সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা এবং ওই কার্যাবলি পরিচালনার নীতিগুলি আলােচনা করাে।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা নিয়ে আধুনিক শিক্ষাবিদদের মধ্যে তেমন কোনো মতবিরোধ নেই। নীচে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব আলােচনা করা হল一


(১) শিক্ষার্থীর চাহিদার পরিতৃপ্তি: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর চাহিদার পরিতৃপ্তিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়।


(২) সামাজিক বিকাশ: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির যথাযথ সংগঠনের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযােগিতা, সমবেদনা, ভ্রাতৃত্ববােধ, পারস্পরিক বােঝাপড়া প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটে, যা প্রতিটি সমাজের পক্ষে বিশেষ প্রয়ােজনীয়।


(৩) আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তােলার ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়। শিক্ষার্থী যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়গুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযােগ পায়।


(৪) একঘেয়েমি দুরীকরণ: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়জীবনের গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি দেয়। বিভিন্ন সৃষ্টিশীল, বিনােদনমূলক, ক্লীড়ামূলক অনুষ্ঠান আয়ােজনের মাধ্যমে বিদ্যালয় তাদের কাছে এক আনন্দনিকেতন হয়ে ওঠে।


(৫) শৃঙ্খলা গঠন: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রতিটি কাজ সম্পাদন করতে গেলে শিক্ষার্থীদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।


(৬) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ: বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে অনেক সময় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়শিক্ষার্থীরা সেই সমস্ত বৃত্তি প্রশিক্ষণ নিয়ে বার বার সেপুলির অনুশীলন করে। তারা এই শিক্ষাগুলি এমনভাবে আয়ত্ত করে, যে তা কোনাে কোনাে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের জীবিকা অর্জনে সহায়তা করে।


(৭) অবসরযাপনের শিক্ষা: বিদ্যালয়ে যারা প্রত্যক্ষ বা সক্রিয়ভাবে সহপাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণ করে, তাদের অবসরযাপনের অসুবিধা হয় না। তারা সমাজ স্বীকৃত পথে যথাযথভাবে অবসরের সময় কাটাতে পারে।


(৮) শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক: বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অনুশীলন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে অনেক বেশি প্রাণবন্ত করে। সেই কারণে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষাগত পুরুত্ব বিদ্যালয়শিক্ষায় অনস্বীকার্য।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার নীতি


বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে মােটামুটিভাবে যে নীতিগুলি মেনে চলা উচিত তা নিয়ে আলােচনা করা হল一


(১) স্বতঃস্ফুর্ত নির্বাচন: বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে তার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবেই শিক্ষার্থী সেগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। আর তার ফলেই তার সার্বিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে।


(২) বিদ্যালয়ের সময়সূচিতে স্থান দান: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যেহেতু শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক, তাই তাকে বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যেই স্থান দিতে হবে।


(৩) স্বল্প গুরুত্ব প্রদান: বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনা করতে গিয়ে পাঠক্রমিক কার্যাবলি বা শ্রেণির কাজকে ব্যাহত করা চলবে না।


(৪) অংশগ্রহণে নিয়ন্ত্রণ: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে কেবলমাত্র বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।


(৫) যােগ্য শিক্ষক নির্বাচন: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির সাফল্য নির্ভরশীল সেই শিক্ষক-শিক্ষিকার ওপর, যাঁরা ওই কার্যাবলি সংগঠিত করেন। কেবলমাত্র যােগ্য ও পারদর্শী শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই নির্দিষ্ট কাজের ভার দিতে হবে।


(৬) নেতৃত্বের মর্যাদা দান: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠিত করার সময় বহু ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষার্থীর বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার সামথ্যের বিকাশ ঘটবে, তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতাকে মর্যাদা দিতে হবে। তাহলে আগামি দিনে তারা আরও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করবে।


(৭) শৃঙ্খলা রক্ষা: বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেদিকে যথেষ্ট নজর দিতে হবে


(৮) বাধ্যতামূলক প্রয়ােগ: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবে শিক্ষার্থী তার ইচ্ছানুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবে। সেদিকে প্রয়ােজনীয় স্বাধীনতা তাকে দেওয়া হবে।


(৯) আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান: বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকভাবে প্রয়ােজনীয় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে।


(১০) উপকরণ ও অর্থ প্রদান: বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাের ব্যবস্থা করতে হবে।


(১১) কার্যাবলির মূল্যায়ন: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা রেকর্ড কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই সমস্ত রেকর্ড কার্ড থেকে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বা পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হবে।


(১২) অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ: বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে কী কী বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অনুশীলন করানাে হচ্ছে। এবং শিক্ষার্থীরা কোন্ বিভাগে কীরূপ সাফল্য পাচ্ছে তা অভিভাবক-অভিভাবিকাদের দৃষ্টিতে আনতে হবে।


পাঠক্রমের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


পাঠক্রম কী? কারিকুলাম কথাটি কোন্ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং এর অর্থ কী? পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।


অভিজ্ঞতাভিত্তিক, জীবনকেন্দ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযােগিতা লেখাে।


পাঠক্রম প্রণয়নের উপাদানগুলি উল্লেখ করাে।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ধারণা এবং সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্যগুলি আলােচনা করাে।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রকারভেদ আলােচনা করাে।