প্রাচীন গ্রিসে ‘পলিস’ বা ‘নগর-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করাে। প্রাচীন গ্রিসে পলিসের উত্থানের ধারাবাহিক পর্যায়গুলি কী কী।

নগররাষ্ট্র বা পলিসের প্রতিষ্ঠার কারণ

গ্রিসে নগর রাষ্ট্রগুলি গড়ে-ওঠার পিছনে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। এগুলি হল一


[1] গ্রিকদের মানসিকতা: প্রাচীন কালে গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্র বা পলিস গড়ে-ওঠার ক্ষেত্রে গ্রিকদের মানসিকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। রাজনৈতিক কাজে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সুযােগবিশিষ্ট পলিসের এই ক্ষুদ্রত্বকে গ্রিকরা তাদের রাষ্ট্রের অন্যতম গুণ বলে মনে করত। তারা, সমকালীন পারস্যের মতাে বৃহদাকার রাষ্ট্রকে একমাত্র বর্বরদের বসবাসযােগ্য বলে মনে করত।


[2] ডেরিয়ান বিজয়ের প্রভাব: ডােরিয়ান বিজয়ের পরবর্তীকালে গ্রিসের উপত্যকা ও দ্বীপের বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে স্থানীয় পাহাড়ের চূড়ায় একটি শক্তিশালী কেন্দ্র নির্মিত হত, যা অক্টোপলিস নামে পরিচিত ছিল। এই স্থান ক্ৰমে শাসকের বাসস্থান, জনগণের মিলনকেন্দ্র এবং ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ নগরে পরিণত হয় এবং এখান থেকে‌ সংলগ্ন অঞ্চল শাসিত হতে থাকে।


[3] বাজার প্রতিষ্ঠা: প্রাচীন গ্রিসে উৎপাদনকারীরা একদা নিজেদের প্রয়ােজনের অতিরিক্ত সামগ্রী তারা বিক্রির জন্য উৎপাদন করতে থাকে। ফলে পণ্য কেনাবেচার কেন্দ্র হিসেবে বাজার গড়ে ওঠে। এর ফলে পলিসগুলির স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়।


[4] সামাজিক মনোভাব: প্রাচীন গ্রিকরা তাদের বাসস্থানের বাইরে সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান পছন্দ করত। তারা গ্রাম বা শহরে তাদের বাড়ি থেকে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে চাইত এবং স্থানীয় খােলা স্থানে বা বাজারে তাদের অবসর সময় কাটাতে পছন্দ করত। ফলে পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের বাজারগুলি ক্ৰমে বাজার-নগরে পরিণত হয় বা গ্রিকদের গােষ্ঠীজীবনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।


[5] অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা: বাজার নগর গুলি গড়ে উঠলেও গ্রিসের ভৌগােলিক বিচ্ছিন্নতার ফলে সেখানে পণ্য চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। তা ছাড়া গ্রিকদের যে স্বল্প পরিমাণ পণ্যসামগ্রীর প্রয়ােজন হত তা স্থানীয় অঞ্চলেই উৎপাদিত হত। এজন্য বাজারগুলি কখনও বৃহৎ নগরীতে পরিণত হতে পারেনি। ফলে বৃহৎ এলাকায় পারস্পরিক নির্ভরতার পরিবর্তে স্থানীয় অঞ্চলেই তাদের অর্থনীতি আবর্তিত হত।


পলিসের উত্থানের ধারাবাহিক পর্যায়


ডােরিয়ান বিজয়ের (আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব) পরবর্তীকালে গ্রিকরা ক্ষুদ্র ও স্বাধীন নগর রাষ্ট্রগুলি গড়ে তুলতে শুরু করেছিল। ইতিহাসবিদ ফিনলে মনে করেন যে, এই নগর- রাষ্ট্রগুলির প্রতিষ্ঠায় গ্রিকদের উদ্যোগের পশ্চাতে তাদের অনমনীয় স্বভাব কার্যকারী ছিল। গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলে পলিস গঠনের ধারাবাহিক বিভিন্ন পর্যায় লক্ষ করা যায়। যেমন


[1] শক্তিমান রাজা ও রাজ্যের অবলুপ্তি: ডােরিয়ান‌ বিজয়ের পর থেকে গ্রিসে শক্তিমান রাজা ও বৃহৎ রাজ্যের অস্তিত্ব লুপ্ত হতে থাকে। এই সময় আগামেমনন বা ইভােমিনিয়ান্স এর মতাে বৃহৎ রাজার সন্ধান আর পাওয়া যায় না। একদা ক্লীট দ্বীপে যেখানে ইভােমিনিয়ান্স ছিলেন একমাত্র রাজা সেখানে পরবর্তীকালে পঞ্চাশটিরও বেশি স্বাধীন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। গ্রিসের আয়ােনিয়া, ইজিয়ান সাগরের বিভিন্ন দ্বীপ, পেলােপনেসাস ও মধ্য গ্রিসের বৃহদংশ, দক্ষিণ ইটালি, সিসিলি প্রভৃতি অঞ্চলগুলিতেও অসংখ্য ক্ষুদ্র, স্বাশাসিত ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে উঠতে থাকে।


[2] পলিসের প্রাথমিক পর্যায়: খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে সপ্তম শতকের মধ্যে গ্রিসের পলিসগুলি তাদের প্রাথমিক রূপ লাভ করতে শুরু করেছিল। স্বাধীন এই পলিসগুলিতে লােকসংখ্যা ছিল খুবই কম, মাত্র কয়েক হাজার। তখনও পরিণত পলিসের রাজনৈতিক কাঠামাে গড়ে ওঠেনি। পলিসের প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রিসের প্রতিবেশী কোনাে কোনাে অঞ্চলে বৃহৎ রাষ্ট্রের অস্তিত্বও ছিল।


[3] পলিসের চূড়ান্ত পর্যায়: প্রিসের ইতিহাসের ধ্রুপদী যুগে (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে চতুর্থ শতক) সেখানকার পলিস-গুলি পূর্ণরূপ লাভ করেছিল। গ্রিকরা যখন পূর্ব ও পশ্চিমে নিজেদের সম্প্রসারণের কাজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছিল তখন গ্রিসে নগর- রাষ্ট্রের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ১৫০০। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য ছিল এথেন্স ও স্পার্টা।


নদীকেন্দ্রিক প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার পরিচয় দাও।


প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার শিল্প-সংস্কৃতির মূল্যায়ন করাে।


প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করত কেন? মিশরের বিখ্যাত দুটি পিরামিড ও তুতেনখামেনের সমাধির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


নদীকেন্দ্রিক প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতার পরিচয় দাও।


সুমেরের অধিবাসীদের প্রধান প্রধান পেশা ও শিল্পগত পারদর্শিতার পরিচয় দাও।


প্রাচীন মিশরীয় ও সুমেরীয় সভ্যতার রাজতান্ত্রিক কাঠামাে বর্ণনা করাে। মিশর ও সুমের উভয় সভ্যতার ধর্মের ওপর আলােকপাত করাে।


হরপ্পা সভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতার নগরজীবনের তুলনামূলক আলোচনা করাে।