আচরণবাদের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করাে।

আচরণবাদের বৈশিষ্ট্য

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আচরণবাদের উদ্ভব হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে আচরণবাদের মাধ্যমে। বসু দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিবদ্ধ রূপ হল আচরণবাদ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষণে প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ, আন্তঃসমাজবিজ্ঞান সহযােগিতা, সংখ্যায়ন ইত্যাদির ওপর আচরণবাদ জোর দেয়। আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহকে এইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়一


[1] তত্ত্ব ও তথ্যকেন্দ্রিকতা: আচরণবাদে বলা হয় যে, তত্ত্বকে গবেষণার দ্বারা যাচাই করতে হবে। তারপর সেই গবেষণালব্ধ তথ্য রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এই মতবাদে তত্ত্ব ও গবেষণার পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। এখানে সিদ্ধান্তের বিশ্বাসযােগ্যতা তত্ত্বের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।


[2] মূল্যমান-নিরপেক্ষতা: আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনাকে মূল্যমান-নিরপেক্ষ করে গড়ে তুলতে চায়। যে-কোনাে বৈজ্ঞানিক আলােচনার অন্যতম শর্ত হল মূল্যমান-নিরপেক্ষতা৷ একারণেই আচরণবাদী আলােচনায় আদর্শ, নীতিবােধ, মূল্যবােধ প্রভৃতির কোনাে স্থান নেই।


[3] বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়ােগ: আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়ােগ করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য আচরণবাদী দার্শনিকগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় পরিমাপ, সংখ্যায়ন ইত্যাদির ওপর জোর দেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় তারা ভৌতবিজ্ঞানের পদ্ধতি প্রয়ােগ করতে চান।


[4] আন্তঃবিষয় আলােচনা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সমাজবিজ্ঞানের একটি‌ গুরুত্বপূর্ণ শাখা। স্বভাবতই, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনাকে সমৃদ্ধ ও সুসংহত করার জন্য আচরণবাদী দার্শনিকগণ সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। আচরণবাদ মনে করে ব্যক্তির রাজনৈতিক আচরণ তার সামগ্রিক আচরণের একটি অংশ। সুতরাং, ব্যক্তির সামগ্রিক আচরণ সম্পর্কে অবহিত না হলে তার রাজনৈতিক আচরণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। একারণেই, আন্তঃবিষয় আলােচনা একান্তই আবশ্যক।


[5] ক্ষমতা বিষয়ক আলােচনা: আচরণবাদ ক্ষমতা সংক্রান্ত যেকোনাে কাজকে রাজনৈতিক কাজ বলে মনে করে। ক্ষমতা সংক্রান্ত কাজকে আচরণবাদী দার্শনিকগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনার অন্তর্ভুক্ত করতে চান। আচরণবাদ প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক আলােচনার বিরােধী হলেও আচরণবাদে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকেও স্বীকার করা হয়েছে।


[6] ব্যক্তি ও গােষ্ঠী আচরণ: আচরণবাদ মনে করে ব্যক্তি ও গােষ্ঠীর আচরণকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা সম্পূর্ণ হতে পারে না। আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যক্তির রাজনৈতিক আচরণ হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষের পারস্পরিক আচরণের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে যৌথ আচরপ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় যৌথ আচরণ বা গােষ্ঠী আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


[7] অরাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনা: আচরণবাদ রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনার বিরােধী। আচরণবাদ মনে করে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক আচার-আচরণ ও কার্যকলাপ বিচারবিশ্লেষণ করা সম্ভবপর নয়। তাই আচরণবাদে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনার পরিবর্তে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আলােচনার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়।


[8] বিপ্লব: আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। আচরণবাদ রাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্যক্তির আচরণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চর্চার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এ ছাড়াও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়ােগের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনাকে বিজ্ঞানসম্মত করে গড়ে তােলার কাজে আচরণবাদ সচেষ্ট।


মূল্যায়ন: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় আচরণবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। চিরাচরিত রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনার পরিবর্তে ব্যক্তি ও গােষ্ঠীর আচরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আচরণবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এদিক থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনায় আচরণবাদকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলা যায়।


১৯৪৮ সালে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়গুলি কী? আলোচ্য বিষয়রূপে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


রাজনীতির অর্থ নিরূপণ করাে | রাজনীতি বলতে কী বােঝায়?


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ও রাষ্ট্রনিরপেক্ষ সংজ্ঞাগুলি আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন 'প্রগতিশীল বিজ্ঞান' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে?


রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান? রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি | রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান পদবাচ্য? আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা ক্ষেত্রের পরিধি বিশ্লেষণ করাে | রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুর পরিধি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করাে।