প্রাচীন ভারতের যে-কোনাে একটি শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষাব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও | তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়

তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়

তক্ষশিলা ছিল প্রাচীন ভারতের উচ্চশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বৈদিক যুগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হলেও এটি বৌদ্ধযুগ পর্যন্ত স্থায়িত্ব লাভ করেছিল। নীচে এই শিক্ষাকেন্দ্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হল―


(১) অবস্থান: তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাওয়ালপিণ্ডির নিকটবর্তী অঞ্চলে।


(২) শিক্ষাব্যবস্থা: তক্ষশিলায় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা দেওয়া হত। শিক্ষার্থীরা আসত ষােলাে বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ আবাসিক ছিল না, গুরুগৃহে বা পৃথকভাবেও থাকা যেত। শূদ্রদের পঠনপাঠনের কোনােরূপ ব্যবস্থা তক্ষশিলায় ছিল না।


(৩) শিক্ষার্থীর ব্যয়: তক্ষশিলায় শিক্ষার্থীদের বেতন দিয়ে পড়তে হত। অবস্থাপন্ন শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ শিক্ষাক্রমের বেতন ভরতির সময়ে এবং অন্যরা শিক্ষার শেষের দিকে বেতন দিত। দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষারথীরা অর্থ দিতে না পারলে তার বিনিময়ে গুরুগৃহে নানা ধরনের দৈহিক পরিশ্রম করত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেতন হিসেবে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা জমা দিতে হত। অনেক সময় ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার খরচ বহন করতেন।


(৪) গুরুর ক্ষমতা: তক্ষশিলার উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রে পুরুরা অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে, নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান। করতেন। গুরুই শিক্ষার্থী নির্বাচন এবং পাঠক্রম নির্ধারণ করতেন।


(৫) পাঠক্রম: তক্ষশিলার উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে বেদ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, বাণিজ্য, কৃষি, হিসাবরক্ষণ, শিল্পকলা, অঙ্কন, যুদ্ধবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হত।


(৬) শিক্ষাদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন: তক্ষশিলায় মৌখিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হত। তবে লিপি এবং পুথির প্রচলনও ছিল। তক্ষশিলায় শিক্ষাক্রম শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কোনােরকম পরীক্ষা নেওয়া হত না। শুধু তাই নয়, শিক্ষাশেষে কোনাে প্রকার শংসাপত্রও দেওয়া হত না।


(৭) শৃঙ্খলা: তক্ষশিলার শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়কেই কতকগুলি নিয়ম মেনে চলতে হত। আর্থিক সংগতি ও মর্যাদা নির্বিশেষে, সবাইকে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হত।


(৮) বিশেষ উৎকর্ষকেন্দ্র: তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎকর্ষকেন্দ্র। সেখানে শিক্ষার্থীরা সাত বছর ধরে অধ্যয়ন করত। শল্যচিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষভাবে পাঠদান করা হত। শুধুমাত্র চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের শেষে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হত। এ ছাড়া সেখানে ভেষজবিদ্যা সম্পর্কেও পঠনপাঠনের ব্যবস্থা ছিল।


প্রাচীন ভারতে উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে তক্ষশিলা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। সেখানকার উচ্চমানের শিক্ষা, বিশেষত ব্যাবহারিক শিক্ষা আজও শিক্ষাবিদরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।


প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।


বৈদিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে

অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাে।


ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে বৈশিষ্ট্যগুলি আধুনিক শিক্ষায় গ্রহণযােগ্য সেগুলি আলােচনা করাে।


মহাকাব্যের যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে দুটি অনুষ্ঠান ও তার গুরুত্ব উল্লেখ করাে।


বৈদিক যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে তােমার পরিচিতি দাও। বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।