বৌদ্ধ ধর্মমত সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত ধর্মমত বৌদ্ধধর্ম নামে পরিচিত। বৌদ্ধধর্মের লক্ষ্য সম্পর্কে বুদ্ধদেব নিজে বলেছেন, "সমুদ্রের জলের যেমন স্বাদ একটাই এবং তা হল লবণাক্ত, আমার ধর্মের তেমন একটিই লক্ষ্য—তা হল মানুষকে দুঃখ থেকে মুক্ত করা।"


বৌদ্ধ ধর্মমত

[1] ধর্মচক্র প্রবর্তন: পরমজ্ঞান লাভের পর বুদ্ধদেব কাশীর কাছে ঋষিপত্তনে (সারানাথ)-র মৃগদাবে পঞ্চভিক্ষু অর্থাৎ পাঁচজন সন্ন্যাসীর কাছে তার লজ্ঞান বিতরণ করেন। এই ঘটনা ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে খ্যাত। এরপর ৪৫ বছর তিনি কাশী, কোশল, মগধ প্রভৃতি স্থানে ধর্মপ্রচার করেন।


[2] চারটি আর্যসত্য: বুদ্ধদেবের লক্ষ্যে ছিল দুঃখের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা|বুদ্ধের মতে, আসক্তির কারণে মানুষ মৃত্যুর পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। এভাবে জন্মান্তরক্রিয়া চলতে থাকে। এই দুঃখরূপ কর্মফল ভােগ (অর্থাৎ বারবার জন্মগ্রহণ) থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য বুদ্ধদেব মানুষকে চারটি ‘আর্যসত্য উপলব্ধি করার পরামর্শ দিয়েছেন। চারটি আর্যসত্য হল- [i] এ পৃথিবী দুঃখময়, [ii] মানুষের কামনা, বাসনা ও আসক্তি থেকেই দুঃখের সৃষ্টি হয় ('সমুদয়') [iii] কামনা, বাসনা ও আসক্তিকে নিবৃত্ত করতে পারলে মুক্তিলাভ সম্ভব (নিরােধ) এবং [iv] কামনা, বাসনা, আসক্তি দূর করার জন্য নির্দিষ্ট পথ (বা ‘মার্গ) অনুসরণ করা দরকার। আত্মার মুক্তিকে তিনি নির্বাণ নামে অভিহিত করেছেন।


[3] অষ্টাঙ্গিক মার্গ


  • পরিচিতি: আসক্তিমুক্ত হয়ে নির্বাগলাভের জন্য বুদ্ধদেব আটটি পথ বা অষ্টাঙ্গিক মার্গ (Eight Fold Path) অনুসরণ করতে বলেছেন। এই আটটি পথ হল- সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎসংকল্প, সৎচেষ্টা, সজীবিকা, সৎচিন্তা, সৎচেতনা ও সৎসমাধি।


  • মূল লক্ষ্য: অষ্টাঙ্গিক মার্গের মূল লক্ষ্য হল সৎ পথে থেকে অহিংসার মাধ্যমে সত্যকে উপলব্ধি করা। সামাজিক সংঘাত বর্জন করে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেব এই মার্গ অনুশীলনের ওপর বিশেষ জোর দেন।


  • শীল, চিত্ত ও প্রজ্ঞা: অষ্টাঙ্গিক মার্গের সঙ্গে তিনটি বিষয় গভীরভাবে জড়িত, যথাশীল, চিত্ত ও প্রজ্ঞা। শীল' হল নৈতিক শুদ্ধতা, চিত্ত' হল ধ্যানের দ্বারা মনের সংযম এবং প্রজ্ঞা' হল পরম জ্ঞান। ত্রিপিটকে ‘শীল’, ‘চিত্ত’ ও ‘প্রজ্ঞা’ এই তিনটি বিষয়ের অনুশীলনের কথা বলা হয়েছে।


  • মধ্যমপন্থা: বুদ্ধদেব নির্দেশিত এই কর্মগুলির মধ্যে যেমন চরম ভােগের প্রকাশ ছিল না, তেমনি ছিল না কঠোর কৃচ্ছসাধন। তাই এগুলিকে মধ্যপন্থা (middle path) বা মঝঝিম পন্থা নামে অভিহিত করা হয়েছে।


[4] পঞ্চশীল: বুদ্ধদেব তার অনুগামীদের কয়েকটি নৈতিক আচরণবিধি পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যথা-চুরি না করা, ব্যভিচারী না হওয়া, অসত্য পরিহার করা, হিংসা না করা এবং সুরাপান না করা। এই নীতিগুলি 'পঞ্চশীল' নামে পরিচিত।


[5] বৌদ্ধসংঘ: সংঘ হল ত্রিরত্ন (বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ) এর একটি রত্ন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠিত ও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেব সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সংঘের সদস্য হতে পারতেন। আট বছর বয়সের যেকোনাে নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সংঘে প্রবেশ করতে পারত।


[6] বৌদ্ধ সাহিত্য: বুদ্ধের দেহত্যাগের পরে রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি (সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বুদ্ধের উপদেশগুলি তিনটি খণ্ডে সংকলিত করা হয়। এই খণ্ডগুলি বিনয় পিটক, সুত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক নামে পরিচিত। তিনটি পিটক একত্রে ত্রিপিটক নামে খ্যাত। বিনয় পিটক-এ বুদ্ধ নির্দেশিত ধর্মীয় আচার, সুত্র পিটকে তাঁর ধর্মীয় উপদেশাবলি এবং অভিধর্ম পিটকে বৌদ্ধদর্শনের কথা লিপিবদ্ধ আছে। বুদ্ধের জীবন কাহিনি ভিত্তিক জাতক উপাখ্যানগুলিও বৌদ্ধ সাহিত্যের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়।


[7] শিষ্যগণ: মগধরাজ বিম্বিসার, অজাতশত্রু, কোশলরাজ প্রসেনজিৎ-সহ বহু পুরুষ ও নারী তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বুদ্ধের শিষ্যরা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলেন, যেমন—উপাসক ও ভিক্ষু। যাঁরা শিষ্যত্ব গ্রহণ করেও সংসারধর্ম পালন করতেন, তারা উপাসক এবং যারা সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করতেন তাঁরা ভিক্ষু নামে পরিচিত।


ক্রুসেডের প্রভাব বা ফলাফল আলােচনা করাে।


খলিফা যুগ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করাে।


পবিত্র খলিফাদের শাসনব্যবস্থা সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

অথবা, খােলাফায়ে রাশেদিন অমলের শাসনব্যবস্থা আলােচনা করাে।


ঋগবৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনের নানা দিক এবং পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনের নানা দিকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


Polytheism অর্থাৎ বহুত্ববাদ বা বহু দেবতাবাদ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


প্রাচীন গ্রিস ও রােমে বহুদেবত্ববাদের অস্তিত্ব এবং বহুদেবত্ববাদের পতনের মূল কয়েকটি কারণ লেখাে।


খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতে নব্য (প্রতিবাদী) ধর্মীয় আন্দোলনের উত্থানের প্রেক্ষাপট ও পটভূমি আলােচনা করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)