বৈদিক যুগের জাতি হিসেবে নিষাদ ও ব্রাত্য জাতির পরিচয় দাও।

সূচনা: পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে জাতিভেদ প্রথার সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। এসময় বিভিন্ন নতুন পেশার উদ্ভবের ফলে বহু নতুন জাতির উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল আর্য সমাজব্যবস্থার বাইরে অবস্থানকারী [1] 'ব্রাত্য ও [2] 'নিষাদ নামে দুটি জাতিগােষ্ঠী। অথর্ব বেদ, শতপথ ব্রাহ্মণ, পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ প্রভৃতি গ্রন্থে ব্রাত্য ও নিষাদদের বৈদিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নানান বিধি-নিষেধের উল্লেখ পাওয়া যায়।


ব্রাত্য ও নিষাদ জাতির পরিচয়


[1] ব্রাত্য


  • পরিচয়: ব্রাত্যরা সম্ভবত আর্যজাতিরই একটি অংশ ছিল। ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন যে, ব্রাত্যরা সম্ভবত ব্রাহ্মণ্যধর্মবহির্ভূত আর্য ছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে, 'ব্রাত শব্দটি থেকেই 'ব্রাত্য" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ব্রাত' শব্দের অর্থ হল ‘দল’। অন্যদিকে অধ্যাপক দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন যে, ব্রাত্য কথাটি ব্রত' শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ব্রত থেকে পতিত বিধিবিরােধী গােষ্ঠী—এই অর্থে ব্রাত্য। তারা প্রাকৃত ভাষায় কথা বলত।


  • বৃত্তি: ব্রাত্য জাতিগােষ্ঠীর মানুষ আর্যদের মতাে কৃষিকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে গ্রামে বাস করত না। আর্যদের আদি বৃত্তি পশুপালনকে তারা জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে যাযাবর জীবনযাপন করত। পশুর পাল নিয়ে তারা দিনের পর দিন এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়াত।


  • ধর্ম-ভাবনা: ব্রাত্যরা ব্রাম্মণ্যধর্মের যজ্ঞানুষ্ঠান পালন করত না। তারা বেদের প্রতি শ্রদ্ধশীল ছিল না বা ব্রাম্মণ্যধর্মের বিধি-বিধান মানত না। তবে ইচ্ছা করলে ব্রাম্মণ্যধর্মের নির্দিষ্ট আচারঅনুষ্ঠান পালন করে তারাও ব্রাহ্ণ সম্প্রদায়ভুক্ত হতে পারত। ধর্মের দিক থেকে তারা ছিল শৈব।


[2] নিষাদ


  • পরিচয়: বৈদিক যুগের অপর একটি জাতি নিষাদরা ছিল অনার্য। নিষাদরা গ্রামাঞ্চলে বা বনেজঙ্গলে বাস করত। কোনাে কোনাে ইতিহাসবিদ বর্তমানকালের ‘ভিল’ নামে উপজাতিগােষ্ঠীকে বৈদিক যুগের নিষাদ জাতির সঙ্গে অভিন্ন বলে মনে করেন।


  • বৃত্তি: নিষাদরা খাদ্য-উৎপাদনকারী মানুষ ('Food- producing man') হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কেননা, তারা নিজেরা চাষবাস করত না।প্রধানত বনেজঙ্গলে পশু শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। গ্রামে কৃষিজমিতে বন্য পশুপাখির উৎপাত হলে তাদের হত্যা করে কৃষিকে রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। তারা বনের ফলমূল ও পশুপাখির মাংস খেয়ে বেঁচে থাকত। এজন্য তাদের অনেকটা খাদ্যসংগ্রহকারী মানুষ (Food- gathering man) হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।


  • ধর্ম-ভাবনা: নিষাদরা অনার্য হওয়ায় তাদের সমাজে বৈদিক ধর্মচর্চার কোনাে প্রশ্নই ছিল না। তারা নিজেদের প্রাচীন উপজাতীয় জীবনের ধর্মকেই পালন করত এবং নিজেরাই ছিল নিজ-সমাজের শাসক।


উপসংহার: পরবর্তী বৈদিক যুগে ব্রাত্য ও নিষাদদের শূদ্র বর্ণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। অবশ্য সমাজে তাদের স্থান হয় শুদ্রদের চেয়েও নীচে। অপবিত্র ও অস্পৃশ্য হিসেবে পরিগণিত এই জাতি দুটি ‘চণ্ডাল' নামে পরিচিত হয়।


স্পার্টার নাগরিকদের সঙ্গে সেখানকার পেরিওকয়দের সম্পর্ক আলােচনা করাে।


স্পার্টার নাগরিকদের সঙ্গে সেখানকার হেলটদের সম্পর্ক আলােচনা করাে।


বৈদিক যুগের বর্ণপ্রথার উদ্ভবের পটভূমি ও কারণ উল্লেখ করাে।


বৈদিক যুগের বর্ণব্যবস্থার পরিচয় দাও।


ঋগবৈদিক যুগে জাতিভেদপ্রথার উদ্ভব সংক্রান্ত বিতর্কটি উল্লেখ করাে। বর্ণ থেকে জাতিভেদপ্রথার উদ্ভব সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতে জাতিব্যবস্থার উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে ‘বর্ণ’ ও জাতি প্রথা সম্পর্কে বিশদভাবে আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)