'দাস' বা 'ক্রীতদাস'-এর সংজ্ঞা দাও। গ্রিসের ক্রীতদাস সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।

সংজ্ঞা: 'দাস' বা 'ক্রীতদাস'

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দাস বা ক্রীতদাসের সংজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলি হল—[1] সাধারণত, যেসব শর্তের ওপর ভিত্তি করে কোনাে বস্তু বা সম্পদকে কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বলা চলে, সেগুলির কোনাে এক বা একাধিক শর্ত যদি কোনাে মানুষের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হলে, ওই মানুষটিকে 'দাস' বলা হয়। সম্পত্তির মতাে ওই মানুষটিরও একজন মালিক বা প্রভু থাকে। [2] অ্যারিস্ট বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি মানুষ হয়েও সম্পত্তি মাত্র, সে অন্যের অধীন। সে বিষয়েসামগ্রী পরিচালনা বা দেখাশােনার উদ্দেশ্য নিযুক্ত যন্ত্র মাত্র এবং তার সত্তা মালিকের সত্তার থেকে পৃথক৷” তিনি আরও বলেন যে, দাসপ্রথা প্রকৃতির নিয়ম এবং দাসদের পক্ষে তা কল্যাণকর। [3] ডিও ক্রাইস্টম বলেছেন যে, "গবাদি পশু বা অন্য কোনো সম্পত্তির মতােই দাসেরও প্রভু থাকে। প্রভু নিজের ইচ্ছামতাে তার অধীনস্থ দাসকে ব্যবহার করতে পারে।"


গ্রিসের ক্রীতদাস সমাজের বৈশিষ্ট্য


প্রাচীন গ্রিসের দাসপ্রথার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। নীচে এগুলি উল্লেখ করা হল-


[1] দাস সৃষ্টি: প্রাচীন গ্রিসে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে দাসপ্রথা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এযুগে—[i] শ্যুপক্ষের বিভিন্ন যুদ্ধবন্দি ও জলদস্যুদের বন্দি করে, [ii] বাণিজ্যজাহাজ আক্রমণ করে বা সমুদ্র-তীরবর্তী জনপদ থেকে লােকজন ধরে নিয়ে, [iii] ঋণপরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তি বা অপহৃত শিশুকে দাস হিসেবে বিক্রি করে, [iv] কখনাে কখনাে অভাবের তাড়নায় বা অর্থলােভে কোনাে পিতা তার সন্তানকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দাসে পরিণত করা হত।


[2] দাস আমদানি: চাহিদার তুলনায় সেখানে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসের সংখ্যা বেশ কম ছিল। এজন্য বাইরে থেকে ক্রীতদাস এনে সেই চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হত। গ্রিসের বেশিরভাগ দাসই বিদেশ থেকে আসত।


[3] দাস-বাজার: গ্রিসে ক্রীতদাস কেনাবেচা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায় পরিণত হয়েছিল এবং দাস কেনাবেচার জন্য অধিকাংশ গ্রিক রাষ্ট্রেই দাস-বাজার ছিল। 'কিওস' নামে নগর- রাষ্ট্রটিতে সর্বপ্রথম অর্থের বিনিময়ে দাস কেনাবেচা হত বলে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন। এরপর একে একে এথেন্স, করিন্থ, ডেলস, ইজিনা প্রভৃতি নগররাষ্ট্রে দাস বাজার গড়ে ওঠে।


[4] কাজের দায়িত্ব: প্রিসে দাসদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করা হত। এগুলি হল—[i] অধিকাংশ দাস গৃহভৃত্য হিসেবে কাজ করত| প্রভুর গৃহে রান্নাবান্না, শস্য ঝাড়াই, কাপড় বােনা, গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ ছাড়াও প্রভুর সেবা, জিনিসপত্র বহন করা প্রভৃতি কাজও দাসরা করত। [ii] প্রভু তার দাসকে নিজের ব্যাবসাক্ষেত্রে বা উৎপাদনকার্যে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে বা অন্যত্র ভাড়া খাটিয়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করত।


উপসংহার: প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাসদের অবস্থান ছিল সমাজের সবচেয়ে নীচের স্তরে। গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে এদের সামাজিক অবস্থানের প্রকৃতিগত কিছু পার্থক্য থাকলেও ক্রীতদাসপ্রথার মূল কাঠামােটি কিন্তু সব জায়গায় একই রকম ছিল।


প্রাচীন ভারতের এবং মধ্যযুগের ইউরােপের বাণিজ্যের একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নগরের উৎপত্তির প্রধান কারণগুলি কী ছিল? প্রাচীন ভারতে নগরায়ণের ইতিহাস সংক্ষেপে উল্লেখ করাে।


গুপ্তযুগে ভারতে নগরের অবক্ষয়ের কারণগুলি আলােচনা করাে। প্রাচীন ভারতে নগরায়ণের সুফল উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতের এবং মধ্যযুগের ইউরোপের নগরায়ণের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক বিবরণ দাও।


প্রাচীন রােম ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রাচীন গ্রিসের সমাজকে 'দাস সমাজ হিসেবে অভিহিত করা সম্পর্কিত বিতর্কটি উল্লেখ করাে।


History সব প্রশ্ন উত্তর (একাদশ শ্রেণীর)