদর্শ বলে মনে করতেন।


(৫) শিক্ষার মাধ্যম: রবীন্দ্রনাথ শিক্ষায় মাতৃভাষাকে মাতৃদুধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন।


(৬) শৃঙ্খলা: রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, "শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দিলে তারা আপনা থেকেই শৃঙ্খলিত হয়ে পড়বে”। তবে এ কথাও ঠিক স্বাধীনতা কখনােই স্বেচ্ছাচারে পরিণত হবে না।


(৭) জনশিক্ষা: জনশিক্ষা বিকাশের জন্য রবীন্দ্রনাথ 1922 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের কাছে সুরুল গ্রামে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পল্লি উন্নয়নের কাজ শুরু করেছিলেন। গ্রামােন্নয়ন বিষয়টিকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষাপরিকল্পনার মধ্যে রেখেছিলেন। শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাদানের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেই অঞ্চলের নিকটবর্তী গ্রামবাসীর কাছে শিক্ষার সুফল পৌঁছে দেওয়া। রবীন্দ্রনাথ 1924 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের কাছে শ্রীনিকেতনে শিক্ষাসত্র নামে একটি গ্রামীণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।


ব্যাবহারিক দিক থেকে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য রবীন্দ্রনাথ কর্মমুখী শিক্ষা, গ্রামােন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি গ্রামীণ বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে কৃষি, পশুপালন, হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি হাতেকলমে শিক্ষাদানের বিষয়টিকে শ্রীনিকেতনের শিক্ষায় প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, অর্থনৈতিক বিকাশ না ঘটলে, শুধু বৌদ্ধিক বিকাশের দ্বারা মানুষের মঙ্গল সম্ভব নয়। তাই তিনি সংস্কৃতির চর্চার সঙ্গে শ্রীনিকেতনে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে তত্ত্বগত এবং ব্যাবহারিক উভয় দিকের সমান গুরুত্ব রয়েছে।


ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, কবিগুরু তাঁর শিক্ষাচিন্তা বা শিক্ষাদর্শ শুধু তাত্ত্বিক দিক থেকেই আলােচনা করেননি, তার ব্যাবহারিক রূপও আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন| তাই রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা সর্বাঙ্গসুন্দর বললে অতিশয়ােক্তি হয় না।


শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশসমূহ উল্লেখ করাে। সার্জেন্ট পরিকল্পনার মূল্যায়ন করাে।


ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসে রাজা রামমােহন রায় আধুনিকতার অগ্রদূত- উক্তিটি আলােচনা করাে। 

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান সংক্ষিপ্তভাবে আলােচনা করাে।


সমাজসংস্কার ও শিক্ষাসংস্কারে রামমােহনের অবদান আলােচনা করাে।


রামমােহনের শিক্ষাচিন্তা কীরূপ ছিল তা লেখাে। পত্রপত্রিকা ও সংবাদপত্র প্রকাশনায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তাঁর অবদান লেখাে।


প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান কী? এই প্রসঙ্গে তাঁর বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।


উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা নবজাগরণে বিদ্যাসাগরের বহুমুখী অবদান বিস্তারিতভাবে লেখাে।


স্ত্রীশিক্ষা প্রসার, বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো। সংস্কৃত শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর অভিমত কী ছিল?