প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন জনপদের উৎপত্তি ও নাম উল্লেখ করাে।

সূচনা: জনপদ শব্দটি 'জন এবং 'পদ নামে দুটি শব্দ সংযুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে। জন শব্দের অর্থ হল উপজাতি এবং পদ শব্দের অর্থ হল পা তাই আক্ষরিক অর্থে কোনো নির্দিষ্ট জনগােষ্ঠী বা জন যেখানে তার 'পদ বা পা রেখেছে তাকেই জনপদ বােঝায়। এই অর্থে নির্দিষ্ট কোনাে গােষ্ঠীর নির্দিষ্ট কোনাে বসতিই হল 'জনপদ। প্রাচীন তথ্য অনুসারে জনপদ শব্দের দুটি অর্থ—[1] ভূখণ্ড বা অঞ্চল এবং [2] ভূমির জনসমষ্টি। সাধারণ অর্থে, বৈদিক যুগে বা লৌহ যুগের সূচনায় (১২০০ খ্রিস্টপূর্ব) ভারতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতিগােষ্ঠীর বসতিকেই জনপদ বােঝাত।


জনপদের উৎপত্তি

সূচনাপর্বে ভারতে আর্যদের রাজনৈতিক জীবন ছিল উপজাতীয় প্রকৃতির। আর্যদের এরূপ জীবনধারা যে ভূখণ্ডকে ঘিরে আবর্তিত হত তাকে বলা হত 'জন। বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্যে আর্যদের বসতি হিসেবে জন নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমদিকে পশুচারণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে অর্ধ যাযাবর এই গােষ্ঠীগুলি কোনাে সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেনি। পরবর্তীকালে আর্য সমাজে কৃষিব্যবস্থার বিকাশের ফলে তারা নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। লােহার হাতিয়ার দিয়ে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে কৃষিজমির প্রসার ঘটায়। ক্রমে সই এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয় এবং বসতির বিস্তার ঘটে। এভাবে আর্যদের এই জনগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন 'জনপদ গঠিত হয় যা মহাকাব্যের যুগে চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে। জনপদের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একদা নেতার উত্থান ঘটে, যিনি অস্ত্রের জোরে অন্যের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। সক্ষম হন। এভাবে জনপদের শাসক হিসেবে 'জনপদিন পদের উত্থান ঘটে।


বিভিন্ন জনপদের নাম


‘রামায়ণ, মহাভারত, পাণিনির 'অষ্টাধ্যায়ী, 'হিন্দু পুরাণ প্রভৃতি সাহিত্যিক উপাদান থেকে বৈদিক যুগে ভারতের বিভিন্ন জনপদের নাম জানা যায়। [1] অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থটি থেকে ১৫টি ক্ষত্রিয় জনপদের নাম জানা যায়। এগুলি হল সালভিয়া, গান্ধারী, মগধ, কলিঙ্গ, সুরসেন, কোশল, অজদা (অযােধ্যা), কুরু, সালবা, প্রত্যাগ্ৰথ, কালকুট, অস্মক, কম্বােজ, অবন্তী এবং কুন্তি। [2] 'মহাভারতে পঁচিশটি প্রাচীন জনপদের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই জনপদগুলি হল—অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, কাশী, কোশল, বৎস, গৰ্গ, কারুশ, পুণ্ড, অবন্তী, দাক্ষিণাত্য, পারবরটক, দশেক, কাশ্মীর, উরস, পিশাচ, মুদগলা, কম্বোজ, বতধন, চোল, পাণ্ড্য, ত্রিগর্ত, মালব এবং দরদ। এ ছাড়া এই মহাকাব্যে কুরু এবং পাঞ্চাল জনপদেরও উল্লেখ রয়েছে। [3] 'রামায়ণে প্রাচীন ভারতের যেসব জনপদের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলি হল—অন্তু, পুন্ড্র, চোল, পাণ্ড্য, কেরল, মেখালা, উৎকল, দশান, অভ্দরবন্তী, বিদরভাস, ম্লেচ্ছ, পুলিন্দ, সুরসেন, প্রস্থল, ভারত, কুরু, মদ্রক, কম্বােজ, দরদাস, কিরাত, তঙ্গন, যবন, শক, চিল, মহাচিন প্রভৃতি।


উপসংহার: উপরােক্ত বিভিন্ন জনপদগুলি নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত সংঘর্ষের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরবর্তীকালে বৃহৎ রাজনৈতিক আকার ধারণ করতে থাকে। এই বৃহৎ ভূখণ্ডলুলি মহাজনগদ নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতে এরুপ ষােলােটি মহাজনপদের অস্তিত্ব ছিল বলে বৌদ্ধগ্রন্থ ‘অম্লত্তরনিকায়', জৈনগ্রন্থ ‘ভগবতীসূত্র', ‘হিন্দু পুরাণ” প্রভৃতি থেকে জানা যায়। এগুলি একত্রে ষােড়শ মহাজনপদ নামে পরিচিত। অবশেষে অন্যতম মহাজনপদ মগধের নেতৃত্বে উত্তর ভারতে এক বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।


হরপ্পা সভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতার নগরজীবনের তুলনামূলক আলোচনা করাে।


প্রাচীন গ্রিসে ‘পলিস’ বা ‘নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করাে। প্রাচীন গ্রিসে পলিসের উত্থানের ধারাবাহিক পর্যায়গুলি কী কী।


প্রাচীন গ্রিক পলিসগুলির আয়তন ও জনসংখ্যা সম্পর্কে গ্রিক পণ্ডিতদের মতামত উল্লেখ করাে। পলিসগুলির আয়তন ও জনসংখ্যার বাস্তব পরিসংখ্যান উল্লেখ করাে।


গ্রিক পলিস বা নগর-রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে। পলিসে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার আলােচনা করাে।


গ্রিক পলিস বানগর-রাষ্ট্রগুলির রাষ্ট্রীয় কাঠামাের বিবর্তন উল্লেখ করাে। পলিসগুলির পতনের বিভিন্ন কারণগুলি উল্লেখ করাে।


এথেন্সে গণতন্ত্রের ভিত্তি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?


গ্রিক পলিসের রাজনৈতিক গঠন ও ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলােচনা করাে।