জনসংখ্যা পিরামিড বা বয়ঃলিঙ্গ গঠন কী? উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের জনসংখ্যা পিরামিডের আকৃতিগত তারতম্য আলােচনা করাে।

জনসংখ্যা পিরামিড বা বয়ঃলিঙ্গ গঠন

যে লেখচিত্রের সাহায্যে কোনাে দেশ বা অঞ্চলের জনসাধারণের বয়স অনুযায়ী নারী-পুরুষের জন্ম-মৃত্যুর মাত্রা ও গঠন-বিন্যাস প্রকাশ করা হয় তাকে জনসংখ্যা পিরামিড বা বয়ঃলিঙ্গ গঠন বলে।


বৈশিষ্ট্য :

  • জনসংখ্যা পিরামিড বা বয়ঃলিঙ্গ গঠনের 'X' অক্ষ বরাবর পুরুষ ও নারীর সংখ্যা বা শতাংশ এবং 'Y' অক্ষ বরাবর বয়ঃক্রম দেখানাে হয়।

  • 'Y' অক্ষের বাঁদিকে পুরুষদের বয়ঃক্রম এবং ডানদিকে নারীদের বয়ঃক্রম দেখানাে হয়।


গুরুত্ব :

  • বয়ঃলিঙ্গ পিরামিড থেকে জনবিবর্তনের স্তর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

  • নারী-পুরুষের বয়সভিত্তিক বিন্যাসের তারতম্য বােঝা যায়।

  • নির্ভরশীলতার অনুপাত (Dependency Ratio) সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

  • কোনাে দেশ বা অঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুমান করা যায়।

  • জন্মহার, মৃত্যুহার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

  • বয়ঃলিঙ্গ পিরামিড আঁকা ও বােঝা সহজসাধ্য।


উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের জনসংখ্যা পিরামিড-এর আকৃতিগত তারতম্য


(1) উন্নয়নশীল বা বিকাশশীল দেশের জনসংখ্যা পিরামিড : পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলির এজ-সেক্স পিরামিড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জন্মহার বেশি হওয়ার জন্য শিশু ও কিশাের-কিশােরী জনসংখ্যার চাপ এই দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি। বস্তুত, কোনাে দেশের অনুৎপাদক জনসংখ্যার পরিমাণ নির্ভর করে সেই দেশে জীবনধারণের জন্য কোনাে উপার্জনমুখী কাজে নিযুক্ত নয় এমন শিশু, কিশাের-কিশােরী ও বৃদ্ধ নরনারীর সংখ্যার ওপর। যেহেতু সমাজে শিশু, কিশাের-কিশােরী ও বৃদ্ধবৃদ্ধারা উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে না, তাই এই উপার্জনহীন জনগােষ্ঠীর ভরণপােষণ এবং তাদের মৌলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিতে হয় উপার্জনশীল, উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া ও যুবক যুবতি জনসমাজকে। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিশু ও কিশাের-কিশােরী জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপের জন্য সামগ্রিকভাবে মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু উৎপাদন ও দেশের সার্বিক উন্নতির হার ব্যাহত হয়। বয়সভিত্তিক স্ত্রী-পুরুষের অনুপাত-সূচক পিরামিড-এ এই জাতীয় আর্থসামাজিক অনগ্রসরতার চিহ্ন সুবিস্তৃত তলদেশ এবং ক্রমসংকুচিত শীর্ষদেশ এরূপ আকৃতির পিরামিড-এর সাহায্যে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলির পিরামিড সাধারণত সেই কারণেই তীক্ষ্ণ শীর্ষদেশযুক্ত সমবাহু ত্রিভুজের মতাে দেখতে হয়। তবে যে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশে জন্মহার বেশি এবং একই সঙ্গে শিশুমৃত্যুর হারও কম, সেই দেশগুলির ক্ষেত্রে জনসংখ্যা পিরামিড ধনুকের আকার নেয়।


(2) উন্নত দেশের জনসংখ্যা পিরামিড : পৃথিবীর উন্নত, সমৃদ্ধ দেশগুলির বয়সভিত্তিক পিরামিড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এখানে জন্মহার কম হওয়ার জন্য শিশু ও কিশাের-কিশােরী জনসংখ্যার চাপ কম এবং উপার্জনশীল মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই পৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলির এজ-সেক্স পিরামিড-এর আকৃতি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। নিয়ন্ত্রিত জন্মহারের জন্য উন্নত দেশগুলির পিরামিড-এর ভূমি অপ্রশস্ত হয়। অর্থাৎ, 0-15 বছর বয়স্ক মানুষের অনুপাত এখানে অল্প। 15-65 বছরের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাত নাবালক- নাবালিকা জনসংখ্যার তুলনায় বেশি হওয়ার জন্য পিরামিড-এর এই অংশটি প্রশস্ত হয়। উন্নত দেশগুলিতে এজ-সেক্স পিরামিডের আকৃতি তিন ধরনের, যেমন—


  • উত্তল ধরনের : পশ্চিম ইউরােপের দেশগুলিতে এই ধরনের জনসংখ্যার বিন্যাস দেখা যায়।

  • ঘণ্টা বা বেল (Bell) আকৃতির : বহুদিন ধরে জন্মহার ও মৃত্যুহার কম থাকার পরে হঠাৎ জন্মহার বাড়তে শুরু করলে পিরামিড ঘণ্টার আকার ধারণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় এই ধরনের জনসংখ্যার বিন্যাস দেখা যায়। উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে আসা লােকজন জন্মহার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা নেন।


(3) নাসপাতির মতাে আকৃতির : এখানে জন্মহার মৃত্যুহারের চেয়ে কম। যেমন-জাপান, সুইডেন প্রভৃতি দেশের জনবিন্যাস।