ভূপ্রকৃতি ও জনবসতির সম্পর্ক
ভূপ্রকৃতি ও জনবসতির সম্পর্ক
প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ভূপ্রকৃতিই জনবসতির বণ্টন, শ্রেণিবিভাগ ও নকশাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ভূমির ঢাল ও বন্ধুরতার সঙ্গে জনবসতির একটি ঋণাত্মক সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। আলােচ্য মানচিত্রের প্রধান ভূপ্রকৃতিকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (১) 200 ও 300 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নদীগঠিত সমভূমি এবং (২) প্রান্তদেশীয় খাড়া ঢালযুক্ত অতিবন্ধুর ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। এই অঞ্চলের জনবসতির তারতম্য সম্বন্ধে আলােচিত হল।
(1) নদীগঠিত সমভূমি ও জনবসতি : প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে প্রদর্শিত প্রায় শতকরা 95 ভাগ বসতি সমভূমি অংশে গড়ে উঠেছে। এই অংশের বসতিকে বণ্টনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- অতি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।
অতি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল : অতি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি দুটি অংশে বিভক্ত। যথা (i) সবচেয়ে বিস্তৃত অংশটি, সিমলিপাল উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের নিম্ন সমপ্রায় ভূমিতে বিস্তৃত। উর্বর কৃষিজমি ও উন্নত যােগাযােগ ব্যবস্থা থাকায় এই অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিশল নামক গ্রামটি একটি বড়াে গােষ্ঠীবন্ধ জনবসতির উদাহরণ। (ii) সংকীর্ণ অতি ঘনবসতিপূর্ণ অংশটি একটি সরু লম্বা ফালির আকারে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে দুটি উচ্চভূমির মাঝে গঠিত উপত্যকার ওপর বিস্তৃত। পােস্ট অফিস ও বড়াে জলাশয়কে কেন্দ্র করে কুসুমবাম্ধা নামে একটি বড়াে গােষ্ঠীবন্ধ গ্রাম গড়ে উঠেছে। সমতল ভূভাগ ও উর্বর কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে এই অংশে প্রচুর গােষ্ঠীবদ্ধ বসতি গড়ে উঠেছে। এই নদী-গঠিত সমভূমির পূর্বাংশের বিস্তৃত এলাকায় যেখানে ছােটো ছােটো তরঙ্গায়িত ভূভাগের ওপর স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে।
ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল : ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল একটানা বিস্তৃত নয়। কৃষিজমির প্রাপ্যতা, জলের উৎস ও পায়ে চলার পথের সুবিধা অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে গােষ্ঠীবদ্ধভাবে বসতিগুলি গড়ে উঠেছে। জারাকি (C1), মাণিকপুর (B1), মুণ্ডাঠাকুরা (A1), সরজামডিহি (B3), পলাশডিহি (C2) প্রভৃতি প্রধান বসতিপূর্ণ গ্রাম। পাহাড়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নীচু সমতল স্থানগুলির বনভূমি পরিষ্কার করে খুবই বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বসতি গড়ে উঠেছে। এই পাহাড়ি এলাকার পূর্বাংশে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি হ্যামলেট দেখা যায়, যেমন—ভিজিদিহি, তারনা, দুয়ারশুনি, বাচ্চুরিবান্ধা প্রভৃতি।
(2) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ও জনবসতি : ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চলটি অত্যন্ত বন্ধুর এবং ভূগুঢালযুক্ত। খুবই খাড়া ঢালে এর প্রান্তভাগ সমভূমির সঙ্গে মিশেছে। এ ছাড়া, মালভূমির সর্বত্র ঘন বনভূমিতে পরিপূর্ণ। তাই মালভূমির পাদদেশীয় অংশে কিছু বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে। বসতিগুলি অতি দূরে দূরে যােগাযােগহীন অবস্থায় এক-একটি ছােটো পাড়া হিসেবে গড়ে উঠেছে। যেমন-পাহাড়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নীচু সমতল স্থানগুলির বনভূমি পরিষ্কার করে খুবই বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বসতি গড়ে উঠেছে। এই পাহাড়ি এলাকার পূর্বাংশে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি হ্যামলেট দেখা যায়, যেমন—ভিজিদিহি, তারনা, দুয়ারশুনি, বাচ্চুরিবান্ধা প্রভৃতি। এ ছাড়া, দক্ষিণভাগে সিমলিপাল উচ্চভূমির খাড়াটালের স্থানে স্থানে কম বসতি গড়ে উঠেছে।
তবে দক্ষিণে সিমলিপাল উচ্চভূমি অতি খাড়া ঢালের ভৃগুতে পরিপূর্ণ হওয়ায় ও ঘন বনভূমিতে ঢাকা বলে বিস্তীর্ণ এই এলাকা সম্পূর্ণরূপে বসতিহীন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ভূপ্রকৃতির সঙ্গে জনবসতির সম্পর্ক ট্রানজেক্ট চার্টের মাধ্যমে দেখানাে হল।
রাশিতথ্যের (Data) শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।