পরিসংখ্যা বহুভুজ ও পরিসংখ্যা রেখার পার্থক্য | মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব | আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থায় কৃত্রিম উপগ্রহের প্রভাব

পরিসংখ্যা বহুভুজ ও পরিসংখ্যা রেখার পার্থক্য

মধ্যবিন্দুর সাপেক্ষে প্রত্যেক শ্রেণির পরিসংখ্যাকে উল্লম্ব অক্ষে বসিয়ে চিহ্নিত বিন্দুগুলিকে সরলরেখায় যােগ করে পরিসংখ্যা বহুভুজ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে উক্ত বিন্দুগুলিকে মসৃণ বক্ররেখায় যােগ করে পরিসংখ্যা রেখা প্রকাশ করা হয়।



মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব


ট্রপােস্ফিয়ারের বায়ুসঞ্চালন, বিশেষত জেট স্ট্রিম ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট স্ট্রিম ও ক্রান্তীয় পুবালি জেট স্ট্রিম দুয়েরই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে উপক্ৰান্তীয় পশ্চিমি জেট স্ট্রিম শীতকালে এবং ক্রান্তীয় পুবালি জেট স্ট্রিম বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে বেশি প্রভাবিত করে।


  • ক্রান্তীয় পুবালি জেট স্ট্রিম : ক্রান্তীয় পুবালি জেট স্ট্রিম জুন মাসে ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় এই বায়ুস্রোত চিনের দক্ষিণ উপকূল থেকে আরম্ভ করে (12° থেকে 15° উত্তর অক্ষাংশ বারবর) থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপদ্বীপ পেরিয়ে পূর্বদিকে সুদান হয়ে সাহারায় গিয়ে শেষ হয়। এর মধ্যে পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে পশ্চিমে ভারত পর্যন্ত এর গতিবেগ খুব বেশি (ঘণ্টায় 100-200 কিমি) থাকে এবং ক্রমশ পশ্চিমে তা হ্রাস পায়। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বহুলাংশে এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যদি এটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তরে সরে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে ছেদ (break of monsoon) ঘটে। এ ছাড়া, বর্ষাকালে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় এবং সেগুলির তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।


  • উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট স্ট্রিম : উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট স্ট্রিম অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ অর্থাৎ, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার সময় থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর আবির্ভূত হয় এবং তখন থেকে প্রায় মে মাস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের শীতের তীব্রতা এই উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট স্ট্রিমের অবস্থান ও সক্রিয়তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এই বায়ুস্রোতটি শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে আসে, শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিণে আসে এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোতটি হিমালয়ে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আরও পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়। এইভাবে বায়ুস্রোতটি যখন দুটি শাখায় ভাগ হয়, তার গতিবেগ হ্রাস পায় এবং আবার মিলিত হলে গতিবেগ বৃদ্ধি পায়।


প্রকৃতপক্ষে, মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ওপর জেট স্ট্রিমের প্রভাব যথেষ্ট। মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত দেশগুলিতে ঋতুর স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত, ঋতুপরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুপ্রবাহের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।


আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থায় কৃত্রিম উপগ্রহের প্রভাব


বর্তমান যুগকে বলা হয় উপগ্রহ পরিসেবার যুগ। উপগ্রহ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক যােগাযােগ পরিসেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। টেলিফোন ও মােবাইল ফোনের সাহায্যে বিশ্বের যে-কোনাে স্থানে দ্রুত সংবাদ আদানপ্রদান করা যায়। চিকিৎসা করার জন্য দেশ ও বিদেশের যে-কোনাে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করা যায়। একে টেলি-মেডিসিন বলে। এ ছাড়াও শিক্ষার প্রসার ও বিনােদনের ক্ষেত্রেও উপগ্রহগুলির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মধ্যে টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থা, টেলিভিশন ব্যবস্থা, আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যপ্রদান, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে পূর্বাভাস, ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার করা প্রভৃতি কার্যের জন্যও উপগ্রহের ব্যবহার ব্যাপক।