সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ধারণা এবং সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ধারণা

'সহপাঠক্রমিক' শব্দটি শিক্ষাতত্ত্ব বা শিক্ষাবিজ্ঞানে খুব বেশি পুরােনাে নয়। আসলে গতানুগতিক ও প্রাচীন শিক্ষাতত্ত্বে আগে এই ধরনের কোনাে শব্দ ব্যবহৃত হত না| কারণ পুরোনো ধারণা অনুযায়ী শরীরচর্চা, খেলাধুলাে, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয়গুলিকে শিক্ষার প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করা হত। মনে করা হত—ওই সমস্ত কার্যাবলি শিক্ষার্থীর জীবনে মূল্যহীন। তাই তাদের পাঠক্রমে সংযােজন করার কোনাে প্রশ্নই ছিল না। বরং ছাত্রছাত্রীরা যাতে ওই ধরনের কাজ থেকে দূরে থাকে, সেই চেষ্টাই চালানাে হত। এর মূল কারণ তৎকালীন সময়ে শিক্ষা ছিল একেবারেই পুথিকেন্দ্রিক। আর শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ।


সময়ের সাপেক্ষে শিক্ষায় কিছু পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক চিন্তাভাবনার অনুপ্রবেশ ঘটে। তাই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের পরিবর্তে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর ‘সর্বাঙ্গীন বিকাশ’-কে শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শিক্ষাবিদরা উপলব্ধি করেন যে, কেবল শিক্ষার্থীর মনের বিকাশ হলেই চলবে না। মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। তাই পাঠক্রমে খেলাধুলাে, নৃত্যগীত, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, সমাজসেবা ইত্যাদি কর্মমূলক প্রচেষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থী যাতে 'সম্পূর্ণ সুযােগ্য নাগরিক’-এ পরিণত হয়—তার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে। এখন জানা প্রয়ােজন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি কী?


সংজ্ঞা


মনােবিদ এইচ. এন. রিভলিন (H. N. Rivlin) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, যেসব কার্যাবলি শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জীবনবিকাশের অন্য দিকগুলিকেও সার্থক করে তােলে, তাদের বলা হয় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি।


সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বৈশিষ্ট্য


(১) সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক হয়। শিক্ষার্থীরা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশ নিলে তাদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক বিকাশ ঘটে। তারা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে মানিয়ে নিতে শেখে।


(২) বৈচিত্র্যময় : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি দৈনন্দিন বাঁধাধরা পুথিগত শিক্ষার কাজ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়। তাদের মধ্যের একঘেয়েমি দূর করে।


(৩) অগ্রহােদ্দীপক : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। বহু শিক্ষার্থী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের তাগিদে বিদ্যালয়মুখী হয়।


(৪) সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক : বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল গুণ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে ওই সমস্ত গুণের বিকাশ ঘটার সুযােগ সষ্টি হয়।


(৫) চাহিদাপূরণে সহায়ক : বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা লক্ষ করা যায়। সহপাঠক্রমিক কার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন আনন্দ পায়, অন্যদিকে তাদের বিশেষ বিশেষ চাহিদাও পূরণ হয়।


(৬) মূল্যবােধের বিকাশে সহায়ক : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে দলগতভাবে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবােধের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। ফলে শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল ও সমাজসচেতন ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার সুযােগ পায়।


(৭) সামাজিক সংযোগরক্ষাকারী : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে সংযােগসাধনের কাজটি ত্বরান্বিত করে।


(৮) আনন্দদায়ক : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সর্বদাই শিক্ষার্থীকে আনন্দ এবং তৃপ্তি দেয়। শিক্ষার্থীর কাছে আনন্দদায়ক নয় এমন সব কাজকে সহপাঠক্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।


(৯) জাতীয় সংহতি বিকাশে সহায়ক : বিভিন্ন রকমের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বা জাতীয়তাবােধের বিকাশে সহায়ক হয়।


(১০) আন্তর্জাতিকতার বিকাশে সহায়ক : কয়েকটি সহপাঠক্রমিক কাজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তর্জাতিকতাবােধের বিকাশে সহায়ক হয়।


পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? 

অথবা, পাঠক্রম সংগঠনে শিশুর চাহিদা ও সামর্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করাে।


পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা এবং আধুনিক ধারণার মধ্যে পার্থক্য কী কী? প্রাপ্ত সুযােগসুবিধার ভিত্তিতে কীভাবে পাঠক্রম রচনা করা যায়?


শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে পাঠক্রমের উপযােগিতা বিশ্লেষণ করাে।


পাঠক্রমের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


পাঠক্রম কী? কারিকুলাম কথাটি কোন্ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং এর অর্থ কী? পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।


অভিজ্ঞতাভিত্তিক, জীবনকেন্দ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযােগিতা লেখাে।


পাঠক্রম প্রণয়নের উপাদানগুলি উল্লেখ করাে।