প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান কী? এই প্রসঙ্গে তাঁর বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।

প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান অবিস্মরণীয়। বিদ্যাসাগরের কালে প্রাথমিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত অবহেলিত। তিনি দেশজ বিদ্যালয়গুলির শােচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করে, সেগুলির সংস্কারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।


বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের জন্য যেসব সুপারিশ করেছিলেন, তার মূল বিষয়গুলি হল一


(১) শিক্ষার মাধ্যম: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।


(২) পাঠ্যবিষয়: প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পড়াশােনার জন্য বিদ্যাসাগর সাধারণ গাণিতিক হিসাব, ভূগোল, ইতিহাস, জীবনবৃত্তান্ত, জ্যামিতি, প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, প্রারম্ভিক লেখাপড়া ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ করেন।


(৩) মডেল স্কুল স্থাপন: বিদ্যাসাগর প্রত্যেকটি জেলায় তিন থেকে পাঁচ শ্রেণিযুক্ত মডেল স্কুল স্থাপনের সুপারিশ করেন। তিনি ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একজন প্রধানশিক্ষক এবং দুজন সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত করার কথা বলেন।


(৪) পরিদর্শন ব্যবস্থা: বিদ্যালয়গুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুটি জেলা প্রতি একজন করে পরিদর্শক নিয়ােগ করার সুপারিশ করেন তিনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ অবৈতনিকভাবে পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।


(৫) প্রশাসনিক ব্যবস্থা: বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের‌ ক্ষেত্রে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য বিদ্যাসাগর সার্কেল প্রথা চালু করার সুপারিশ করেন।


(৬) শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা: বিদ্যাসাগর লক্ষ করেছিলেন, দেশে ভালাে শিক্ষকের খুবই অভাব। সেই কারণে নর্মাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।


বিদ্যাসাগরের এই সমস্ত সুপারিশ বড়ােলাট লর্ড ডালহৌসি এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর মি. হ্যালিডে অনুমােদন করেন। বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া ও মেদিনীপুর জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি থেকে কিছুটা দূরে মডেল স্কুলগুলি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া এবং মেদিনীপুর জেলার প্রত্যেকটিতে 5টি করে মােট 20টি মডেল স্কুল খােলা হয়।


প্রাথমিক শিক্ষায় বর্ণপরিচয় পুস্তকটির গুরুত্ব


বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের জন্য অনেকগুলি পুস্তক রচনা করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য হল বর্গপরিচয়। বাংলা ভাষা বলা ও লেখার পদ্ধতিপ্রকরণ সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরের সুচিন্ডার ফলই হল 'বর্ণপরিচয়। বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় 1855 খ্রিস্টাব্দের 13 এপ্রিল এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় 1855 খ্রিস্টাব্দের 14 জুন। ধ্বনিমাধুর্য রেখে যথার্থ উচ্চারণ শেখানো এবং বাংলা ভাষার সরলীকরণের উদ্দেশ্যেই তিনি প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেন কয়েকটি অপ্রয়ােজনীয় অংশ বাদ দিয়ে তিনি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহার অনেক সরল করেন। দ্বিতীয় ভাগে বিদ্যাসাগর শিখিয়েছেন মূল সংযুক্ত বর্ণ, 'র' ফলা, মিশ্র সংযােগ (ম, র, ল, ব, গ, ন, স)-এর ব্যবহার।


বিদ্যাসাগর এদেশের প্রাথমিক শিক্ষার দুর্দশার কথা উপলব্ধি করে একদিকে যেমন কর্তৃপক্ষের কাছে গণশিক্ষার প্রসার, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থা প্রণয়ন প্রভৃতির জন্য সুপারিশ করেন, অন্যদিকে, বর্ণপরিচয়-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাথমিক স্তরের শিশুদের উপযােগী পাঠ্যপুস্তক রচনা করেও প্রাথমিক শিক্ষাকে গণশিক্ষার রূপ দিতে চেষ্টা করেন।


প্রাক্‌প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্জেন্ট পরিকল্পনার সুপারিশগুলি লেখাে।


শিক্ষক-শিক্ষণ প্রসঙ্গে এবং সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থার বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশ কী ছিল?


শারীরশিক্ষা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা বিষয়ে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।


শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে সার্জেন্ট কমিটির সুপারিশসমূহ উল্লেখ করাে। সার্জেন্ট পরিকল্পনার মূল্যায়ন করাে।


ভারতবর্ষের শিক্ষার ইতিহাসে রাজা রামমােহন রায় আধুনিকতার অগ্রদূত- উক্তিটি আলােচনা করাে। 

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান সংক্ষিপ্তভাবে আলােচনা করাে।


সমাজসংস্কার ও শিক্ষাসংস্কারে রামমােহনের অবদান আলােচনা করাে।


রামমােহনের শিক্ষাচিন্তা কীরূপ ছিল তা লেখাে। পত্রপত্রিকা ও সংবাদপত্র প্রকাশনায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে তাঁর অবদান লেখাে।