জনবিস্ফোরণ কাকে বলে? ভারতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি আলােচনা করাে।

জনবিস্ফোরণ

জনবিস্ফোরণ শব্দটি জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিকে প্রকাশ করে। কোনাে অঞ্চলে প্রধানত চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার হঠাৎ কমে গেলে জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। জনসংখ্যার এরূপ বৃদ্ধিকে জনবিস্ফোরণ বলে। কোনাে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 2 শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে সেই দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে ধরে নেওয়া হয়।


ভারতে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ


ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান 2050 খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনসংখ্যা চিনের জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। ভারতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল一


[1] উচ্চ জন্মহার : ভারতে জন্মের হার চিন, জাপান, ইটালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের তুলনায় অনেক বেশি। 2011 খ্রিস্টাব্দে ভারতে জন্মের হার ছিল প্রতি হাজারে 21 জন। এর কারণ হল বাল্য বা অল্প বয়সে বিবাহ, শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় প্রভাব, কুসংস্কার, দারিদ্র্য প্রভৃতি।


[2] কম মৃত্যুহার : সম্প্রতি ভারতে মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। 2011 খ্রিস্টাব্দে ভারতে মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে মাত্র 7 জন। চিন, জাপান ও পশ্চিমি বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মৃত্যুহারের সঙ্গে ভারতের মৃত্যুহারের ফারাক খুব সামান্য। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন, নতুন নতুন জীবনদায়ী ওষুদের আবিষ্কার ও প্রয়ােগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি নিবারণ ইত্যাদি কারণে ভারতে মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে।


[3] বাল্যবিবাহ : ভারতে নারীদের 18 বছরের নীচে এবং পুরুষদের 21 বছরের নীচে বিবাহ আইনসিদ্ধ নয়। কিন্তু সরকারি আইন না মেনে রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে মেয়ে এবং ছেলেদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনেক আগেই বিবাহ হয়। এর ফলে, নারীদের সন্তান উৎপাদনের সময়সীমা বেড়ে যায় ও জন্মের হার বৃদ্ধি পায়।


[4] শরণার্থীর আগমন : স্বাধীনতার পর প্রতিবেশী দেশগুলি যেমন—পাকিস্তান, নেপাল, চিন ও বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারতে প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া, জাতিগত বিদ্বেষ ও দাঙ্গার কারণে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যক মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে এখনও বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করে চলেছে। বেআইনি অনুপ্রবেশের কারণে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ভারতের বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হারের তুলনায় অনেক বেশি।


[5] মহামারি নিবারণ : বিংশ শতব্দীর প্রথম অর্ধে বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতি রােগে হাজার হাজার লােক মারা যেত। আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কল্যাণে বর্তমানে এই রােগগুলি নিবারণ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে এবং অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উধ্বমুখী হয়েছে।


[6] কুসংস্কার : ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় পুত্রসন্তানই পিতামাতার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করার অধিকারী। এর ফলে বেশির ভাগ পরিবারেই পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা প্রবল। বার্ধক্যে নিরাপত্তা পাওয়ার আশাতেও ভারতীয় সমাজে পুত্রসন্তানের আকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা যায়। এই প্রবণতাও জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।


[7] বিজ্ঞান ও প্রযূক্তিবিদ্যার উন্নতি : ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে। জীবন সুরক্ষিত হওয়ায় পরােক্ষভাবে তা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।


উন্নয়নশীল দেশের বয়ঃলিঙ্গ পিরামিডের বৈশিষ্ট্য লেখাে। অগ্রগামী ও পশ্চাদগামী জনসংখ্যা বলতে কী বােঝ? উন্নত দেশের জনসংখ্যা পিরামিড সম্বন্ধে আলােচনা করাে।


পরিব্রাজন কাকে বলে? পরিব্রাজনের ফলাফল সমূহ আলােচনা করাে।


জনসংখ্যা পিরামিড বা বয়ঃলিঙ্গ গঠন কী? উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের জনসংখ্যা পিরামিডের আকৃতিগত তারতম্য আলােচনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)