পাঠক্রম প্রণয়নের উপাদানগুলি উল্লেখ করাে।

পাঠক্রম প্রণয়নের উপাদান

পাঠক্রম প্রণয়নের উপাদান বলতে বোঝায় সেইসব বিষয় যা পাঠক্রম গঠনের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়। নীচে এই উপাদানগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল一


(১) বিষয়বস্তুর প্রকৃতি : পাঠক্রমে বিভিন্ন বিষয় যেমন- সাহিত্য, প্রকৃতি বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঠক্রম রচয়িতাদের বিষয়গুলির গঠন, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিশদজ্ঞান থাকা প্রয়ােজন।


(২) শিশুর বিকাশ : যাদের জন্য পাঠক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে তাদের অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধি ও বিকাশমূলক তথ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। কোন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম রচনা করা হচ্ছে, তাদের পরিগমনের স্তর, ক্ষমতা, সামর্থ্য ও আগ্রহের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা একান্ত প্রয়ােজন। এই তথ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল-

  • শারীরিক বিকাশ,

  • সামাজিক বিকাশ,

  • বৌদ্ধিক বিকাশ,

  • প্রাক্ষোভিক বিকাশ,

  • চিন্তন ও কল্পনার বিকাশ এবং

  • নৈতিক বিকাশ।


এ ছাড়া বৃদ্ধি ও বিকাশের কয়েকটি নীতি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে যেমন-

  • শৈশব থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত বৃদ্ধি ও বিকাশ নিরবচ্ছিন্ন এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটে।

  • বিশ্বের সমস্ত শিশুই বিকাশের স্তরগুলি অতিক্রম করে।

  • বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য দেখা যায়।

  • বিভিন্ন দিকের বিকাশ পরস্পর নির্ভরশীল।

  • বিকাশ সমন্বিতভাবে ঘটে।

  • কোনাে বিষয় শিখন বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম পরিণমনের প্রয়ােজন হয়।


(৩) সামাজিক বিষয় : সমাজ তার প্রয়ােজনেই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেছে এবং সমাজের মধ্যেই তা কার্যকরী হয়। সেই কারণে পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর যেসব সামাজিক শক্তিসমূহ ক্রিয়াশীল তাদের সম্পর্কে বিশদজ্ঞান অর্জনের প্রয়ােজন।


(৪) আর্থিক বিষয় : পাঠক্রমের ব্যবহারযােগ্যতা বিচারে আর্থিক বিষয়ের গুরুত্ব খুব বেশি। সরকার ছাড়াও কমিউনিটি, স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য অগ্রণী প্রতিষ্ঠানকে অর্থের সংস্থানে এগিয়ে আসতে হবে।


(৫) পরিবেশগত বিস্ময় : এখানে পরিবেশ বলতে বােঝায় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কমিউনিটির প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ। মানবজাতির অস্তিত্ব ও সভ্যতার বিকাশ নির্ভর করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদের ব্যবহারের ওপর। সে ব্যাপারে পাঠক্রম রচয়িতাগণ বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখবেন।


(৬) প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় : প্রতিষ্ঠান সমাজের একটি উপব্যবস্থা। সমাজ তার বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের সাহায্য গ্রহণ করে। পাঠক্রম রচনার ক্ষেত্রে তাই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, বিশেষ করে এর কার্যকরী দিকের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন।


(৭) শিক্ষক সম্পর্কিত বিষয় : শিক্ষক পাঠদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চালন করেন। সুতরাং পাঠক্রম রচয়িতাগণ যখন পাঠক্রম পরিকল্পনা এবং প্রস্তুত করবেন তখন শিক্ষকের করণীয় কাজগুলি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন।


সবশেষে বলা যেতে পারে, পাঠক্রম প্রণয়ন একটি জটিল কাজ। এই কাজের ক্ষেত্রে বহুবিষয় বিবেচিত হয় এবং এতে সকলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।


পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আলােচনা করাে।


পাঠক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? 

অথবা, পাঠক্রম সংগঠনে শিশুর চাহিদা ও সামর্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করাে।


পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা এবং আধুনিক ধারণার মধ্যে পার্থক্য কী কী? প্রাপ্ত সুযােগসুবিধার ভিত্তিতে কীভাবে পাঠক্রম রচনা করা যায়?


শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে পাঠক্রমের উপযােগিতা বিশ্লেষণ করাে।


পাঠক্রমের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


পাঠক্রম কী? কারিকুলাম কথাটি কোন্ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং এর অর্থ কী? পাঠক্রমের সাংগঠনিক উপাদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।


অভিজ্ঞতাভিত্তিক, জীবনকেন্দ্রিক ও অবিচ্ছিন্ন পাঠক্রম সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে। কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযােগিতা লেখাে।