সাম্রাজ্যবাদ বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলি সম্পর্কে লেখাে | ইউরােপের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশের ঔপনিবেশিক নীতি পর্যালােচনা করাে।

সাম্রাজ্যবাদ বিকাশের বিভিন্ন স্তর

[1] প্রথম স্তর: পণ্দশ শতকের শেষার্ধ থেকে যােড়শ শতকের মধ্যেই কলম্বাস, আমেরিগাে ভেসপুচি, সেবাস্টিয়ান ক্যাবট, পেড্রো আলভারেজ কেব্রাল প্রমুখের অভিযানগুলির ফলেই নতুন বিশ্বে ইউরােপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।


[2] দ্বিতীয় স্তর: ভৌগােলিক আবিষ্কারের পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শােষণের যুগ শুরু হয়। এই স্তরের সময়কাল আনুমানিক ১৭৬৩-১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। শিল্পবিপ্লব, অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রসার, ধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশ প্রভৃতির সুবাদে বাণিজ্যে উন্নত ইউরােপীয় দেশগুলি সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সময়কালে এশিয়া ও আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শাসনের আওতায় আসে।


[3] তৃতীয় স্তর: এই স্তরের সময়কাল আনুমানিক ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান কাল পর্যন্ত। এই সময়কালে এশিয়া, আফ্রিকার পূর্বতন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বজায় রাখার পাশাপাশি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি মধ্যপ্রাচ্যেও সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করে। বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ভূভাগ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির অধীনে চলে যায়।


ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদের ঔপনিবেশিক নীতি


[1] ইংল্যান্ডের: ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তােলার লক্ষ্যে হল্যান্ড, পাের্তুগাল, স্পেন এদের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে ইংল্যান্ডের পথচলা শুরু হয়। কিন্তু এদের সকলেরই উপনিবেশ অস্তাচলে গেলেও ইংল্যান্ডের উপনিবেশগুলির অস্তিত্ব বহুদিন বজায় থাকে। ব্রিটিশ উপনিবেশগুলির একদিকে ছিল কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতাে সাদা চামড়ার মানুষদের ওপর কায়েম হওয়া ব্রিটিশ উপনিবেশ। অপরদিকে ছিল ভারত-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও আফ্রিকায় কালাে চামড়ার মানুষদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ।


[2] ফ্রান্সের: নৌশক্তিতে বলীয়ান ফ্রান্সও দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আবিষ্কারের যুগে স্পেন ও পাের্তুগিজদের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ফ্রান্স উত্তর আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চল এবং ভারতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সর্ববৃহৎ শক্তি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিযােগিতায় লিপ্ত হয়। তৃতীয় ফরাসি প্রজাতান্ত্রিক সরকার সাম্রাজ্যবাদী বিদেশনীতি গ্রহণ করে। তৃতীয় নেপােলিয়ানের আমলে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ নতুন উদ্যম লাভ করে।


[3] ইটালির: ইটালি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারে লিপ্ত হয়নি। এক্ষেত্রে ইটালি জাতীয় মর্যাদা বিস্তারকেও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মূলত জার্মান রাষ্ট্রনায়ক বিসমার্কের মদতে ফ্রান্স টিউনেশিয়ার দখল নিলে ইটালি ফ্রান্স বিরােধ বাধে (১৮৮১ খ্রি.)। এরপর থেকেই ইটালি ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারে নিয়ােজিত হয়।


[4] জার্মানির: বিসমার্ক আদতে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার অপেক্ষা জার্মানির ঐক্য গঠনে অধিক আগ্রহী ছিলেন। বিসমার্কের পরে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বিসমার্কের Realpolitik নীতির পরিবর্তে Weltpolitik নীতি গ্রহণ করেন। উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিযােগিতায় জার্মানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় উইলিয়াম এক শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তােলেন।


[5] রাশিয়ার: উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কাল নাগাদ রাশিয়া ঔপনিবেশিক বিস্তারের লড়াইয়ে নামে। মধ্য এশিয়া এবং সাইবেরিয়া অঞ্চল জুড়ে রুশ সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটেছিল। মূলত রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের লক্ষ্যেই সােভিয়েত সাম্রাজ্যবাদ পরিচালিত হয়।


[6] আমেরিকার: আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরােপীয়দের উপনিবেশ স্থাপন আটকানাের লক্ষ্যে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে মনরাে নীতি ঘােষণা করে। রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আমেরিকা সামােয়া দ্বীপপুঞ্জ, ফিলিপিনস দ্বীপপুঞ্জ, গুয়াম ও ক্যারােলাইন দ্বীপপুঞ্জ দখল করে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপে নৌঘাঁটি নির্মাণ করে।