পারম্পর্য রক্ষা করে শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলির আলোচনা করে কথা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তার কারণ নির্ণয় | ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র সম্পর্কে একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধ রচনা করো

বাংলা উপন্যাস সাহিত্য ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্রের অবদান ও কৃতিত্ব


বাংলা কথা সাহিত্যের মধ্য গগনে যখন বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, প্রভাত কুমার আপন ঐশ্বর্য্য গুণে বিরাজমান ঠিক সেই সময়ে নতুন কোন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বর আবির্ভাব অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল। কারণ সাহিত্যের পাঠক পাঠিকার সমগ্র মনপ্রাণ জুড়ে তখন বিরাজ করছিল এইসব লেখকগণ। তাদের মাঝে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নবীশের আগমন এবং অস্তিত্ব ঝাকিয়ে রাখা বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। তথাপি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল হয়ে যাত্রা শুরু করেন। ১৯০৩ সালে সর্বপ্রথম রচনা মন্দির ছোট গল্পটি প্রকাশ করে পাঠকদের মধ্যে প্রবল আলোড়ন তুললেন এবং লেখকের ভাগ্যে জুটে গেল কুণ্ডলীন পুরস্কার, শরৎচন্দ্রের সংশয় ছিল না জানি তার গল্প হয়তো পাঠকরা সশ্রদ্ধ চিত্তে গ্রহণ করবে না। তাই তাঁর দিদি অসিন্দা দেবী, ছদ্মনামে গল্পটি প্রকাশ করেন। শাপে বর হওয়ার মতো পরবর্তী সময়ে শরৎচন্দ্রের ভাগ্যে জুটে গেল শ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যকের সন্ন্যাস তার মন্দির গল্পটি প্রকাশের পর কেউ ভাবতেও পারেনি এই গল্প লেখক রবীন্দ্রনাথকেও জনপ্রিয়তায় ম্লান করে দিতে পারে। প্রশ্ন জাগে শরৎচন্দ্রের মধ্যে কি এমন ছিল? শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকের সম্মান তার জন্য বরাদ্দ হল। এর উত্তরে ড. শ্রীকুমার বাবুর কথা স্মরণ করা যেতে পারে—“বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে যে স্রোতোহীন, শুষ্কপ্রায় খাতের মধ্য দিয়া অলস মন্থর গতিতে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে চলিতেছিল, তিনি সেখানে বহি সমুদ্রের স্রোত বহাইয়া তাহার গতিবেগ বাড়াইয়া দিয়াছেন, নূতন ভাবের উত্তেজনায় তাহার মধ্যে নব জীবনের সঞ্চার করিয়াছেন।”


শরৎচন্দ্রের রচনাসমূহ :

শ্রীকুমার বাবুর বক্তব্যের সারমর্ম নির্ণয় করতে আমরা শরৎচন্দ্রের বিপুল উপন্যাস সম্ভার সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে নিমগ্ন হবে। শরৎচন্দ্রের সমগ্র উপন্যাস গুলিকে আলোচনার সুবিধার্থে মোটামুটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। যে বিভাগগুলি উপন্যাসের বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্ণয় করা, যেমন—


১। শরৎচন্দ্রের প্রেমবর্জিত পারিবারিক বিরোধমূলক উপন্যাস :

এই পর্বের অন্তর্গত যে সমস্ত গল্পগুলি আছে, তা হল বিন্দুর ছেলে (১৯১৪), রামের সুমতি (১৯১৪), মেজদিদি (১৯১৫), মামলার ফল (১৯২০), একাদশীর বৈরাগী (১৯১৮), নিষ্কৃতি (১৯১৭), হরিলক্ষ্মী (১৯১৬), অভাগীর স্বর্গ / মহেশ (১৯২৬) পরেশ (১৯৩৪) বৈকুণ্ঠের উইল (১৯১৬), পণ্ডিতমশাই (১৯১৪), এই পর্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, এছাড়া কাশীনাথ, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, পরিণীতা, বড়দিদি, বিরাজ বৌ, স্বামী, নামক প্রভৃতি গল্পে বাঙালী পরিবারে ছোট্ট ছোট্ট ঘাত প্রতিঘাত বিরোধের কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। এই সকল গল্পগুলি যেমন একেবারে প্রেম বর্জিত হয়ে পারস্পরিক বিরোধের মধ্য দিয়ে ঘটনা পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছে আবার কতগুলিতে যে প্রেমের চিত্র ফুটে উঠেছে তা মূলত সাধারণ ও সামাজিক বিধিনিষেধের দ্বারা মর্যাদা শাসিত। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়—“প্রেমের যে দুর্দমনীয় প্রভাব, সমাজ বিধ্বংসী শক্তির মূর্তি শরৎচন্দ্রের নামের সহিত সংশ্লিষ্ট হইয়া পড়িয়াছে, তাহার দর্শন ইহাদের মধ্যে মিলে না। এইগুলির জন্যই শরৎচন্দ্র উপন্যাস সাহিত্যের পূর্ব ইতিহাসের সহিত সম্পর্কান্বিত হইয়াছেন।"


২। শরৎচন্দ্রের সমাজবিধির প্রাধান্য চিহ্নিত দাম্পত্য প্রেম ও বিরোধ কাহিনী:

নরনারীর প্রেম সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের ছিল আজন্মের সহানুভূতি ও অন্তর্দৃষ্টি। তাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হলেও সামাজিক অনুমোদন না মিললেও, চিরদিনের সংস্কারকে অবহেলা ভরে দূরে সরিয়ে রেখে প্রেমের যে একটা নৈসর্গিক মহত্ব আছে তার স্বরূপ উদঘাটন করাই ছিল এই পর্বের গল্পগুলির প্রধান লক্ষ্য। যেমন—শুভদা (মৃত্যুর পর প্রকাশিত ১৮৯৮), মন্দির (১৯০৩), বোঝা (১৯১৭), অনুপমার প্রেম (১৯১৭), আলো ও ছায়া (১৯১৭), বড়দিদি (১৯১৩), চন্দ্রনাথ (১৯১৬), পরিণীতা (১৯২৪), স্বামী (১৯১৮), কাশীনাথ (১৯১৭), দর্পচূর্ণ (১৯১৫), নববিধান, বিরাজ বৌ (১৯২৪), সতী (১৯৩৪) প্রভৃতি গল্প বা উপন্যাসগুলি ছিল নরনারীর দাম্পত্য বিরোধ ও মনোমালিন্যের কাহিনী। এছাড়া পথনির্দেশ (১৯১৪), ছবি (১৯২০), অনুরাধা (১৯৩৪) গল্প উপন্যাসে দাম্পত্য জীবন ও বিরোধের চিত্রগুলি খুব সুচারু রূপে ফুটে উঠেছে। যা পাঠক চিত্তকে সর্বদা মোহিত করে রাখে। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে—“তত্ব তর্ক নয়, মনস্তাত্ত্বিক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ নয়, সমাজতত্ত্বের আন্দোলনও নয়—শুধু দুর্ভাগ্য, দুঃখ ও দুর্ভাবনার দ্বারাই তারা পাঠকের এত কাছে এসে পড়ে।”


৩। শরৎচন্দ্রের সমাজ সমালোচনামূলক উপন্যাস:

রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'গোরা' উপন্যাসে সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রের উপর দৃষ্টিপাত করে তার বর্বরোচিত কুসংস্কারগুলি একে একে লিপিবদ্ধ করলেও যুক্তি তর্কের গণ্ডীকে অতিক্রম করে শাশ্বত চিরন্তন ভাবগভীরতার দ্বারা মানব জীবনকে তেমন প্রভাবিত করতে পারেননি। কিন্তু শরৎচন্দ্র তার এই পর্বের কয়েকটি উপন্যাসের দ্বারা শুধুমাত্র সমাজকে সমালোচনার দ্বারা তার স্বরূপকে উদ্ঘাটন করে ক্ষান্ত হননি সেই সঙ্গে মানবজীবনকে উদার ছত্রছায়া সামিল হতে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। মূলত তার তিনখানি উপন্যাস এই বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল অরক্ষণীয়া (১৯১৬), বামুনের মেয়ে (১৯২০) পল্লীসমাজ (১৯১৬), সমাজের নিষ্ঠুর অনুশাসন, কুপ্রথা কুলীন বংশের মিথ্যা গৌরব, সমাজের বিষাক্ত কটাক্ষে সহজ স্বাভাবিক স্বতঃস্ফুর্ত মানবজীবন কেমন ধীরে ধীরে সর্বনাশের অতল তলে তলিয়ে যায় তার সুন্দর সুন্দর ভাব বৈশিষ্ট্যগুলি এই উপন্যাসে ধরা পড়েছে। বিশেষ করে পল্লীসমাজের রমা রমেশের মধ্যে যে অস্বাভাবিক বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছিল তার দায়বদ্ধতা থেকে যায় কেবলমাত্র সমাজের যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক, শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে—“শরৎচন্দ্র, যে সমস্ত দুষ্টব্রণ প্রকৃতপক্ষে আমাদের সমাজদেহে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করিয়াছে, যাহাদের বিষ সমাজের অস্থিমজ্জায় দাঁড়াইয়া পড়িয়া তাহার স্বাস্থ্য ও শক্তির মূলচ্ছেদ করিয়াছে। সেই সমস্ত দুরপনেয় কলঙ্ক চিহ্নের প্রতি স্বীয় সমুদয় শক্তি প্রয়োগ করিয়াছেন।"


৪। শরৎচন্দ্রের পূর্বরাগ বিশিষ্ট মধুরান্তিক প্রেমের উপন্যাসঃ

পূর্বরাগ পর্যায়ের উপন্যাস শরৎচন্দ্র অতি অল্পই শিখেছেন। হয়তো এর মধ্যে যে চিরন্তন রূপটি বর্তমান শরৎচন্দ্র তা কখনো ভালো মনেই নেননি। আর যে ব্যক্তিটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সৃষ্টি হওয়া বিষাক্ত ক্ষতের প্রতি সর্বদা অঙ্গুলি নির্দেশ করতে ব্যাপৃত তার নিকট বিশুদ্ধ প্রেমের চিত্র বড়ো অস্বাভাবিক। তবুও মাত্র দু'খানি উপন্যাসের মধ্যে পূর্বরাগের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। যেমন—দেনাপাওনা (১৯২৩), দত্তা (১৯১৮), দেনাপাওনায় ষোড়শী জীবনানন্দের মধ্যে অতিত স্মৃতি ।ছনে ফেলে নতুনভাবে মিলিত হওয়ার দ্বারাই সূচিত হয়েছে পূর্বরাগের। আর দত্তা'তে নরেশ ও বিজয়ার ভালোবাসা ও পরে বিবাহের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে সহজ ও নির্দোষ প্রেমের সর্বাঙ্গসুন্দর চিত্র।


৫। শরৎচন্দ্রের নিষিদ্ধ সমাজ বিরোধীপ্রেম:

এই প্রসঙ্গে শ্রীকুমার বাবুর কথা স্মরণ করা আবশ্যক- “নিষিদ্ধ, সমাজ বিগর্হিত প্রেমের বিশ্লেষণে আমাদের সামাজিক রীতি নীতি ও বিরাগত সংস্কারগুলির তীব্র তীক্ষ্ণ সমালোচনায় স্ত্রী-পুরুষের পরস্পর সম্পর্কের নির্ভীক পুনর্বিচারে তিনি যে সাহসিকতার, যে অকুণ্ঠিত সহানুভূতির ও উদার মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়াছেন, তাহাতে তিনি বাঙালীর মনের সঙ্কীর্ণ গণ্ডী বহুদুর ছাড়াইয়া অতি আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের সহি আত্মীয়তা স্থাপন করিয়াছেন।” অর্থাৎ এই পর্বের উপন্যাস রচনায় শরৎচন্দ্রের যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার – বিলাসী (১৯২০) চরিত্রহীন (১৯১৭), গৃহদাহ (১৯২০), আঁধারে আলো প্রভৃতি এই পর্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন, এছাড়া শ্রীকান্ত (১ম ১৯১৭, ২য়-১৯৭৮, ৩য়-১৯২৭, ৪র্থ-১৯৩৩) যা শরৎচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ রচনা রূপে পরিগণিত, তার মূল কাহিনী ধারা মূলত এই পর্বে অন্তর্গত। বিজলীবাঈ বিলাসী, সাবিত্রী, কিরণময়ী, অচলা, রাজলক্ষ্মী অভয়া, কমললতা প্রভৃতি নারী চরিত্রের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে যে স্বরূপটি ধরা পড়ে তা মূলত সমাজ নিষিদ্ধ প্রেমের অঙ্গীভূত বিষয়।


৬। শরৎচন্দ্রের মতবাদ প্রধান উপন্যাস:

কেবলমাত্র একটা বিশিষ্ট মতবাদ বা নীতিকে প্রতিষ্ঠার তাগিদে শরৎচন্দ্র কতকগুলি উপন্যাস রচনা করেন। যার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় যুক্তি তর্কের দ্বারা প্রচলিত অসার ভাব ধারাকে নস্যাৎ করে একটা শাশ্বত নীতি সিদ্ধ মতবাদকে প্রতিষ্ঠা, যেমন— শেষ প্রশ্ন (১৯১৩)-এর প্রধান নারী চরিত্র কমল-এর মুখ দিয়ে শরৎচন্দ্র নারীজীবনের সে অন্তর মন্ত্রণাগুলি সংলাপের দ্বারা প্রকাশ করে দেন তা অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য, কিংবা বিপ্রদাস (১৩৪১) -এ বন্দনার মুখ দিয়ে নারী স্বাতন্ত্র্যবাদ প্রকাশ পেয়েছে তা এতদিন পরও সমান তালে প্রযুক্ত। এছাড়া শ্রীকান্তের তৃতীয় পর্বে ফুটে উঠেছে বাঙালী জীবনের অসার চিত্র। যা নতুন পথের সন্ধান দেয় বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে শেষ প্রশ্নে’ কমলের কার্যকলাপকে অভিনন্দন করে শ্রীকুমার বাবু বলেছেন––“কমল একটা বুদ্ধিগ্রাহ্য মতবাদের সুস্পষ্ট ও জোরালো অভিব্যক্তি মাত্র।”


৭। শরৎচন্দ্রের দেশপ্রেমমূলক রাজনৈতিক উপন্যাস:

সম্পূর্ণ নতুন বিষয় বস্তুকে অবলম্বন করে শরৎচন্দ্র কেবলমাত্র একখানি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। তা হল পথের দাবী (১৯২৬) যা এই পর্বের অন্তর্গত। যে ব্যক্তির সমাজের সুস্থ চেতনা উদ্দীপন করাই মূল লক্ষ্য ছিল, তাঁর পক্ষে পরাধীনতার গ্লানি ও দুর্ভাগ্য বোধে পীড়িত হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন ও বিপ্লববাদকে উপজীব্য করে কোন উপন্যাস রচনা করা সত্যই অভাবনীয় কল্পনা। তার উপর সব্যসাচীর মতো একটা চরিত্র যিনি ইংরাজ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে সর্বদা বিপ্লবী সংগঠনগুলিকে পরিচালনা করেন তাকে সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে শরৎচন্দ্রের আরো একটা প্রতিভার দিক উম্মোচিত হয়েছে। এছাড়া শরৎচন্দ্রের অন্তিম এবং অসম্পূর্ণ রচনা শেষের পরিচয় উপন্যাসটি যা রাধারানি দেবী সুনিপুণ হস্তে সমাপ্ত করেছিলেন, তার আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য ও নবতর পথের সন্ধান দেয়— শ্রীকুমার বাবুর ভাষায়—“চরিত্র স্খলনের পর নারীর সহজ মহিমা ও অন্তরের সুকুমার বৃত্তিসমূহ যে অক্ষুণ্ণ থাকে ও নিবিড় বেদনার পুটপাকে আরো নিগূঢ় করুণ রস ও মাধুর্যপূর্ণ হইয়া উঠে তাহার প্রতিপাদ্য বিষয়।”


এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যে বঙ্গ-উপন্যাস ক্ষেত্রে কতটা স্থান জুড়ে আছে তা নির্ণয় করতে কখনোই সম্ভবপর নয়। তবে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই—বঙ্কিমচন্দ্র যে নতুন পথ সৃষ্টি করে গেছেন তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের হস্তক্ষেপে উপন্যাস রচনার পথ কিছুটা মসৃণ হলেও শরৎচন্দ্রের অমৃত স্পর্শে তা যেন ‘মুক্তধারা'র ন্যায় সচল স্বাভাবিক হয়ে গেল। আবহমান কাল ধরে চলে আসা নারী চরিত্রের জড়তা ও নির্জীবতা সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্য ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করে এক স্বাধীন চিন্তা ও করুণ রসের বন্ধ দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আজও সেই দ্বার লীলাক্রমে উন্মত্ত, আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। সর্বোপরি, “শরৎচন্দ্রই যে আমাদের ভবিদ্যৎ উপন্যাসের গতি নিয়ামক হইবেন (শ্রীকুমার)” তা স্বীকার করতেই হবে।