পাঠক্রমের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

পাঠক্রমকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—লুক্কায়িত পাঠক্রম এবং ব্যক্ত বা লিখিত পাঠক্রম।


লুক্কায়িত পাঠক্রম

সাধারণ শ্রেণিকক্ষে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা পূর্ব পরিকল্পিত নয়। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। যেমন প্রজেক্টের কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি। প্রতিটি শিক্ষক প্রত্যাশা করেন যে, এইসব কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধি হবে, দক্ষতা বিকশিত হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু এই প্রত্যাশাগুলি ব্যক্ত হয় না বা পাঠক্রম পরিকল্পনায় উল্লেখ থাকে না। একেই লুক্কায়িত পাঠক্রম বলে।


ব্যক্ত বা লিখিত পাঠক্রম


সাধারণ অর্থে পাঠক্রম বলতে ব্যক্ত বা লিখিত পাঠক্রমকেই বােঝায়। এটি পরিকল্পিত এবং নিয়ন্ত্রিত। নির্দিষ্ট শিখন উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে বিষয়বস্তু ও শিখন অভিজ্ঞতা নির্বাচন ও বিন্যাস করে, বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করার পর মূল্যায়নের মাধ্যমে পূর্বনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য কী পরিমাণে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সেগুলিকে প্রয়ােজনমতাে সংযােজন, বর্জন এবং সংশােধন করে পুনরায় শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়ােগ করা হয়। একেই ব্যক্ত বা লিখিত পাঠক্রম বলে। এই অর্থে লিখিত পাঠক্রম একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া।

ব্যক্ত পাঠক্রমকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— 


(১) অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম : এই জাতীয় পাঠক্রম শিক্ষার্থীর সামগ্রিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। শিক্ষার্থীর চাহিদা, রুচি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সমবায়ই হল অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠক্রম।


এই পাঠক্রমের মূল কথা হল, শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে নানা ধরনের প্রত্যক্ষ কাজের মাধ্যমে পরিবেশন করা। শিক্ষার্থীরা সেই কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথেই শিখবে।


(২) জীবনকেন্দ্রিক ও অবিছিন্ন পাঠক্রম : জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর জীবনের বিভিন্ন দিক এবং তার পরিবেশের প্রতি লক্ষ রেখে বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়। অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পাঠক্রম রচনা করা হয়।


(৩) কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক : এই পাঠক্রম অনুযায়ী কেবল বই মুখস্থ করার বদলে শিক্ষার্থী তার চাহিদা, রুচি, সামর্থ্য অনুযায়ী বাস্তবে বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করবে।সেই কারণে এই পাঠক্রমে নানা ধরনের সক্রিয়তাভিত্তিক কার্যাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


(৪) কেন্দ্রীয় পাঠক্রম : অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সামগ্রীর সমন্বয় ঘটিয়ে যে পাঠক্রম রচনা করা হয় তাকেই বলে কেন্দ্রীয় পাঠক্রম (Core Curriculum)। এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যাস, কর্মদক্ষতা ও জীবনাদর্শ বিকাশে সাহায্য করে। কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল一


  • এই পাঠক্রমের মাধ্যমে বিশেষধর্মী জ্ঞান পরিবেশন না করে জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করা হয়।

  • এই পাঠক্রমের উপাদান সামাজিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

  • বিষয়কেন্দ্রিক জ্ঞানের সঙ্গে সমাজকেন্দ্রিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানাে এই পাঠক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

  • শিক্ষার প্রাথমিক ও নিম্ন-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সাধারণধর্মী কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়ােজন। তাই শিক্ষার এই স্তরগুলিতেই কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের সুপারিশ করা হয়।

  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহুমুখী অনুরাগের সার করাই হল এই পাঠক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।


প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, আমাদের দেশে স্বাধীনােত্তরকালে প্রায় সমস্ত শিক্ষা কমিশনগুলি এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে।


(৫) বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম : যে পাঠক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়ের বৌদ্ধিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় তাকে বিষয়কেন্দ্রিক পাঠক্রম বলে। তাকে গতানুগতিক পাঠক্রমও বলা হয়। এটি মানসিক শৃঙ্খলাতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত।


কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তাভিত্তিক পাঠক্রম কী? এর ত্রূটিগুলি আলােচনা করো।


পাঠক্রম প্রণয়নে শিক্ষাশ্রয়ী দর্শনের অবদান আলােচনা করাে।


একটি আদর্শ পাঠক্রম গঠনের ক্ষেত্রে কী কী নীতি অনুসরণ করা উচিত?

অথবা, পাঠক্রম গঠনের নীতিগুলি আলােচনা করাে।


পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আলােচনা করাে।


পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? 

অথবা, পাঠক্রম সংগঠনে শিশুর চাহিদা ও সামর্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করাে।


পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা এবং আধুনিক ধারণার মধ্যে পার্থক্য কী কী? প্রাপ্ত সুযােগসুবিধার ভিত্তিতে কীভাবে পাঠক্রম রচনা করা যায়?


শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে পাঠক্রমের উপযােগিতা বিশ্লেষণ করাে।