সার্বভৌমত্ব ধারণা বিশ্বায়নের প্রভাব | বিশ্বায়নের প্রভাবে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব কি সংকটের সম্মুখীন? রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার উপর বিশ্বায়নের প্রভাব

ভূমিকা: সমগ্র বিশ্ব জুড়ে 'বিশ্বায়নের ধারণা বিংশ শতাব্দীর ৮০-র দশক থেকে জোরালােভাবে প্রযুক্ত হতে থাকে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি ধনী পুঁজিবাদী দেশগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিশ্বায়নের ধারণা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। অর্থনীতিবিদ ডাঙ্কেল-এর প্রস্তাব এবং গ্যাট চুক্তির হাত ধরে আসে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ তারপর আসে বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন। বহু পূর্বেই অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ-এর অবাধ বাণিজ্য নীতির ধারণা অনুসরণ করেই বিশ্ব বাজারকে ইউরােপীয় বণিকেরা দখল করেছিল। সেই পুরাতন ধারণা যুগের প্রয়ােজনে আধুনিকতার মােড়কে নতুনভাবে নাম দেওয়া হল— Globalization বা বিশ্বায়ন।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং পণ্ডিত অধ্যাপকগণ মনে করেন যে, অতীতে বাণিজ্যিক লেনদেন, সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময় এবং ধর্ম প্রচার কেন্দ্র করে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের ব্যাবসাবাণিজ্যসূত্রে বণিক পুঁজির লেনদেন ঘটে, তারপর সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি পুঁজিবাদী সমাজে আধুনিক রূপে রূপান্তরিত হয় এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদন বা পণ্য রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের সীমানা অতিক্রম করে মুক্ত বাণিজ্য নীতির হাত ধরে অন্য ভূখণ্ডের বাজার দখল করতে শুরু করে সেই কারণে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক দেশকে বিশ্বায়নের জন্মভূমি বা উৎসভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


বিশ্বায়নের প্রবক্তা: অনেকেই অধ্যাপক রােলান্ড রবার্টসনকে বিশ্বায়নের প্রথম প্রবক্তা বলে মনে করেন। বিশ্বায়ন পৃথিবীকে একইসঙ্গে সংকোচন এবং একতাবদ্ধ করেছে বলে মনে করা হয়। বিশ্বায়ন বিশ্ববােধ এবং বিশ্বচেতনাকে একত্রিত করে পৃথিবীকে বিশ্ব গ্রাম (Global Village)-এ পরিণত করতে চায়। মূলত বিশ্বায়ন হল সমগ্র বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াশীল এক বিশেষ ধরনের অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, বিশ্বায়ন অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক কাজকর্মে রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থ ও পুঁজির ব্যাপক গমনাগমনকে সুনিশ্চিত করে তােলে। জোসেফ স্টিগলিৎস তাঁর বিখ্যাত 272 Globalization and its discontents'-এ বলেছেন, বিশ্বায়ন হল বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে সুনিবিড় সংযােগসাধনের প্রক্রিয়া। এই সুনিবিড় সংযােগসাধনের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) ও বিশ্বব্যাংক (World Bank) তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে বিশ্বায়নকে সমগ্র বিশ্বে গ্রহণযােগ্য ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।


রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ধারণা: সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের কথা কল্পনাই করা যায় না। এককথায় রাষ্ট্রের চরম অবিভাজ্য ও অহস্তান্তরযােগ্য মৌলিক ক্ষমতাই হল সার্বভৌম ক্ষমতা। রাষ্ট্রতত্ত্ব সর্বপ্রথম সার্বভৌমিকতার ধারণা পেশ করেন ফরাসি দার্শনিক বোদা। তাঁর মতে সার্বভৌমিকতা হল, "নাগরিক ও প্রজাদের উপর আইনের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত চরম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা” (Highest power over citizens and subjects, unrestrained by laws) সুতরাং বলা যেতে পারে সার্বভৌমিকতা আইনের উর্ধ্বে। এই সংজ্ঞা থেকে এটা খুবই পরিষ্কার যে, রাষ্ট্রের অবিন্যস্ত সকল ব্যক্তিগণ এই চরম ক্ষমতার প্রতি অনুগত। অস্টিনের মতে, রাষ্ট্র হল আইনানুসারে সংগঠিত এমন একটি সংস্থা যেখানে নির্দিষ্ট কর্তৃত্ব হল সমগ্র ক্ষমতার উৎস এবং এরূপ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব কোনাে কিছুর দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। এই সার্বভৌম শক্তির আদেশই হল আইন।


রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার দুটি দিক রয়েছে। যথা—অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় আইন চূড়ান্ত ও অপ্রতিহত থাকে, অপরদিকে বাহ্যিক সার্বভৌমিকতা ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্রনীতিকে নির্ধারণ ও অনুসরণ করা হয়।


রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার উপর বিশ্বায়নের প্রভাব

বিশ্বায়নের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশ্বায়নের প্রভাবে জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা বিপন্ন বা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে বলে কেউ কেউ মত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বায়নের প্রভাবে বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র গুলো সত্যিই সার্বভৌম ক্ষমতা হারাচ্ছে কি না সে প্রশ্নটি বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে। বর্তমান একমেরুকেন্দ্রিকতার যুগে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার বিশেষ কোনাে প্রাসঙ্গিকতা নেই। কারণ পারস্পরিক নির্ভরশীলতার যুগে কোনাে রাষ্ট্রই এককভাবে তার অবাধ ক্ষমতার বাস্তব রূপায়ণ ঘটাতে পারে না।


[1] সাবেকি রাষ্ট্রের ধারণার পরিবর্তন: জাতি-রাষ্ট্রগুলির সনাতন সার্বভৌমিকতা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ধারণায় ব্যাপকভাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাটি বিশ্বায়নের প্রভাবেই ঘটেছে। কিনা আজকের দুনিয়ায় কোনাে রাষ্ট্রের পক্ষেই এককভাবে তার চূড়ান্ত ও চরম ক্ষমতার বাস্তব প্রকাশ ঘটানাে সম্ভব নয়। যদি কোনাে রাষ্ট্র তার চূড়ান্ত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তবে তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রহসনের পাত্রে পরিণত হবে। কেননা পারস্পরিক নির্ভরতার দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এই প্রবণতা বর্তমানে রাষ্ট্রসমূহের ভূমিকাকে কিছুটা ক্ষুন্ন করেছে। ফলে রাষ্ট্র সমূহের চরম ক্ষমতার সম্মুখীন হয়ে সনাতনী ধারণাকে পরিত্যাগ করে রাষ্ট্রকে একটি বাজারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, বিশ্বায়নের প্রভাবে সমগ্র বিশ্ব একটি বাজারে রূপান্তরিত হয়েছে আর দেশীয় বাজারগুলি বিশ্ব বাজারের অংশে পরিণত হয়েছে।


[2] রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বিপর্যয়: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্র একটি বিশ্ব ব্যবস্থার অধীনে পরিণত হয়েছে। বিস্তৃত রাষ্ট্র নিজেই বিশ্বায়নের একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই নীতি অনুসরণ করার জন্য সার্বভৌম রাষ্ট্র গুলির স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্বায়নের কারণে রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক নীতি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেশসমূহের ভূমিকা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশগুলির পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF), বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO), এ ছাড়া বহুজাতিক সংস্থা ও আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজ্য সংস্থা গড়ে উঠেছে, যেগুলি আর্থিক বিশ্বায়নের রূপায়ণে কলকাঠি নাড়াচ্ছে। সেখানে জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের পরিচালকরা অসহায় ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের নেতৃবৃন্দ তাদের আর্থিক নীতি ও নির্দেশের উপর নির্ভরশীল হওয়ার ফলে স্বাধীন দেশসমূহের স্বাধীন আর্থিক নীতি বিপর্যয়গ্রস্ত হয়ে পড়েছে।


[3] রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ: বিশ্বায়ন মুক্ত অর্থনীতির সমর্থক। সুতরাং, বিশ্বায়নের স্বার্থে রাষ্ট্রসমূহ অভ্যন্তরীণ কর ও শুল্ক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে বিদেশি মূলধনের বিনিয়োগের স্বার্থে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে বাজারের সচলতা দান করা দেশীয় সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI Foreign Direct Investment)-এর জন্য সরকারগুলি তাদের দেশীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ জাতীয় সরকার তার সনাতন কর আরােপ ও বিলােপ করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বায়নের এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।


[4] মুক্ত বাণিজ্য নীতি: লগ্নিপুঁজির অবাধ বিচরণ ও তার লুণ্ঠনকে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি রাষ্ট্র কোনােরূপ শর্ত আরােপ না করেই অবাধ বাণিজ্য নীতিটিকে কার্যকর করার জন্য এগিয়ে আসে। স্বাধীন আর্থিক নীতি গ্রহণের পরিবর্তে রাষ্ট্রগুলি আর্থিক ক্ষেত্রে কাঠামােগত সংস্কার, সরকারি ক্ষেত্রগুলির বেসরকারিকরণ, ভরতুকি প্রত্যাহার, কর্মীসংকোচন প্রভৃতি জনবিরােধী নীতিসমূহ গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে।


[5] দেশীয় সংস্কৃতির সংকট: বিশ্বায়ন সর্বত্র অভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এর জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের প্রচারমাধ্যমকে দেশীয় বাজারে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে। এর ফলস্বরূপ বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে আজ রাষ্ট্রসমূহের নিজ সংস্কৃতি গভীর সংকটের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পশ্চিমি ভােগবাদী সংস্কৃতি প্রচারকারী এইসকল প্রচারমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সরকারের থাকে না। কোন সরকার ওইসব প্রচার বন্ধে উদ্যোগী হলে ওই সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অভিযােগ এনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হবে।


[6] সার্বভৌমিকতার ধারণা অবসানের সম্ভাবনা: বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার বিরূপ প্রভাব রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার ধারণার উপর ব্যাপক প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে বিশ্বের দূরতম প্রান্তে যােগাযােগ সুগম হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশ সমূহের মধ্যে ভৌগােলিক দূরত্ব কমে গেছে। এই পরিবর্তনের ফলে চিরাচরিত সার্বভৌমিকতার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রূপ ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই বিশ্বায়নের সমর্থকরা মনে করেছেন যে, বর্তমান সময়ে কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি আজ আর পররাষ্ট্রনীতি থেকে পৃথক নয়। এই দুটি দিকই পরস্পরের পরিপূরক। এর প্রভাবে রাষ্ট্রের প্রধান চরিত্র সার্বভৌমিকতার ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে বর্তমান সময়ে কোনাে রাষ্ট্রের পক্ষেই আর চরম সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়ােগ করা সম্ভব নয়। এর ফলস্বরূপ সাবেকি সার্বভৌমিকতার ধারণার অবসানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।


[7] বহুজাতিক সংস্থার প্রভাব: বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলির অস্বাভাবিকভাবে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির নীতি নির্ধারণকারীরা অনেকসময় বাধ্য হয়েই এইসকল সংস্থার নির্দেশে তাদের জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন। নয়া সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলির রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হয়। অধ্যাপক বার্নেট ও স্যার বলেছেন যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উন্নত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সাম্রাজ্য লিসাকে চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।


[8] স্বাধীন নীতি গ্রহণে ব্যর্থ: বিশ্বায়নের যুগে একমেরুকেন্দ্রিকত প্রাধান্য লাভ করার ফলে মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশ মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে কাঠামােগত পুনর্বিন্যাস সাধন করতে বাধ্য করা হয়েছে। পুনর্গঠনের মাধ্যমে ওইসব রাষ্ট্র শ্রমিকদের মজুরি হ্রাস, পেনশন না দেওয়া, সরকারি ব্যয় হ্রাস ও ভরতুকি প্রদান বন্ধ প্রভৃতি চরম জনবিরােধী নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় জাতি-রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমিকতা বিপন্ন হয়ে পড়ে।


[9] সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তির মাধ্যমে সার্বভৌমিকতার হস্তক্ষেপ: বর্তমানে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি সন্ত্রাসবাদ প্রতিরােধের জন্য বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিশ্বব্যাপী কার্যকলাপ প্রতিরােধের জন্য গৃহীত চুক্তির শর্তগুলি সকল রাষ্ট্র সার্বভৌমিকতা কে সংকুচিত করে।


উপসংহার: প্রকৃতপক্ষে বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে চরম ও অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণা আজ আর গ্রহণযােগ্য নয় বলে কেউ কেউ দাবি করেন। অধ্যাপক ডেভিড হেন্ডের মতে, রাষ্ট্রীয় আইন অব্যাহত আছে। তবে জটিল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ফলে রাষ্ট্রের নিজস্ব অধিকার বর্তমানে সীমিত হয়ে পড়েছে। পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বিশ্বায়নের প্রভাবে রাষ্ট্রসমূহের সার্বভৌমিকতা বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এ কথাটা কিছুটা সত্য হলেও আন্তর্জাতিক তার প্রয়ােজনে সার্বভৌমিকতা তার চরম রূপটি পরিত্যাগ করে সময়ের প্রয়োজনে গুরুত্ব দিয়েছে।


বিশ্বায়নের কারণ বর্ণনা করাে।


বর্তমান যুগে ভারতে বিশ্বায়নের প্রভাব বা ফলাফল পর্যালোচনা করো।


ভারতে বিশ্বায়নের সুবিধা ও অসুবিধা | ভারতে বিশ্বায়নের সুফল ও কুফল