অনেক সমালোচক মনে করেন যে, 'ছিন্নপত্র' আসলে পত্রের ছদ্মবেশে রচিত ডায়ারি- এ সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করো।

'ছিন্নপত্র’কে চিঠি না বলে ডায়ারিও বলা যেতে পারে—এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তোমার অভিমত প্রকাশ করো।

‘ছিন্নপত্র’ বা ‘ছিন্নপত্রাবলী’-তে সংকলিত পত্রগুলি ১৮৮৭ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে স্নেহের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরার উদ্দেশে রচিত। জমিদারি পরিদর্শন ও পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে এ সময় রবীন্দ্রনাথকে সুদীর্ঘকাল পূর্ববাংলার নদীমাতৃক পল্লিতে পল্লিতে অতিবাহিত করতে হয়েছে। বিরাহিমপুর পরগনার শিলাইদহ, ইসব্সাহী পরগনার সাজাদপুর, কালীগ্রাম পরগনার পতিসর ছাড়াও ওড়িশার জমিদারি দেখাশোনার কার্যভারও এ সময় রবীন্দ্রনাথের উপর ন্যস্ত হয়। ‘আশমানদারি’র পরিবর্তে ‘জমিদারি'-র এই স্বভাববিরুদ্ধ দায়ও রবীন্দ্র জীবনে ব্যর্থ হয়নি। বরং প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি এযাবৎকাল যে রোমান্টিক ভাবালুতায় তিনি আচ্ছন্ন ছিলেন, নদীবিধৌত বাংলার নদী-বিল-খাল-মাঠ-কুঠিবাড়িতে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করে সেই প্রকৃতি চেতনা ও মানব প্রীতি অনেকখানি পরিণত ও বাস্তবনিষ্ঠ হতে পেরেছিল তাঁর জীবনের এই পর্বেই।


এই পল্লিবাংলায় অবস্থানকালে অবাধ মুক্ত প্রকৃতির বিচিত্র রূপ ও অসামান্য সৌন্দর্য যেমন রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক কবিপ্রাণকে বিমুগ্ধ করেছে, তেমনি নদী তীরবর্তী গ্রামীণ মানুষের সরল-সহজ জীবনযাত্রা-তাদের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ-প্রীতি-বিক্ষোভের প্রাত্যহিক তরঙ্গগুলিও রবীন্দ্রনাথের হৃদয় তটকে আলোড়িত করেছে অপরিসীম মায়ায়, আত্যস্তিক ভালোবাসায়। প্রকৃতির রূপ-সন্দর্শনে বিক্ষুব্ধপ্রাণ কবি-আত্মা কখনও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপের গভীর নিগূঢ় মহাজাগতিক তত্ত্বের রহস্যলোকে অবগাহন করেছেন, কখনও মানুষের ক্রমাগত প্রবাহ দর্শনের মধ্য দিয়ে পৌঁছোতে চেয়েছেন অনন্ত মানবজীবন-প্রবাহের ভাবনায়। আর এইসব অভিজ্ঞতা অনুভূতি-প্রতিক্রিয়া তা সে সামান্য হোক বা গভীর, মনোমুগ্ধকর হোক বা বিরক্তিজনক, ব্যক্তিগত হোক বা সাধারণ, চিত্রময় হোক বা চিন্তাময়, কৌতুককর হোক বা গম্ভীর—রবীন্দ্রনাথ অকপটে প্রকাশ করেছেন ইন্দিরাকে লেখা পত্রাবলিতে।


রবীন্দ্রনাথের অনিঃশেষ সাহিত্যকর্মের মতো তাঁর এই 'ছিন্নপত্রাবলী' বা অন্যান্য পত্রগুলিও স্বভাবতই রসিক পাঠকদের কাছে সাহিত্যকর্ম হিসাবে মর্যাদালাভ করেছে। কিন্তু সাহিত্য-সমালোচক যে-কোনো সৃষ্টিকে আরও গভীর মনন থেকে উন্মোচিত করতে চান, বিচার করতে চান সেই সৃষ্টি কর্মের আঙ্গিকগত যাথার্থ্যটিকেও। সাহিত্য সমালোচকের সেই নিবিড় দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রশ্ন ওঠে ‘ছিন্নপত্র’ বা ‘ছিন্নপত্রাবলী’-কে কি যথার্থ পত্রসাহিত্যের অন্তর্গত করা যায়, নাকি এটিকে ডায়ারি বলাই অধিকতর সংগত?


এই আঙ্গিকগত প্রশ্নটি বিচারের পূর্বে আবশ্যিকভাবেই পত্র এবং ডায়ারির স্বধর্ম বিষয়ে একটি পারস্পরিক তুলনা করা যেতে পারে। প্রথমত, পত্র এবং ডায়ারি—এই দুইটির মাধ্যমই আসলে রচয়িতার অন্তরঙ্গ জীবনকথা। তবে আত্মজীবনীর সঙ্গে এই দুই প্রকাশ মাধ্যমের প্রধান পার্থক্য অসম্পূর্ণতা ও অসংলগ্নতায়। আত্মজীবনীতে রচনাকার যেমন কালানুক্রমিকভাবে সুবিন্যস্ত পর্যায়ক্রমে পূর্ণ আত্ম-উন্মোচন ঘটান, পত্র বা ডায়ারি জাতীয় রচনায় সেই ধারাবাহিকতা এবং পরস্পর সংলগ্নতা না-ও থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, পত্র এবং ডায়ারি উভয়তই রচয়িতার অভিজ্ঞতা ও অনুভবসমূহের তাৎক্ষণিক প্রকাশ ঘটে। এই তাৎক্ষণিকতার কারণেই পত্র বা ডায়ারিতে আত্মবিশ্লেষণ বা অন্যকে বিশ্লেষণ, ঘটনা বা দৃশ্যের যে মূল্যায়ন রচয়িতা করেন, তা পরবর্তীক্ষেত্রে বা অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে যথার্থ বলে নাও প্রমাণিত হতে পারে। তৃতীয়ত, পত্র বা ডায়ারির ক্ষেত্রে রচয়িতার ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি, বৃহত্তর কোনো দর্শনভাবনা, তুচ্ছ বা মহৎ-লঘু বা গভীর যে-কোনো অনুভব অবলীলায় প্রকাশিত হতে পারে।


উভয় প্রকাশ-মাধ্যমের এই সাধারণ ধর্মগুলি বাদ দিলে উভয়ের পার্থক্যটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ডায়ারি রচয়িতার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ কিন্তু পত্রের অধিকার সম্পূর্ণত পত্রপ্রাপকের। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত বলেই ডায়ারি আসলে রচয়িতার স্বগতোক্তি, অপরদিকে পত্রলেখক এবং পত্রপ্রাপকের মানস-সংযোগেরই প্রকাশ্য পরিণাম হল পত্র। তৃতীয়ত, আত্ম-উন্মোচনের মাত্রার বিচারে, ডায়ারি একান্তই ব্যক্তিগত সম্পদ হওয়ায় যতখানি অকপট হতে পারে, পত্রের ক্ষেত্রে তা অন্যের কাছে আত্মউম্মোচন বলেই ততখানি অকপট নয়; বরং বলা যেতে পারে পত্র অনেকখানিই রচয়িতার স্ব-ইচ্ছানুযায়ী সম্পাদিত।


‘ছিন্নপত্র’-র অন্তর্গত চিঠিগুলি যেহেতু প্রশ্নাতীতভাবেই শ্রীশচন্দ্র ও ইন্দিরাকে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ প্রায় আট বছর ধরে, সেহেতু প্রাথমিকভাবে এগুলিকে 'পত্র' বা 'চিঠি' বলার ক্ষেত্রে সংশয়ের কোনো কারণ থাকতে পারে না। দার্জিলিং ভ্রমণ বা শিলাইদহ-সাজাদপুর-পতিসরে জমিদারি দেখাশোনা, কিংবা পুরীর সমুদ্র-দর্শন করতে গিয়ে প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনুভূতিগুলিকে বিস্তারিতভাবেই পরিবেশন করেছেন রবীন্দ্রনাথ এই চিঠিগুলিতে। আরও লক্ষণীয় রবীন্দ্রনাথ এই পর্বে যখন ইন্দিরার কাছাকাছি থেকেছেন, তখন স্বাভাবিক কারণেই চিঠি লেখার প্রয়োজনই হয়নি। দূরবর্তী প্রিয়জনের কাছে লিখিত আকারে মনোভাব প্রকাশের লক্ষণের কারণে 'ছিন্নপত্র' আঙ্গিকগত বিচারে পত্র-গোত্রীয়।


কিন্তু আমরা দেখেছি, নিজ সাহিত্য-প্রতিভা সম্পর্কে বা নিজের যে-কোনো রচনার মূল্য সম্পর্কে যৌবনাবধি রবীন্দ্রনাথ প্রখরভাবে সচেতন। প্রথমবার বিদেশ ভ্রমণকালে (১৮৭৮) তিনি বিলাতবাসের অভিজ্ঞতাগুলি যখন পত্রাকারে প্রেরণ করছিলেন এবং চিঠিগুলি ‘য়ুরোপপ্রবাসী কোন বঙ্গীয় যুবকের পত্র'— নামে ক্রমাগত ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছিল (পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় নাম হয় 'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র'), তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ আত্মসচেতন। পরবর্তীকালেও তাঁর প্রতিটি চিঠিই হয় তিনি নকল করিয়ে সংস্করণ করেছেন, নয়তো নিজে নকল রেখেছেন। প্রতিটি সাহিত্যসৃষ্টির মতো এই চিঠিগুলিরও সাধারণের মধ্যে প্রকাশযোগ্যতা সাহিত্যমূল্য সম্পর্কে তিনি পূর্ণ সচেতন ছিলেন। ‘ছিন্নপত্র’ সম্পর্কেও দেখি চিঠিগুলি রচনাকালেই তিনি ইন্দিরা দেবীকে একটি পত্রে পরবর্তীকালে পুরোনো সেইসব মুহূর্তগুলির রস সম্ভোগের জন্য চিঠিগুলি চেয়ে পাঠিয়েছেন— “আমাকে একবার তোর চিঠিগুলি দিস্-আমি কেবল ওর থেকে আমার সৌন্দর্যসভোগগুলো একটা খাতায় টুকে নেব—"


আমরা জানি, রবীন্দ্রনাথের এই অনুরোধ মতো ইন্দিরা দেবী চিঠিগুলির ব্যক্তিগত অংশগুলি বর্জন করে দুটি খাতায় নিজেই নকল করে রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পরে এই চিঠিগুলির মধ্য থেকে বর্জন সংযোজন সম্পাদন করে রবীন্দ্রনাথ ‘ছিন্নপত্র প্রকাশ করেন ১৩১৯ বঙ্গাব্দে (১৯২২ খ্রিস্টাব্দে)।


এই তথ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ছিন্নপত্র’ একটি সম্পাদিত গ্রন্থ মাত্র। চিঠির ব্যক্তিগত অংশ এখানে একবার ইন্দিরা দেবীরই হাতে সম্পাদিত। দ্বিতীয়বার সম্পাদিত স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের হাতে। সাধারণের বোধগম্য সৌন্দর্যসভোগের অংশগুলিই কেবলমাত্র ‘ছিন্নপত্র’তে প্রকাশিত। রবীন্দ্রনাথও ইন্দিরা দেবীকে লিখেছিলেন— “ওর মধ্যে যা-কিছু আমার ব্যক্তিগত জীবন-সংক্রান্ত সেটা তেমন বহুমূল্য নয়।”


—এবং এই বিবেচনা থেকেই চিঠিগুলিকে খণ্ডিত ও সম্পাদিত করে পাঠকের জন্য প্রকাশনা। অতএব অখণ্ড অসম্পাদিত চিঠির যে মূল্য, সম্পাদনার ফলে তার অনেকখানি হানি ঘটেছে সন্দেহ নেই। একাধিক চিঠিকে একটি চিঠিতে রূপান্তরিত করায় চিঠির তারিখগত বিভ্রান্তি, কোনো কোনো ব্যক্তি নামের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আদ্যক্ষরের ব্যবহার ইত্যাদি সম্পাদনা মূল চিঠিগুলির প্রাপ্তির স্বাদ গ্রহণ থেকে পাঠককে অনেকখানি বঞ্চিত করেছে, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ ‘ছিন্নপত্রাবলী' প্রকাশ করে রবীন্দ্র-সম্পাদনার চিহ্ন অনেকখানি মুছে ফেললেও ইন্দিরা দেবীর সম্পাদনাকে এড়াতে পারেননি। কেননা মূল চিঠিগুলি আজও উদ্ধার করা যায়নি।


অতএব পূর্ববঙ্গ পরিভ্রমণকালে প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা ও অনুভবের নির্বাচিত কিছু অংশ সাধারণকে গ্রন্থাকারে উপহার দেবার প্রবণতার ফলে ‘ছিন্নপত্র’ হয়ে উঠেছে অনেকটা ডায়ারিধর্মী। ব্যক্তিগত জীবনের উষ্ণতা ও লঘু বিষয়ের উপস্থাপনা সেই ডায়ারিকে কিছুটা জীবন্ত ও অন্তরঙ্গ করে তুলেছে মাত্র।


রবীন্দ্রনাথ ‘ছিন্নপত্র’ রচনাকালেই কি স্বয়ং এই পত্রাবলির ডায়ারিধর্মিতার বিষয়ে কিছুটা সচেতন ছিলেন? এই সন্দেহ আমাদের মনে জাগে ‘ছিন্নপত্র’-র ৮৫ সংখ্যক পত্রটি পড়ে— “এবারকার ডায়ারিটাতে ঠিক প্রকৃতির স্তব নয়—মন নামক একটা সৃষ্টিছাড়া চঞ্চল পদার্থ কোনো গতিকে আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করাতে কী রকম একটা উৎপাত হয়েছে তৎসম্বন্ধে আলোচনা করা গেছে।"


যদিও শ্রী প্রশান্ত কুমার পাল সঠিকভাবেই জানিয়েছেন যে, এই ‘ডায়ারি' আসলে তৎকালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত 'পঞ্চভূতের ডায়ারি'-র একটি প্রবন্ধ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য।


শিলাইদহ-সাজাদপুর-পতিসরের প্রকৃতিলীলা নিকেতনে দিনযাপন করতে করতে রবীন্দ্রনাথের মনে যে বিচিত্র ভাবের উদয় হত, সেগুলি যে পত্র বা ডায়ারি-যে-কোনো মাধ্যমেই প্রকাশযোগ্য—বিশেষত ডায়ারির মধ্যে তার সংকেতও রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন ‘ছিন্নপত্র'-র ৯২ সংখ্যক পত্রে— “এক-এক সময় মনে হয়, আমার মাথায় এমন অনেকগুলো ভাবের উদয় হয় যা ঠিক কবিতায় ব্যক্ত করবার যোগ্য নয়, সেগুলো ডায়ারি প্রভৃতি নানা আকারে প্রকাশ করে রেখে দেওয়া ভালো।”


এই লক্ষণগুলি বিচার করেই সম্ভবত রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ও মনে করেছেন যে ‘ছিন্নপত্র’ মূলত ডায়ারিধর্মী রচনাই— “যাহা দেখেন, যাহা ভাবেন, তাহাই লেখেন-অনেকটা ডায়ারির মতো-পত্রলেখাটা উপলক্ষ্য মাত্র।”


রবীন্দ্রজীবনীকার অন্যত্র বলেছেন— “মোট কথা ছিন্নপত্রের লেখাগুলিকে পত্র না বলে, বলা উচিত ডায়ারি, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও ভাবনার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ।”


‘ছিন্নপত্র’র চিঠিগুলিতে যে ‘পত্রলেখাটা উপলক্ষ্য মাত্র'—তার অন্তরঙ্গ একটি প্রমাণও আছে। ভালো চিঠির লক্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে পত্র-লেখক ও পত্র-প্রাপকের যে নিবিড় সংযোগের কথা রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বলেছেন, বলেছেন উভয়ের অস্তিত্বের প্রকাশের কথা, তা ‘ছিন্নপত্র’-তে আভাসিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন— “বায়রন মুরকে যে-সমস্ত চিঠিপত্র লিখছে তাতে কেবল বায়রনের স্বভাব প্রকাশ পায়নি, মুরের স্বভাবও প্রকাশ পেয়েছে।”


‘ছিন্নপত্র’র সাহিত্য মূল্যের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিয়েও বলতে হয় – “যে শোনে এবং যে বলে এই দুজনে মিলে তবে রচনা হয়”—রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং একথা বললেও ‘ছিন্নপত্র’ যাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল সেই ইন্দিরা দেবীর বিস্তৃত পরিচয়, তাঁর ব্যক্তিজীবন ও অন্তর্জীবন, তাঁর ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথের অনর্গল স্বগতোক্তির দুর্নিবার স্রোতে আড়াল হয়ে গেছে। বস্তুতই ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’ যেমন পত্র-নামাঙ্কিত হলেও ডায়ারিধর্মী, ‘ছিন্নপত্র ও সেই গোত্রীয়। ইন্দিরা দেবীকে চিঠি লেখার উপলক্ষ্যে এই রচনাগুলি পল্লি বাংলার সৌন্দর্যসম্ভোগের দিনলিপি মাত্র। ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’, ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়ারি’ ইত্যাদি যেমন ইউরোপ ভ্রমণের ডায়ারি ‘ছিন্নপত্র’ তেমনি রবীন্দ্রনাথের পূর্ববঙ্গ ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্নিত ডায়ারি।