প্রাচীন গ্রিক পলিসগুলির আয়তন ও জনসংখ্যা সম্পর্কে গ্রিক পণ্ডিতদের মতামত উল্লেখ করাে। পলিসগুলির আয়তন ও জনসংখ্যার বাস্তব পরিসংখ্যান উল্লেখ করাে।

প্রাচীন গ্রিক পলিসের আয়তন ও জনসংখ্যা

গ্রিক ইতিহাসের ধ্রুপদি যুগে ওই দেশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর- রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। এগুলি ‘পলিস’ নামে পরিচিত ছিল। পলিসগুলির আয়তন যেমন ক্ষুদ্র হত তেমনি এগুলির জনসংখ্যাও হত বেশ কম। এথেন্স বা সিরাকিউজের মতো পলিসগুলিতে জনসংখ্যার চাপ বেশি থাকলেও বহু পলিসের জনসংখ্যা ছিল ৫ হাজার বা তারও কম| মাইসিনি নামে একটি পলিস পারস্যের বিরুদ্ধে প্ল্যাটিয়ার যুদ্ধে ৮০ জন সৈন্য পাঠিয়েছিল। এ থেকে তৎকালীন পলিসের ক্ষুদ্রত্ব সম্পর্কে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।


[1] প্লেটোর অভিমত: গ্রিক দার্শনিক প্লেটো পলিসগুলির ক্ষুদ্র‌ আয়তন ও সীমিত লােকসংখ্যাকে সমর্থন করতেন। তিনি তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে বলেছেন যে, একটি আদর্শ পলিসের লােকসংখ্যা হওয়া উচিত ৫০০০। তিনি পলিসে ৫০০০-এর কম জনসংখ্যাকে সমর্থন করেননি।


[2] অ্যারিস্টটলের অভিমত: অ্যারিস্টটল তাঁর 'পলিটিকস গ্রন্থে বলেছেন যে, অত্যধিক জনসংখ্যা নিয়ে পলিস গঠন করা সম্ভব নয়। তার মতে, পলিসের আয়তন এমন ক্ষুদ্র হওয়া উচিত, যাতে সেখানকার প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে প্রত্যক্ষ পরিচয় থাকে। তিনি অত্যন্ত ক্ষুদ্র বা বৃহৎ উভয় পলিসের অস্তিত্বেরই বিরােধী ছিলেন। তিনি বলেছেন যে, ১০ জন নাগরিক নিয়ে গঠিত পলিস যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে না, তেমনি ১ লক্ষ নাগরিক নিয়ে গঠিত পলিসও সুদক্ষ শাসন পরিচালনা করতে পারবে না।


[3] হিপপােডামাসের অভিমত: সমকালীন পণ্ডিত হিপপােডামাস পলিসের ক্ষুদ্রত্বকেই সমর্থন করেছেন। তিনি মনে করেন যে, একটি পলিসের আদর্শ জনসংখ্যা হওয়া উচিত অনূর্ধ্ব ১০ হাজার।


বাস্তব পরিসংখ্যান


প্রাচীন গ্রিক পলিসগুলির আয়তন কতটা ক্ষুদ্র ছিল বা সেগুলির প্রকৃত জনসংখ্যা কেমন ছিল তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন লেখকের পরিসংখ্যানে ব্যবধানও বিস্তর। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে বিভিন্ন পলিসের আয়তন ও জনসংখ্যা সম্পর্কে কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে।


[1] আয়তন: বাণিজ্যনগরী করিন্থ-এর আয়তন ছিল মাত্র ৩৩০ বর্গমাইল। কিওস-এর মতাে ক্ষুদ্র দ্বীপ চারটি পলিসে বিভক্ত ছিল। কয়েকটি পলিস আয়তনে বড়াে হলেও অধিকাংশ পলিসই ক্ষুদ্র ছিল। তবে স্পার্টার জনসংখ্যা অনেক কম হলেও তার ভূখণ্ড অন্যান্য পলিসের আয়তনের তুলনায় বড়াে ছিল।


[2] জনসংখ্যা: [i] কিটো বলেছেন যে, পেলােপনেসীয় যুদ্ধের শুরুতে (৪৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অ্যাটিকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। [ii] ইতিহাসবিদ ফিনলে বলেছেন যে, ৪৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার। তার মতে, জনসংখ্যার ব্যাপকতায় একমাত্র সিসিলির সিরাকিউজ এথেন্সের সমকক্ষ ছিল। এ ছাড়া তখন করিন্থে ৯০ হাজার, থিবস, আরগস, করকায়রা এবং আক্রাগাস-এ ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার করে জনসংখ্যা ছিল বলে তিনি অভিমত দিয়েছে। প্রসঙ্গত। উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ পলিসের জনসংখ্যার বেশির ভাগটাই ছিল অনাগরিক।


উপসংহার: গ্রিসের এই ক্ষুদ্র পলিসগুলিতে সকল নাগরিকদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যােগাযােগ থাকত এবং তারা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে অংশ নিত। পলিসের এই ক্ষুদ্রত্ব গ্রিকদের কাছে রাষ্ট্রের অন্যতম গুণ বলে বিবেচিত হত।


প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার শিল্প-সংস্কৃতির মূল্যায়ন করাে।


প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করত কেন? মিশরের বিখ্যাত দুটি পিরামিড ও তুতেনখামেনের সমাধির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


নদীকেন্দ্রিক প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার পরিচয় দাও।


সুমেরের অধিবাসীদের প্রধান প্রধান পেশা ও শিল্পগত পারদর্শিতার পরিচয় দাও।


প্রাচীন মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতার রাজতান্ত্রিক কাঠামাে বর্ণনা করাে। মিশর ও সুমের উভয় সভ্যতার ধর্মের ওপর আলােকপাত করাে।


হরপ্পা সভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতার নগরজীবনের তুলনামূলক আলোচনা করাে।


প্রাচীন গ্রিসে ‘পলিস’ বা ‘নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করাে। প্রাচীন গ্রিসে পলিসের উত্থানের ধারাবাহিক পর্যায়গুলি কী কী।