লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ উদাহরণসহ আলােচনা করাে।

লৌহ ইস্পাত শিল্পের অবস্থানগত শর্ত বা কারণ

পৃথিবীর লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রগুলির অবস্থান মূলত নির্ভর করে কাঁচামাল, বাজার ও উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার যৌথ প্রভাবের ওপর। এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলােচনা করা হল—


(১) কাঁচামালএর প্রভাব : লৌহ ইস্পাত শিল্প কাঁচামাল-ভিত্তিক শিল্প। এই শিল্পের কাঁচামালগুলি হল আকরিক লােহা, স্পঞ্জ লােহা, কোক কয়লা, ডলােমাইট, চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, টাংস্টেন, ক্রোমিয়াম, মলিবডেনাম প্রভৃতি। এসব কাঁচামাল কমবেশি ওজন হ্রাসশীল বা অবিশুদ্ধ শ্রেণির। এজন্য দেখা যায় যে, এক টন ইস্পাত উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে প্রায় 4.5 টন কাঁচামালের দরকার হয়।


কাঁচামালের মধ্যে আকরিক লােহা, খনিজ ও কয়লার গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। পরিবহণ ব্যয়সংকোচের কারণে ইস্পাত কেন্দ্রগুলিকে এমনস্থানে গড়ে তােলার প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে ইস্পাতের উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম হয়। এজন্য ইস্পাত কারখানাগুলি কয়লাখনি অঞ্চল, আকরিক লােহা উৎপাদক অঞ্চল এবং কয়লা ও আকরিক লােহা উৎপাদক অঞ্চলের মাঝে গড়ে ওঠে। যেমন—


  • কয়লা উৎপাদক অঞ্চলে স্থাপিত ইস্পাতকেন্দ্র : ভারতের দুর্গাপুর, জার্মানির রুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ অঞ্চলে কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে ইস্পাতকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।


  • আকরিক লােহা উৎপাদক অঞ্চলে স্থাপিত ইস্পাতকেন্দ্র : ভারতের ভদ্রাবতী, ভিলাই, রাউরকেলা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ডুলুথ প্রভৃতি স্থানে প্রধানত দোলক নীতির প্রভাবে পরবর্তী পর্যায়ে ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।


  • কয়লা খনি ও আকরিক লােহা উৎপাদক অঞ্চলের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত ইস্পাতকেন্দ্র : এই দুই অঞ্চলের মধ্যবর্তী কোনাে স্থানে শিল্প স্থাপনের অন্যান্য সুযােগ (যেমন সুলভ জলবিদ্যুৎ) থাকলে সেখানে ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠে। যেমন—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরি হ্রদের তীরে বাফেলাে ও ক্লিভল্যান্ড প্রভৃতি।


  • বাজার ও কাঁচামালের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত ইম্পাতকেন্দ্র : বাজার ও কাঁচামাল উত্তোলক অঞ্চলের মধ্যবর্তী কোনাে স্থানে, যেখানে পরিবহণ ব্যয় সবচেয়ে কম এবং শিল্প স্থাপনের অন্যান্য সুযােগ আছে, সেখানে ইস্পাতকেন্দ্র গড়ে ওঠে। যেমন—ভারতের জামশেদপুর।


(২) বাজারের প্রভাব : পরিবহণ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি, বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুবিধা ইত্যাদি কারণে বাজারকে কেন্দ্র করে ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে। যেমন—


  • ছাঁট লােহা-নির্ভর বাজারের অবস্থান : জাপানের সাকাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে, ভারতের ছােটো ইস্পাত কারখানা, যেমন—ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (হাওড়া), বিচোলিম (গােয়া) প্রভৃতি অঞ্চলে ছাঁট লােহার ওপর ভিত্তি করে ইস্পাতকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।


  • উপকূলবর্তী অবস্থান : ভারতের বিশাখাপত্তনম, দৈতারি; জাপানের কামাইসি প্রভৃতি স্থানে জাহাজযােগে আমদানি করা আকরিক লােহা ও কয়লা অথবা ছাঁট লােহার ওপর ভিত্তি করে ইস্পাতকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।


(৩) অন্যান্য প্রভাব : উল্লিখিত কারণ ছাড়াও এই শিল্পের বিকাশে আনুষঙ্গিক কারণগুলি হল জমির সহজলভ্যতা, জলের প্রাপ্যতা, দক্ষ ও সুলভ শ্রমিকের সহজলভ্যতা, মূলধনের প্রাচুর্য, বিদ্যুৎশক্তির সরবরাহ, সরকারি নীতি ও লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি।

জামশেদপুরে এবং বােকারােতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ আলােচনা করাে।


কাঁচামালের অভাব সত্ত্বেও জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লৌহ-ইস্পাত উৎপাদক দেশ- ব্যাখ্যা করাে। জাপানের লৌহ-ইস্পাত অঞ্চলগুলির নাম উল্লেখ করাে।


পৃথিবীর যে-কোনাে প্রধান দুটি দেশের লৌহইস্পাত শিল্পের বণ্টন বর্ণনা করাে। অথবা, এশিয়ার প্রধান দুটি দেশের লৌহ ইস্পাত শিল্পের বণ্টন বর্ণনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)