ভারতে তৈরি পােশাক শিল্প উন্নতি লাভের কারণ

ভারতে তৈরি পােশাক শিল্প উন্নতি লাভের কারণ

ভারতে তৈরি পােশাক শিল্প এমনই একটি শিল্প, যা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ভূপ্রাকৃতিক কারণের দ্বারাই প্রভাবিত হয় না, পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলির দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হয়।


  • কাঁচামালের জোগান: যে-কোনাে ধরনের তৈরি পােশাক শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাঁচামাল আবশ্যিক উপাদান। সুতি বস্ত্রের ক্ষেত্রে কার্পাস ও পাটের সুতাে, সিল্ক বস্ত্রের ক্ষেত্রে রেশম সুতাে, পশমের ক্ষেত্রে উলের জোগান যেখানে বেশি সেখানে পােশাক তৈরির কারখানাগুলি গড়ে ওঠে। যেমন— মহারাষ্ট্র, গুজরাত অঞ্চলের মৃত্তিকা, জলবায়ুগত পরিবেশের প্রভাবে আমেদাবাদ, সুরাত, ভাদোদরা, মুম্বাই, পুনে, নাসিক প্রভৃতি অঞ্চলে সুতিবস্ত্র, কৃত্রিম তমিশ্রিত বস্ত্র শিল্প এবং সেই সঙ্গে পােশাক তৈরি শিল্প গড়ে উঠেছে। আবার, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ অঞ্চলে মেষচারণের আধিক্যের জন্য পশম শিল্প সহজে গড়ে উঠেছে।


  • জলবায়ু: জলবায়ু বস্ত্রের প্রকৃতি নির্ধারণেও সাহায্য করে। যেমন জলবায়ু উয় হলে জামাকাপড় হালকা প্রকৃতির হয় এবং জামাকাপড়ে রঙের আধিক্য কম থাকে। তাই দক্ষিণ ভারতে পােশাকের রঙে সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। আবার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে শীতল জলবায়ুর জন্য পশমের পােশাক ও মােটা কাপড়ের পােশাক উৎপাদনে উৎসাহ দেয়। রাজস্থানি ছেলেমেয়েদের পােশাকে বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙের উপস্থিতি ও চাকচিক্যের পেছনে ওই অঞ্চলের রুক্ষ ভূপ্রকৃতি দায়ী বলে মনে করা হয়।


  • ভূমিরূপ: কার্পাস ও পাট থেকে সুতাে উৎপাদনের জন্য কার্পাস ও পাটের চাষ ভালােভাবে হওয়া প্রয়ােজন। আবার উলের বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভেড়া প্রতিপালন যথায়থ হওয়া প্রয়ােজন। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট জলবায়ুগত ও ভূপ্রকৃতিগত কারণ কাজ করে। যেমনসামুদ্রিক আবহাওয়ায় কা্পাসগুটি থেকে সুতাের টান শক্ত হয়। ফলে কার্পাস থেকে সুতিবস্ত্র শিল্পও ওই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই বিকাশ লাভ করে। একইভাবে ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গের মৃত্তিকা, জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি পাট চাষের পক্ষে অনুকূল। তাই পাটকে নির্ভর করে যে সকল বয়নশিল্পের কারখানা গড়ে উঠেছে, তাকে কেন্দ্র করে তৈরি পােশাকের কারখানাও গড়ে উঠেছে। এগুলি মূলত হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেখা যায়।


  • সামাজিক আচার ও নীতি: যে-কোনাে অঞ্চলের অধিবাসীদের পােশাক-পরিচ্ছদের প্রকৃতি অনেকক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট সমাজের সামাজিক রীতিনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের সাধারণ পরিধেয় শাড়ি হওয়ায় এখানে তাঁতবস্ত্র কারখানার আধিক্য দেখা যায়। বর্তমানে শাড়ি ছাড়া অন্যান্য পােশাকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার, দক্ষিণ ভারতে শাড়ির প্রচলন থাকলেও তা পরিধেয়ের ক্ষেত্রে বিশেষত্ব থাকায় তৈরি পােশাকের আধিক্য ও বৈচিত্র্য ঘটেছে। একইভাবে দক্ষিণ ভারতে ছেলেদের পােশাকের ক্ষেত্রে লুঙ্গি প্যাটার্নের ধুতির প্রচলন ওই ধরনের পােশাকের উৎপাদনে ভূমিকা গ্রহণ করে।


  • আর্থিক মর্যাদা: কোনাে ব্যক্তি এবং গােষ্ঠীর আর্থিক মর্যাদাও সেই অঞ্চলে তৈরি পােশাক শিল্পের অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনাে ব্যক্তি বা গােষ্ঠীর আর্থিক মর্যাদা যত বেশি হয়, তাদের ক্রয়ক্ষমতা তত বৃদ্ধি পায়। ফলে সেই আর্থিক চাহিদা অনুযায়ী বস্ত্রবিপণিগড়ে ওঠে এবং পােশাক শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি করে।


  • আন্তর্জাতিক প্রভাব: বর্তমান ভারতে তৈরি পােশাক শিল্পের বৃদ্ধি ও প্রকৃতির সাম্প্রতিকতম নিয়ন্ত্রক হল খােলাবাজারি ও আন্তর্জাতিকতাবাদ।