সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণগুলি লেখাে | সাম্রাজ্যবাদের তাৎপর্য বা পরিণতি লেখাে।

সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণসমূহ


[1] সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক কারণ


শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম, পাের্তুগাল, নেদারল্যান্ডস ইত্যাদি দেশ বাণিজ্যিক কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্যিক ঘাঁটি নির্মাণ করে। প্রথম দিকের এই বাণিজ্যিক লক্ষ্য পরবর্তীকালে শাসনগত লক্ষ্যে রূপান্তরিত হলে সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যাবসাবাণিজ্যের লক্ষ্য নিয়ে ভারতে এলেও পরে ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।


[2] সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক কারণ


  • জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারগা: হিটলারের মতাে রাষ্ট্রনায়কগণ দাবি জানিয়ে বলেন অনার্য জাতির ওপর প্রাধান্য বিস্তারের অধিকার রয়েছে আর্য জাতির। শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে নিজ নিজ জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে ইউরােপের বিভিন্ন দেশ। এর ফলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জার্মানির তরফ থেকে টিউটনিক জাতির, ব্রিটেনের তরফ থেকে অ্যাংলাে-স্যাক্সন জাতির, ফরাসিদের তরফ থেকে লাতিন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করা হয়।


  • রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা: অনেক সময় কোনাে কোনাে দেশ সাম্রাজ্যস্থাপনকে জাতীয় দম্ভ বা জাতিগত গৌরব বলে মনে করত। সাধারণত দুর্বল দেশগুলির ওপর আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে সবল দেশগুলিই নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে।


[3] সাম্রাজ্যবাদের সামাজিক কারণ


  • উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার পুনর্বাসন: উনিশ শতক থেকেই ইউরােপের বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যার চাপ বাড়তে থাকে। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অনেক সময় বহু দেশ নতুন নতুন ভূখণ্ড দখল করে। জার্মানি, জাপান ইত্যাদি দেশগুলি উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার পুনর্বাসনের অজুহাত দেখিয়ে একের পর এক দুর্বল দেশগুলির দখল নিলে সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ঘটে।


  • জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স রাইন নদী পর্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ডের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এর প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কারণ দেখিয়ে জার্মানি একের পর এক অঞ্চলের দখল নেয়। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে জাপান সুদূর প্রাচ্যে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় আধিপত্য বিস্তার করে।


[4] সাম্রাজ্যবাদের অন্যান্য কারণ


  • ধর্মপ্রচার: ইউরােপে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির ধর্মযাজকগণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ধর্মপ্রচারের কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। ধর্মপ্রচারের অন্তরালে তারা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে বজায় রাখার চেষ্টা চালান। প্রােটেস্টান্ট মিশনারিগণ খ্রিস্টধর্ম প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে আমেরিকায় যান। পরে তাদের এই ধর্মপ্রচারের উদ্যোগ আমেরিকায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। একইরকমভাবে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিতে খ্রিস্টান মিশনারিগণ খ্রিস্টধর্ম। প্রচারের নামে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত করে দেন।


  • সাংস্কৃতিক কারণ: অনেক সময় পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অংশে সভ্যতা ও সংস্কৃতির আলাে পৌঁছে দেওয়ার বাণী শুনিয়ে সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপােষকরা সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ও সম্প্রসারণ ঘটান।


সাম্রাজ্যবাদের তাৎপর্য / পরিণতি

[1] সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রসার: ইউরােপের বিভিন্ন দেশগুলি এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তুলে ইউরােপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছিল।


[2] আর্থিক শােষণ: শিল্পবিপ্লব ঘটে যাওয়ার পরে কে কত বেশি সংখ্যক উপনিবেশ নিজের দখলে রেখে বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তা নিয়ে প্রতিযােগিতা শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল উপনিবেশগুলি থেকে শিল্পের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করা এবং উপনিবেশগুলির বাজারে উৎপাদিত শিল্পজাত পণ্য বিক্রয় করা। এ ছাড়াও ইউরােপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি উপনিবেশগুলি থেকে অর্থ ও সম্পদ লুণ্ঠন ও শােষণ করতে শুরু করে।


[3] ঔপনিবেশিক সংঘাত: উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে মধ্য এশিয়াতে ইঙ্গ রুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র রূপ নেয়। সুদূর প্রাচ্যের জাপান সােভিয়েত অগ্রগতি রােধ করতে গেলে রুশ-জাপান দ্বন্দ্ব বাধে। মিশর এবং সুদান দখলকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে, মরক্কোকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে, টিউনিস অঞ্চলের দখল নিয়ে ফ্রান্স ও ইটালির মধ্যে বিবাদ বাধে।


উনবিংশ ও বিংশ শতকের সাম্রাজ্যবাদের ইতিবৃত্ত পর্যালােচনা করাে। সাম্রাজ্যবাদের তাৎপর্য লেখাে।


সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বােঝায়? সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন দিকগুলি আলােচনা করাে।


উপনিবেশবাদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করাে।