প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: এম. উইন্টারনিজ, আর. ফিক, রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ মনে করেন যে, প্রতিটি যুগের ধর্মব্যবস্থা নারীর তৎকালীন সামাজিক অবস্থানকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল।


প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর বিবাহরীতি

[1] ঋগবৈদিক যুগ: ঋগবৈদিক যুগের সমাজে নারী যথেষ্ট মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল। সাধারণভাবে এযুগে নারীর বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল না। নারীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের পতি নির্বাচন করতে পারত। বিধবা নারীদের ক্ষেত্রে দেবরকে বিবাহ করার রীতি প্রচলিত ছিল। বস্তু নারী বিবাহ না করে বিদ্যাচ্চা এবং শাস্ত্রালােচনার মধ্য জীবন কাটাতেন।


[2] পরবর্তী বৈদিক যুগ: পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ প্রভৃতির প্রচলন নারীর মর্যাদা হ্রাসের প্রমাণ দেয়। এযুগে নারীর বিবাহ পদ্ধতি ক্রমশ জটিল হয় এবং বিধবাবিবাহের প্রচলন হয়। এযুগে উচ্চ সম্প্রদায়ে বিশেষত রাজপরিবারে বহুবিবাহের রীতি ছিল। উচ্চবর্ণের সঙ্গে সঙ্গে নিম্নবর্ণের অথবা একই বর্ণ বা জাতির মধ্যে বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল। স্বগােত্রে বিবাহের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল।


[3] মৌর্যযুগ: মৌর্যযুগে চার ধরনের বৈধ বা শাস্ত্রীয় এবং চার ধরনের অশাস্ত্রীয় বিবাহরীতি প্রচলিত ছিল। মেগাস্থিনিসের উল্লেখ থেকে জানা যায়, এসময়ে নিজ জাতি এবং নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহের প্রচলন ছিল। অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় যে, এসময় আট ধরনের বিবাহরীতি এবং বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল। 'পরাশর সংহিতা’য় উল্লেখ করা হয়েছে। যে, এযুগে স্বামী সন্ন্যাস নিলে বা নিরুদ্দিষ্ট হলে নারী পুনরায় বিবাহ করতে পারত।


[4] মৌর্য-পরবর্তী যুগে: মৌর্য-পরবর্তী যুগের সমাজে নারীর বিবাহরীতি নিয়ে ‘মনুসংহিতাস্মৃতি’তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, নারী প্রথম জীবনে পিতার অধীনে, বিবাহের পর স্বামীর অধীনে এবং পরবর্তী জীবনে পুত্রের অধীনে বার্ধক্য জীবন কাটাবে| মনুসংহিতাস্মৃতি'তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবাহিত নারী একান্তভাবেই স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। মৌর্যোত্তর সমাজে অনুলােম ও ‘প্রতিলােম’—এই দুই বিবাহরীতিরই প্রচলন ছিল।


[5] গুপ্তযুগ: গুপ্তযুগে যৌবনপ্রাপ্তির আগে ও পরে, এই দুই অবস্থাতেই নারীদের বিবাহ দেওয়ার রীতি ছিল। পুরুষপ্রধান সমাজে পুরুষরা একাধিক পত্নী গ্রহণ করতে পারতেন। স্মৃতিশাস্ত্রের বিধান অমান্য করেও এযুগে অনুলোম ও প্রতিলােম বিবাহরীতি চালু ছিল। কন্যাদের বিবাহের সাক্ষ্য পাওয়া যায়। সাধারণত ব্রাহ্ম, প্রাজাপত্য, আর্য ও দৈব—এই চার ধরনের বিবাহরীতি অধিক প্রচলিত ছিল। তবে রাজপরিবারগুলির মধ্যে গান্ধর্ব মতে বিবাহ হত বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।


[6] গুপ্ত-পরবর্তী যুগ: এযুগে সাধারণত ১২ বছর পূর্ণ হওয়ায় আগেই মেয়েদের বিবাহের আয়ােজন করা হত। উচ্চবিত্ত সমাজে বিধবাদের পুনরায় বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল। গুর্জর প্রতিহার সমাজে সাধারণত নারীদের বিবাহ হত স্ববর্ণে, কিন্তু ভিন্ন গােত্রে পাল-সেন যুগে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, স্ববর্ণ ও অস্ববর্ণ বিবাহরীতি (অনুলােম ও প্রতিলােম) প্রচলিত ছিল। বিবাহে যৌতুক দানের প্রথা ছিল। কৌলিন্য প্রথার সুযোগ নিয়ে কুলীন ব্রাহ্মণরা একাধিক বিবাহ করত।


উপসংহার: পরবর্তী সময়ে বিশেষত সুলতানি আমলে হিন্দু- মুসলমান সমাজে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হত। তুর্কি অভিজাতদের নানান গােষ্ঠীর মুসলমানরা হিন্দু নারীদের বিবাহ করেছিলেন।


প্রাচীন ভারতে ‘বর্ণ’ ও জাতি প্রথা সম্পর্কে বিশদভাবে আলােচনা করাে।


বৈদিক যুগের জাতি হিসেবে নিষাদ ও ব্রাত্য জাতির পরিচয় দাও।


বর্ণপ্রথার বৈশিষ্ট্য কী? 'বর্ণ' ও ‘জাতি'-র ধারণার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করাে।


'পতিত ক্ষত্রিয়' বা 'ব্রাত্য ক্ষত্রিয়' কাদের বলা হয়? ভারতীয় সমাজজীবনের সঙ্গে যবন, শক ও হুন জাতির মিলন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাজপুত জাতির উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্য ও রাজবংশের উত্থান সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নারীশিক্ষা সম্পর্কে আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)