কবি কাশীরাম দাস এবং তদ্রচিত মহাভারত কাব্যের পরিচয় দাও।

মহাভারতের পশ্চাদবর্তিতা:

রামায়ণ এবং মহাভারত—উভয়ই মহাকাব্য হওয়া সত্ত্বেও যে রামায়ণের তুলনায় বাঙলা ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ বিলম্বিত হয়েছিল, তার সঙ্গেও জাতীয় জীবনের উপযােগিতার সম্বন্ধ স্বীকার করে নিতে হয়। জাতীয় জীবনে উভয় কাব্যই সমান শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত তবে পরিবেশ এবং দেশ কালের পরিপ্রেক্ষিতে এদের মূল্যমানের পরিবর্তন ঘটা স্বাভাবিক। মনােভূমি উভয়কেই সমভাবে গ্রহণে উপযােগী বা প্রস্তুত না থাকাতেই রামায়ণের অন্ততঃ শতাধিক বৎসর পর মহাভারতের অনুবাদ-প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল। মহাভারতের কাহিনীগত বিস্তর জটিলতা এবং তত্তপাধান্যই সম্ভবত এজন্য দায়ী। বাঙালী জীবনে রামায়ণ ও মহাভারতের মৌলিক পার্থক্যের জন্যই মূল্যমানের পার্থক্য অনুভূত হয়েছিল।


রামায়ণে যে গার্হস্থ্য জীবনের চিত্র অঙ্কিত বা কাহিনী বিবৃত হয়েছে, বাঙালী জীবনের সঙ্গে তা অনেকাংশে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই বাঙালীর নবজাগরণ-মুহূর্তে প্রথমেই এর দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের উক্তিটি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয় : "রামায়ণের মহিমা রাম-রাবণের যুদ্ধকে আশ্রয় করিয়া নাই, সে যুদ্ধ ঘটনা রাম ও সীতার দাম্পত্য-প্রীতিকেই উজ্জ্বল করিয়া দেখাইবার উপলক্ষ্য মাত্র..আমাদের দেশে গার্হস্থ্য আশ্রমের যে অত্যন্ত উচ্চ স্থান ছিল, এই কাব্য তাহাই সপ্রমাণ করিতেছে।...গৃহাশ্রম ভারতবর্ষীয় আর্যসমাজের ভিত্তি। রামায়ণ সেই গৃহাশ্রমের কাব্য।"


মহাভারতের আকর্ষণ:

মহাভারতেও গৃহধর্মের চিত্র আছে, কিন্তু তাতে ক্ষাত্রধর্ম তথা বীরধর্মই প্রাধান্যলাভ করায় তা বাঙালীর প্রাণে তত সাড়া জাগাতে পারে নি। এই প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য তথ্যের অবতারণা করা চলে। সমসাময়িক হিন্দু এবং মুসলমান রাজন্যবর্গ মহাভারতের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে এর অনুবাদের উপযােগিতা উপলব্ধি করেছিলেন। ফলতঃ প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়, রাজদরবারের পৃষ্ঠপােষকতাই কবিদের মহাভারত অনুবাদে আগ্রহী করে তুলেছে। রামায়ণেও যুদ্ধকাহিনী রয়েছে, কিন্তু তা অপেক্ষাকৃত বর্বর যুগের। পক্ষান্তরে মহাভারতের যুদ্ধ যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তেমনি এতে কূটনীতির সঙ্গেও সম্পর্ক যুক্ত রয়েছে। সমসাময়িক রাজন্যবর্গ তাই মহাভারতের যুদ্ধে স্ব-কালের চিত্রই দেখতে পেতেন। অতএব, সাধারণ বাঙালী অপেক্ষাকৃত অনাগ্রহী হলেও রাজপুরুষদের তাগিদে মহাভারতের অনুবাদ শুরু হয় এবং প্রচারও স্বভাবতঃই কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিল। বাঙলা ভাষায় এই সমস্ত কারণেই মহাভারতের বিলম্বিত আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরবর্তীকালে অবশ্য অনুবাদের সংখ্যা খুবই বেড়ে গিয়েছিল।


মহাভারতের বৈশিষ্ট্য:

বাঙলার রাষ্ট্রীয় তথা সামাজিক অন্ধকার যুগের অবসানে জাতীয় জীবনে যখন জাগরণ-লক্ষণসমূহ প্রকট হয়ে উঠতে আরম্ভ করেছিল, তখনই বাঙালী মহৎ আদর্শের অনুসন্ধানে তাকিয়েছিল প্রাচীন সাহিত্যের দিকে। এই প্রয়ােজনেই বাঙলা ভাষায় রামায়ণ মহাভারত মহাকাব্য এবং ভাগবতাদি পুরাণের অনুবাদের প্রয়ােজন দেখা দিয়েছিল। রামায়ণ-অনুবাদ কালে কবিরা যেমন সমসাময়িক যুগধর্মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনুবাদে অনেকখানি স্বাধীনতা গ্রহণ করেছিলেন, মহাভারত অনুবাদ কালেও তারা একই নীতি অনুসরণ করেছিলেন। মহাভারত মূলতঃ যুদ্ধপ্রধান কাব্য, যুদ্ধের প্রতি বাঙালীর স্বাভাবিক অনীহা, অতএব বাঙালী মহাভারতকে আপন স্বভাবধর্মের অনুকূল করে নিয়েছিল এবং ভক্তিধর্মের স্রোতে তাকে চালিত করেছিল। ভক্তিবাদের দেশ বাঙলায় বীররস অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভক্তিরসে পরিণত হয়েছে। বেদব্যাস সেখানে বিস্তৃতভাবে যুদ্ধোদ্যোগ এবং তার ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন, বাঙালী কবি সেখানে তাকে সংক্ষিপ্ত আকারে নিয়ে এসেছেন। আবার কৃষ্ণপ্রসঙ্গ পেলেই বাঙালী কবি উচ্ছসিত। যখনই বাঙালী কবি সুযােগ পেয়েছেন, সেখানেই কৃষ্ণমাহাত্ম্য প্রচার করেছেন; সুযােগ না পেলে সুযােগ সৃষ্টি করেছেন।


বাঙলা মহাভারতের নিজস্বতা:

লক্ষ শ্লোকাত্মক ব্যাস-মহাভারতকে কোন কবিই আক্ষরিকভাবে অনুবাদের চেষ্টা করেন নি। বাঙলায় যুগধর্ম ও বাঙালীর স্বভাবধর্ম অনুসরণে বঙালী কবি গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে ব্যাস মহাভারতকে বাঙলা মহাভারতে পরিণত করেছেন। যুদ্ধ ও তথ্যপ্রধান রাজধর্মানুশাসন পর্ব, আপদ্ধর্ম পর্ব এবং অনুশাসন পর্ব, বাঙলা মহাভারতে বর্জিত হয়েছে। বহু কাহিনী উপকাহিনীযুক্ত মহাভারতের অনেক কাহিনীই বাঙলা মহাভারতে বর্জিত হয়েছে। আবার নতুন কাহিনীও অনেক যুক্ত হয়েছে। রুরু-প্রমদ্বরার প্রেম, বিদুলার তেজস্বিতা, উঞ্ছবৃত্তি ব্রাহ্মণের শক্তৃযজ্ঞ-আঁদি কাহিনীর বর্জন ঘটিয়ে নতুন যােগ করা হয়েছে—অকাল আম্র-বিবরণ, শ্রীবৎস-চিন্তা উপাখ্যান, জনা-প্রবীর কাহিনী, ভানুমতীর স্বয়ম্বর, লক্ষণার স্বয়ম্বর প্রভৃতি। অনুমান করা হয়, অধুনা লুপ্ত জৈমিনি-সংহিতা থেকে এই সমস্ত কাহিনী আহরণ করা হয়েছে। বাঙলা মহাভারতে ‘গীতা’র বৃহত্তম অংশ এবং 'অনুগীতা'র সমগ্র অংশই বাদ পড়েছে।


মৌলিক রচনা: বাঙলা মহাভারতে এ ছাড়াও বহু মহাভারতীয় কাহিনীর বিকৃতি সাধন করে দেশকালাে-পযােগী করে নেওয়া হয়েছে। ব্যাসােক্ত বিভিন্ন দেশনামের পরিবর্তে বহু নতুন দেশের নাম যুক্ত হয়েছে, বহু নতুন রাজার নামও এখানে পাওয়া যায়। বাঙলা মহাভারতের। পর্ব সংখ্যা অষ্টাদশ, কিন্তু নাম ও বিন্যাসের দিক থেকে মূলের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে। এই সমস্ত কারণে বাঙলা মহাভারতকে মূল মহাভারতের অনুবাদরূপে গ্রহণ করা যায় না, বস্তুতঃ এতে মৌলিক কাব্যের স্বাদই বর্তমান।


(ক) কবীন্দ্র পরমেশ্বর


কবি-পরিচয়: বাঙলা ভাষায় মহাভারত-অনুবাদকের সংখ্যা অপরিমিত। ডঃ সুকুমার সেন ৭৬ জন অনুবাদকের সন্ধান পেয়েছে। এর বাইরে যে আর কেউ নেই, এমন কথা বলা যায় না। এ ছাড়াও এমন কিছু কিছু কবির কথা কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যাদের অস্তিত্ব-বিষয়েই অপরেরা সন্দিহান। যাহােক, যে-সব কবির সম্বন্ধে নিশ্চত হওয়া চলে, তাদের মধ্যে সম্ভবতঃ কবীন্দ্র অথবা কবীন্দ্র পরমেশ্বরই প্রাচীনতম। কবির বিবরণী থেকে জানা যায় যে তিনি লস্কর পারগল খানের নির্দেশেই মহাভারত অনুবাদ করেন। লস্কর পরাগল ছিলেন সুলতান হােসেন শাহর (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রীঃ) সেনাপতি। তিনি সুলতানের আদেশে যুদ্ধার্থ চট্টগ্রাম গমন করেন এবং স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করতেন। পরাগল খান দিনেকের মধ্যেই শুনতে পারেন, এমন মহাভারত রচনার জন্যই কবীন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার আদেশ ছিল-


এহি সব কথা সংক্ষেপ করিয়া। 

একদিনে শুনিতে পারি পাঁচালি রচিয়া।।


সম্ভবতঃ এই কারণেই কবীন্দ্র সমগ্র মহাভারতকে অতি সংক্ষিপ্ত আকারে শুধু প্রধান প্রধান কাহিনী সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলেন। আকার অতিশয় সংক্ষিপ্ত বলেই এটি বর্ণনামূলক কাহিনীর আকার ধারণ করে।


কবীন্দ্র সেনাপতি পরাগলের নির্দেশে মহাভারত রচনা করেন বলে সাধারণভাবে এটি পরাগলী মহাভারত' নামেই পরিচিত হয়ে থাকে, তবে গ্রন্থটির কবি-প্রদত্ত নাম ‘পাণ্ডববিজয় পাঞ্চালিকা'। এই পাণ্ডব বিজয় নামটি অপর একটি ভ্রান্তির সৃষ্টি করে পণ্ডিত মহলে এককালে বেশ শােরগােল সৃষ্টি করেছিল। লিপিবিভ্রাটেই সম্ভবত ‘পাণ্ডববিজয়’ তথা 'বিজয়পাণ্ডব' কোথাও কোথাও ‘বিজয়পণ্ডিত' হয়ে দাঁড়ায়; ফলে কোন ঐতিহাসিক এটিকে ‘বিজয়পণ্ডিত' নামক কবির রচিত এক মহাভারত বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। যা হােক, এক্ষণে এই ভ্রান্তির নিরসন হলেও কবিন্দ্র পরমেশ্বর নামটি নিয়ে অপর একটি সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন যে, কবির নাম পরমেশ্বর' এবং কবীন্দ্র' তাঁর উপাধি। কিন্তু ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন যে কবির নাম কবীন্দ্র'। ভণিতায় আছে—‘কবীন্দ্র পরমযত্নে পাঁচালী রচিয়া। এটিই লিপিবিভ্রাটে কবীন্দ্র পরমেশ্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাহােক, কবির ব্যক্তিগত পরিচয়-বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছু জানা না গেলেও গৌরীনাথ শাস্ত্রীর মতে কবীন্দ্র ছিলেন কোচবিহার-রাজ নরনারায়ণ দেবের মন্ত্রী। এঁর নাম ছিল 'বাণীনাথ', রাজমন্ত্রী হয়ে ইনি ‘কবীন্দ্ৰপাত্র’ উপাধি প্রাপ্ত হন। আসাম গৌরীপুরের রাজবংশ এই কবীন্দ্রপাত্রের বংশধর বলে দাবি করে থাকেন। কবির জীবৎকাল-বিষয়ে সুনিশ্চিতভাবে কিছু জানা না গেলেও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে অনুমান করা চলে যে সম্ভবতঃ তাঁর কাব্যের রচনাকাল ১৫০০-১৫১৫ খ্রীঃ।


কবীন্দ্র একদিনে শােনবার উপযােগী করে অতিশয় সংক্ষিপ্ত আকারে মহাভারত রচনা করলেও তার নামে প্রচলিত মহাভারতে মােট শ্লোক-সংখ্যা প্রায় সতেরাে হাজার। অতএব অতি সঙ্গত কারণেই অনুমান করা হয় যে, কালে কালে পরাগলী মহাভারতে প্রচুর পরিমাণ প্রক্ষিপ্ত রচনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশেষতঃ কবীন্দ্রের গ্রন্থে বিভিন্ন কবির ভণিতা এই অনুমানকেই সুদৃঢ় করে। মূল মহাভারতের অনুকরণে কবীন্দ্রের মহাভারতেও অষ্টাদশ পর্বই রয়েছে। তবে অশ্বমেধ পর্বটির ভণিতা সর্বত্র 'শ্রীকর নন্দী'র। কেউ কেউ অনুমান করেন যে কবীন্দ্রের গ্রন্থ সমাপ্ত হবার পূর্বেই পরাগল খা পরলােকগমন করায় কবীন্দ্র আর গ্রন্থ সমাপ্ত করেন নি। পরে পরাগল খানের পুত্র 'ছােটি খা'র আদেশে শ্রীকর নন্দী ঐ গ্রন্থ সমাপ্ত করেন। কিন্তু সম্ভবতঃ এই অনুমান ভ্রান্ত, কারণ কবীন্দ্র এবং শ্রীকর নন্দী-উভয়ের ভণিতায়ই পৃথক গ্রন্থে পাওয়া যায় এবং তাদের বিষয়গত পার্থক্যও বর্তমান। অতএব কবীন্দ্র সমগ্র গ্রন্থই রচনা করেছিলেন বলে মেনে নিতে হয়; শুধু কোন কারণে তিনি 'অশ্বমেধ পর্ব' রচনা করেন নি অথবা তা' বিনষ্ট হয়ে যাওয়াতে শ্রীকর নন্দী জৈমিনী-ভারত-অনুযায়ী অশ্বমেধ পর্ব রচনা করে তা কবীন্দ্রের গ্রন্থে সংযােজিত করেন। কবীন্দ্রও মূলতঃ জৈমিনি-ভারত-অনুসরণেই হয়তাে তার গ্রন্থ রচনা করেন, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভবপর নয়, কারণ একমাত্র অশ্বমেধ পর্ব-ভিন্ন জৈমিনী-ভারতের অপর কোন পর্ব আর এক্ষণে পাওয়া যায় না বলে তা মিলিয়ে দেখা আর সম্ভবপর মনে হয় না।


(খ) কাশীরাম দাস 


বাঙলা রামায়ণ বলতেই যেমন কৃত্তিবাসী রামায়ণকেই বুঝিয়ে থাকে, তেমনি বাঙলা মহাভারত বলতে শতকরা একশ জন বাঙালীই বােধ হয় কাশীদাসী মহাভারত' বুঝে থাকেন। অথচ বাঙলা ভাষায় যারা মহাভারত বা তার অংশবিশেষ অনুবাদ করেছেন, তাদের সংখ্যা অন্ততঃ ৭০-এর অধিক। এ ছাড়া কাশীরাম কৃত্তিবাসের মত আদি অনুবাদক নন, এমন কি তিনি সমগ্র মহাভারতেরও অনুবাদ করে উঠতে পারেন নি। তৎসত্ত্বেও তাঁর রচনার সম্পূর্ণতা এবং পরিণতির জন্যই তিনি এই অসাধারণ স্বীকৃতি লাভে ধন্য হয়েছেন। বস্তুত রামায়ণের মতােই কাশীদাসী মহাভারতও বাঙালী সমাজে ধর্মগ্রন্থেরই মর্যাদা লাভ করেছে, অবশ্য কাব্যের দৈর্ঘ্য ও কাহিনীগত জটিলতার কারণে কৃত্তিবাসী রামায়ণের মতাে কাশীদাসী মহাভারত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।


কবি-পরিচয়: কবির পূর্ণ নাম কাশীরাম দেব, বিনয়বশতঃ নিজেকে 'দাস বলে অভিহিত করেছেন। কবির পুরুষানুক্রমিক বাসস্থান ছিল বর্ধমান জেলার সিঙ্গিগ্রাম। কবির পিতা কমলাকান্ত। কবির জ্যেষ্ঠভ্রাতা কৃষ্ণদাস এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধরও কবি ছিলেন। কবির জীবৎকাল বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ না পেলেও নানা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে অনুমান করা হয় যে কাশীরাম সম্ভবতঃ যােড়শ শতকের শেষার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং সপ্তদশ শতকের গােড়াতেই আঃ ১৬০২-১৬০৫ খ্রীষ্টাব্দের দিকে তার গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। পৃথবীচন্দ্র নামক জনৈক কবি ‘গৌরীমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছেন—“অষ্টাদশ পর্ব ভাষা কৈল কাশীদাস। কাশীরামের সমগ্র মহাভারত রচনার কথা লােকশ্রুতি দ্বারাও সমর্থিত। কিন্তু কাশীরামের কাব্যে বিভিন্ন কবির ভণিতা এবং একটি উক্তি সন্দেহ সৃষ্টি করে। উক্তিটি-


আদি সভা বন বিরাটের কত দূর। 

এত রচি কাশীরাম গেল স্বর্গপুর।


কাশীরাম যে মহাভারত রচনার কাজ শেষ করতে পারেন নি, এ তথ্য এখন সর্বজনসমর্থিত। কাশীরামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধরের পুত্র নন্দরামের একটি উক্তি থেকে জানা যায় যে পরলােক- গমনকালে তার জ্যেষ্ঠতাত কাশীরাম তাকে গ্রন্থ সমাপ্ত করতে আদেশ দিয়ে যান। কাশীদাসী মহাভারতে নন্দরামের ভণিতাও পাওয়া যায়। তিনিই গ্রন্থ সমাপ্তির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও সম্ভবতঃ উদ্যোগ পর্ব এবং ‘দ্রোণপর্ব পর্যন্তই অনুবাদ করেছিলেন। কৃষ্ণানন্দ বসু-ভণিতায় শান্তিপর্ব, জয়ন্তদাস-ভণিতায় ‘স্বর্গারােহণ পর্ব এবং নিত্যানন্দ ঘােষ ভণিতায় 'স্ত্রীপর্ব পাওয়া যাওয়াতে উক্ত কবিগণ-কর্তৃক যথােক্ত পর্বসমূহ রচিত হয়েছিল বলেই মেনে নিতে হয়। বনপর্ব, 'গদাপর্ব এবং 'সভাপর্ব রচনার ভণিতায় পাওয়া যায় দ্বৈপায়ন দাসের নাম। ডঃ সুকুমার সেন দ্বৈপায়ন দাসনামক কোন পৃথক্ কবির অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কিন্তু একটি ভণিতায় দ্বৈপায়ন দাস নিজেকে কাশীরামের পুত্র বলে পরিচয় দেওয়াতে তার অস্তিত্ব উড়িয়ে দেওয়া চলে না। পূর্বোক্ত আলােচনা থেকে এ সহজ সত্যটি স্বীকার করে নেওয়াই সঙ্গত যে নন্দরাম, কৃষ্ণানন্দ, জয়ন্তদাস, নিত্যানন্দ ঘােষ ও দ্বৈপায়ন দাস এবং সম্ভবতঃ আরাে কোন কোন কবির সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলেই কাশীরাম দাসের মহাভারত সম্পূর্ণতা লাভ করেছিল। অতএব কাশীরাম দাসের নামে প্রচলিত হলেও এই মহাভারতের ভালােমন্দের দায় দায়িত্ব এককভাবে কাশীরামে বর্তায় না। তৎসত্ত্বেও গ্রন্থকর্তারূপে কাশীরাম দাসের নামটিই এতাবৎকাল গ্রহণযােগ্য বিবেচিত হয়ে আসছে।


উপাদান-সূত্র: কৃত্তিবাসের রামায়ণের মতই কাশীরাম দাসের মহাভারতও বাঙালীর ঘরে ঘরে সমভাবে আদৃত হয়ে থাকে, এ থেকেই তার কাব্যের জনপ্রিয়তা অনুমিত হতে পারে। কাশীরাম সাধারণভাবে ব্যাস-মহাভারতের অনুসরণ করলেও তদতিরিক্ত কিছু কিছু বিষয়ও গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। এর অনেকাংশ জৈমিনি-ভারত থেকে গৃহীত হয়ে থাকতে পারে এবং অন্য সূত্র থেকেও যে কাশীরাম কিছু কিছু উপাদান সংগ্রহ করেছেন এমন অনুমানের পক্ষেও যুক্তি রয়েছে। জৈমিনি সমগ্র মহাভারতই রচনা করেছিলেন এমন একটা মতবাদ প্রচলিত থাকলেও এর সত্যতা স্বীকার করা কষ্টকর। কারণ সমগ্র ভারতবর্ষের কোথাও অশ্বমেধ পর্বের অতিরিক্ত অপর কোন পর্বের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অতএব, অপর সকল কাহিনীর জন্য কাশীরাম অপর গ্রন্থকারদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন—এমন অনুমানই বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


পর্বে বৈচিত্র্য: মূল মহাভারতের মতই কাশীদাসী মহাভারতও অষ্টাদশ পর্বে বিভক্ত হলেও পর্বনাম-বিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে। ব্যাস-ভারতে শল্য পর্বেই ভীম-দুর্যোধনের গদাযুদ্ধবর্ণিত হলেও কাশীরামের কাব্যে পৃথক 'গদাপ্ব রচিত হয়েছে। কাশীরামের কাব্যে অনুশাসন পর্ব একেবারে বর্জিত হয়েছে এবং ব্যাসের 'মহাপ্রস্থান পর্ব’কে ‘স্বর্গারােহণ পর্বের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; বিন্যাসের দিক থেকেও উভয়ের মধ্যে স্বাতন্ত্রয লক্ষ্য করা যায়।


কাশীরামের নিজস্বতা: কাশীরাম দাস যুদ্ধ-বিষয়ক বিস্তৃত বর্ণনা এবং তাত্ত্বিক আলােচনা প্রায় বর্জন করেছেন। ফলে বহু তত্ত্বকথায় পরিপূর্ণ শান্তিপর্ব ও রাজধর্মানুশাসন, আপদ্ধর্ম অনুশাসন পর্ব কাশীরামে অনুপস্থিত। বনপর্বের প্রধান অঙ্গ তীর্থযাত্রা পর্ব এবং মার্কণ্ডেয় পর্বও কাশীরাম বাদ দিয়েছেন। গীতার কাহিনী অংশমাত্র গ্রহণ করে তার সমুদয় তাত্ত্বিক অংশ এবং অনুগীতা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেছেন। রুরু-প্রমদ্বরার প্রেমকাহিনী, বিদুলার তেজস্বিতা, উঞ্ছবৃত্তি ব্রাহ্মণের শক্তৃযজ্ঞ-আদি কাহিনী কাশীরামে নেই। একদিকে কাশীরাম যেমন মূল মহাভারতের এ সমস্ত কিছু বর্জন করেছেন, তেমনি ভিন্ন সূত্র থেকে নতুন নতুন কাহিনী গ্রহণও করেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য : শ্রীবৎস-চিন্তার উপাখ্যান, জনা-প্রবীর উপাখ্যান, অকালে আম্র-উৎপত্তির বিবরণ, ভানুমতীর স্বয়ম্বর প্রভৃতি। এই সকল গ্রহণ বর্জন ছাড়াও কাশীরাম বহু স্থলেই মূল কাহিনী থেকে সরে গিয়ে কাহিনীর রূপান্তর সাধান করেছেন। দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় শিখণ্ডী-দর্শনে ভীষ্মের ধনুত্যাগ কিংবা সুদর্শনচক্রে দ্রোণ ও কর্ণের বাণ প্রতিহত হবার কাহিনী ব্যাস-ভারতে নেই, সেখানে দ্রৌপদী কর্ণকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কৃষ্ণভক্তির বশে কাশীরাম দাস পারিজাত হরণ, সত্যভামার তুলাব্রত ইত্যাদি যােগ করেছেন। কাশীরাম দাস চৈতন্যোত্তরকালে বর্তমান ছিলেন বলে তার কাব্যে বৈষ্ণব ভাব তথা কৃষ্ণভক্তির সবিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়।


কাশীরাম-সম্বন্ধে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে তিনি সংস্কৃত জানতেন না, কিন্তু কাব্যের বহুস্থলেই ভাষা, শব্দপ্রয়ােগ ও অলঙ্কারাদির ব্যবহার থেকে তাঁকে সংস্কৃত সাহিত্যে সুপণ্ডিত বলে মনে হয়। কোথাও কোথাও তিনি সংস্কৃতের আক্ষরিক অনুবাদও করেছেন, কিন্তু তৎসত্ত্বেও তার গ্রন্থকে মুলের ভাবানুবাদ বলেই গ্রহণ করা কর্তব্য। বহুস্থলেই তার মৌলিক রচনারও পরিচয় পাওয়া যায়। কৃত্তিবাসের রচনায় যে গ্রামীণ সরলতা বর্তমান, কাশীরামে তা অনুপস্থিত। কৃত্তিবাসের রচনার মতাে বাঙালীয়ানার পরিচয়ও কাশীরামে পাওয়া যায় না। তৎসত্ত্বেও যুগধর্মকে অস্বীকার করতে না পেরে কাশীরাম যে বাঙলা মহাভারত রচনা করেছেন, তা' ব্যাস মহাভারতের অনুগামী না হয়ে যে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছে, এটিকেই কাশীদাসের কৃতিত্বের পরিচয় বলে মনে করি।


(গ) অন্যান্য কবি —মহাভারতের অনুবাদকরূপে বাঙলায় কমপক্ষে ৭৫ জন কবির নাম পাওয়া যায়। দু'চারজন বাদে এদের প্রায় সকলেই মহাভারতের অংশবিশেষ মাত্রই অনুবাদ করেছেন এবং এদের মধ্যে প্রায় সকলের চেষ্টাই ছিল গতানুগতিক এবং অনুল্লেখ্য। যাঁদের রচনা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে, তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদত্ত হলাে।


  • 'শ্রীকর নন্দী’- কবি শ্রীকর নন্দী লস্কর পরাগল খানের পুত্র ছােটি খানের (নসরৎ খান?) নির্দেশে মহাভারত অনুবাদ করেন। তিনি সম্ভবতঃ কবীন্দ্র পরমেশ্বর-রচিত পরাগলী মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বটি রচনা করেছিলেন জৈমিনি-ভারত অনুসরণে। ডঃ সুকুমার সেন অবশ্য অনুমান করেন যে শ্রীকর নন্দী সমগ্র মহাভারতই অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর মহাভারতে অনুশাল, চন্দ্রহাস, নীলধ্বজ-জনা, প্রমীলা-অর্জুন, বভ্রুবাহন, হংসধ্বজ প্রভৃতির কাহিনী মনােরম ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। এক সময় শ্রীকর নন্দী এবং কবীন্দ্র একই ব্যক্তি বলে মনে করা হতাে, অবশ্য বর্তমান কালে এদের পৃথক অক্তিত্বই স্বীকৃত। সম্ভবতঃ ১৫১২-১৫ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে শ্রীকর নন্দীর মহাভারত রচিত হয়।


  • 'সঞ্জয়'- বাঙলা মহাভারতের ইতিহাসে সঞ্জয় এখনও এক সমস্যা হয়ে রয়েছে। কেউ কেউ অনুমান করেন যে ইনি পৌরাণিক সঞ্জয়, যিনি ব্যাসদেবের বরে দিব্যদৃষ্টি লাভ করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকাহিনী অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের নিকট বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু যারা সঞ্জয়ের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, তাদের যুক্তিও দুর্বল নয়। কোন কোন স্থলে ভণিতায় পাওয়া যায়সঞ্জয়। এখানে পৌরাণিক সঞ্জয় ছাড়াও গ্রন্থকার সঞ্জয়ের কথা রয়েছে। অন্যত্র ভণিতায় আত্মপরিচয়রূপে সঞ্জয় নিজেকে বলেছেন ‘ব্রাহ্মকুমার’এবং ভরদ্বাজ বংশে জন্ম। আর একটি ভণিতায় রয়েছে যে হরিনারায়ণদেব ‘সঞ্জয়াভিমানে কৈলা অপূর্ব ভারতী। অর্থাৎ গ্রন্থকার হরিনারায়ণদেব এবং তার উপমান সঞ্জয়। ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন এবং মনীন্দ্রমােহন বসু সঞ্জয়ের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। তারা মনে করেন, পরাগলী মহাভারতেরও পূর্বে এই মহাভারত রচিত হয়। পক্ষান্তরে ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন, "পূর্ববঙ্গের ভারত পাঁচালী-রচয়িতাদের কাব্যপ্রবাহ মিলিত হইয়া গিয়া তথাকথিত সঞ্জয় মহাভারতের সৃষ্টি করিয়াছে।” একথা অবশ্য সত্য যে, সঞ্জয়ের নামে পরিচিত মহাভারতে বহু কবিরই ভণিতা রয়েছে। এতে ব্যাসােক্ত মহাভারতের বিরােধী এবং জৈমিনি-ভারতের অনুগামী বহু বিষয়ের সন্নিবেশ ঘটেছে।


  • 'রামচন্দ্র খান’- সম্ভবতঃ ১৫৩০-৫৪ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে জনৈক রামচন্দ্র খান জৈমিনির মহাভারতের অশ্বমেধ পর্ব বাঙলায় অনুবাদ করেন। এই কবির ভণিতাযুক্ত যে দুখানি পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে, তাতে আত্মপরিচয়ে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। একটিতে কবি নিজেকে জাতিতে কায়স্থ এবং কাশীনাথ-সুত বলে পরিচয় দিয়েছেন, অপরটিতে কবি ব্রাহ্মণসন্তান এবং পিতার নাম মধুসূদন। এই একটি সমস্যা, আর একটি সমস্যা—এই সময়েই নিত্যানন্দ প্রভুর অপমানকারী এক রামচন্দ্র খান এবং চৈতন্যমহাপ্রভুর সহায়ক অপর এক রামচন্দ্র খানের পরিচয় পাওয়া যায় না। রামচন্দ্র খানের মহাভারতের তেমন কোন উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায় না।


  • 'অনিরুদ্ধ রাম সরস্বতী’ —কোচবিহার-রাজ বিশসিংহ বা বিশু কোচের পৃষ্ঠপােষকতায় প্রথমে কবি পীতাম্বর ১৫৪৫ খ্রীঃ নলদময়ন্তী অনুবাদ করে মহাভারত রচনার সূত্রপাত করেন এবং রাজার পুত্র শুক্লধ্বজ বা চিলারায়ের পৃষ্ঠপােষকতায় প্রখ্যাত পণ্ডিত অনিরুদ্ধ রামসরস্বতী মহাভারতের বনপর্ব, উদ্যোগপর্ব এবং ভীষ্মপর্ব অনুবাদ এবং তৎ-পুত্র দ্রোণপর্ব পর্যন্ত অনুবাদ করেছিলেন। এই রাজবংশের প্রবর্তনায় উনিশ শতক নাগাদ সমগ্র মহাভারতই বহু কবির সহায়তায় সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছিল।


  • 'দ্বিজ রঘুনাথ'- উড়িষ্যার রাজা মুকুন্দদেবের পৃষ্ঠপােষকতায় দ্বিজ রঘুনাথ সম্ভবতঃ ১৫৬৮ খ্রীস্টাব্দের পূর্বেই জৈমিনিয় ভারতের ‘অশ্বমেধ পর্বের অনুবাদ করেন। কাশীরাম দাসের রচনার সঙ্গে এর রচনার সাদৃশ্য এত বেশি যে, মনে হয় একের রচনা অপরের গ্রন্থেও অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে।


  • 'কবিচন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী'- ভূরিত্রষ্টা এই কবি মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের প্রায় প্রত্যেকটি ধারাতেই কিছু না কিছু কাব্য রচনা করে গেছেন। সপ্তদশ শতকের শেষ এবং অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে বর্তমান থেকে ইনি একাধিক মন্লরাজার পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করেছেন। তিনি মল্লরাজা গােপাল সিংহদেবের (১৭১২-১৭৪৮ খ্রীঃ) পৃষ্ঠপােষকতায় সমগ্র মহাভারতই অনুবাদ করেছিলেন বলে জানা যায়।


  • 'নিত্যানন্দ ঘােষ'- পাকুড়-রাজ পৃথ্বীরাজ তার ‘গৌরীমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ করেছে যে কাশীরাম দাসের পূর্বেই নিত্যানন্দ ঘােষ মহাভারত রচনা করেন। তবে ডঃ সুকুমার সেন অনুমান করেন কবি নিত্যানন্দ আরও পরে সম্ভবতঃ সপ্তদশ শতকের শেষভাগে বর্তমান ছিলেন। নিত্যানন্দ কৃত মহাভারতের সাতটি মাত্র পর্বের সন্ধান পাওয়াতে অনুমিত হয় তিনি হয়ত সমগ্র মহাভারত অনুবাদ করেন নি।


  • 'ষষ্ঠীবর সেন'- ঢাকা জেলার অধিবাসী ষষ্ঠীবর সেন এবং তৎপুত্র গঙ্গাদাস সমগ্র মহাভারতের অনুবাদ করেছিলেন বলেই উল্লেখ করেছেন। এদের কে কতটা রচনা করেছিলেন, অথবা কোন একজন বা দুজনই সমগ্র মহাভারত রচনা করেছিলেন এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না।


এঁরা ছাড়াও বহু কবিই মহাভারতের বিভিন্ন পর্ব, বিশেষতঃ এঁদের অনেকে অশ্বমেধ পর্ব, অনুবাদ করেন।