প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনামূলক বিবরণ দাও।

প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন ভারতের দাসপ্রথার তুলনা


প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস প্রথা

  • বিভিন্ন ভাবে মিশরে দাসদের সংগ্রহ করা হত। যেমন- (i) শত্রুপক্ষের সৈন্যদের পরাজিত ও বন্দি করা। (ii) দরিদ্র পিতামাতাদের নিজের সন্তানদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া। (ii) মহাজন কর্তৃক ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তিকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া প্রভৃতি উপায়ে মিশরে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত। (iv) জন্মসূত্র প্রভৃতি উপায়ে মিশরে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত।


  • মিশরের সমাজে দাসরা রামান সমাজের মতাে ততখানি অবহেলিত ছিল না। তারা মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হলেও কিছু কিছু নাগরিক অধিকারও ভােগ করত। অনেক ক্ষেত্রে সমাজে তাদেরকে সাধারণ স্বাধীন মানুষের পর্যায়ভুক্ত বলে মনে করা হত।


  • মিশরে অধিকাংশ ক্রীতদাস গৃহের রান্নাবান্না, গৃহ পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ, ফ্যারাও, অভিজাত ও পুরােহিতদের স্থাবর সম্পত্তিতে কাজ প্রভৃতি করত।


  • মিশরের ক্রীতদাসরা বেশ কিছু স্বাধীনতা ভোগ করত বলে জানা যায়। অনেক ক্রীতদাসের পক্ষে উচ্চ সরকারি পদলাভ, দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের পর পূর্বতন প্রভুর পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপন প্রভৃতিও সম্ভব হত।


  • মিশরের কৃষি, শিল্প ও পরিশ্রমসাধ্য নির্মাণ কাজগুলি। ক্রীতদাসদের দ্বারাই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। ক্রীতদাসদের শ্রমের ফলে মিশরের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে সেদেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল।


  • (i) নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তার প্রভুর জীবন রক্ষা, (ii) ঋণের দায়ে দাসত্ব গ্রহণে বাধ্য কোনাে ক্রীতদাস কর্তৃক ঋণ পরিশােধ, (iii) মুক্তিমূল্য প্রদান প্রভৃতি উপায়ে মিশরের দাসরা মুক্তি পেতে পারত।


প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস প্রথা

  • ঋগবৈদিক যুগে ‘দস্যু’রা আর্যদের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ‘দাস’-এ পরিণত হত। মৌর্যযুগে যুদ্ধে বন্দি হওয়া, দারিদ্র্য, আত্মবিক্রয়, শাস্তি, জন্মসূত্র প্রভৃতি হল এযুগের দাসত্বের উৎস। গুপ্তযুগেও অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে তাদের দাসে পরিণত করা হত। এছাড়াও এযুগে দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যের জন্য কেউ কেউ স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করত।


  • ভারতীয় সমাজে স্বাধীন নাগরিক ও দাসদের মধ্যে ভেদরেখা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। ভারতীয় দাসরা সেই অর্থে গৃহভৃত্যের সমগােত্রীয় ছিল। ভারতের দাস ব্যবস্থায় অনেক কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতা থাকলেও তা রোমের ক্রীতদাসদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের সমতুল ছিল না।


  • ভারতের দাসরা তাদের প্রভুর পরিবারে গৃহস্থালির কাজ, প্রভুর কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন করত শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদনের কাজ প্রভৃতি করত।


  • কৌটিল্য তাঁর 'অর্থশাস্ত্রে' দাসদের কয়েকটি বিশেষ অধিকারের উল্লেখ করেছেন- (i) প্রভুর কোনাে ক্ষতি না করে অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয়ের অধিকার এবং (ii) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ভােগ-দখলের অধিকার।


  • প্রাচীন ভারতে দাসদের সংখ্যা তৎকালীন ভারতীয় শ্রমিকদের সংখ্যার অনুপাতে খুবই কম ছিল। তাই তৎকালীন অর্থনৈতিক উৎপাদনে দাসদের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদেরই বেশি অবদান ছিল।


  • কোনাে কোনাে ক্রীতদাস—(i) তার সঞ্চিত অর্থ প্রভুর হাতে এককালীন প্রদান করলে, (ii) সারাজীবন ধরে তার প্রভুর প্রতি গভীর আনুগত্য দেখালে, (iii) কোনো সংকট থেকে প্রভুর প্রাণ রক্ষা করলে, প্রভু ক্রীতদাসটির প্রতি সদয় হয়ে তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিত।


ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনীতিতে ইন্দো-রােম বাণিজ্যের প্রভাব কী ছিল? ভারতীয় উপমহাদেশের তৃতীয় নগরায়ণের কারণগুলি কী কী?


প্রাচীন ভারতের গিল্ডগুলির সাংগঠনিক কাঠামাে কেমন ছিল? গিল্ডগুলির জনপ্রিয়তার কারণ কী ছিল?


প্রাচীন ভারতের গিল্ড বা সংঘগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখাে। গিল্ডের পতনের কারণ কী ছিল?


প্রাচীন ভারতের এবং মধ্যযুগের ইউরােপের বাণিজ্যের একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।


প্রাচীন ভারতে নগরের উৎপত্তির প্রধান কারণগুলি কী ছিল? প্রাচীন ভারতে নগরায়ণের ইতিহাস সংক্ষেপে উল্লেখ করাে।


গুপ্তযুগে ভারতে নগরের অবক্ষয়ের কারণগুলি আলােচনা করাে। প্রাচীন ভারতে নগরায়ণের সুফল উল্লেখ করাে।


প্রাচীন ভারতের এবং মধ্যযুগের ইউরোপের নগরায়ণের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলােচনা করাে।